তামিমের চোখে বাঁকবদলের নায়ক মুশফিকই…..
সেই সময় তিনি ছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক। ‘সেই সময়’ বলতে ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের ঠিক আগে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ডেপুটি হিসেবে বাংলাদেশ দলের রণকৌশল নির্ধারণী সভাগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তামিম ইকবালেরও। তখনই একদিন হুট করে ওঠা এক প্রস্তাবে সায় দেওয়ার সাহস করে উঠতে না পেরে এ ওপেনার অত্যন্ত অনাগ্রহের সঙ্গে বলে বসেছিলেন, ‘নাহ, কী দরকার?’
এখন অবশ্য তাঁর সে আপত্তি গৃহীত না হওয়ার ব্যাপারটি ভেবে আনন্দই হয় তামিমের। কারণ তিনি যা চাননি, সেটি হয়েছিল বলেই টেস্ট ক্রিকেটে বড় এক পদক্ষেপ ফেলতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৩-র জানুয়ারিতে আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ের বার্ষিক হালনাগাদে কোনো রেটিং পয়েন্টই ছিল না যে দলটির, তাদের এখন ৭৫ পয়েন্ট। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো র্যাংকিংয়ের নয় থেকে আটে উঠে আসার চেয়েও তামিমের কাছে বড় ব্যাপার মনে হয় দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। যে জয় দুটি নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে এই বার্তাও বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে যে এখানে এসে এক ঘা দিলেও পাল্টা ঘা খেয়ে ফিরতে হয়। টেস্টের বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দ্যুতি ছড়ালেও কৃতিত্বটা তামিম শুধু একজনকেই দিচ্ছেন। কে তিনি? ঐতিহাসিক দুই জয়েই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মুশফিকুর রহিম।
যদিও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাওয়া সেই দুই জয়েই উল্লেখযোগ্য কোনো পারফরম্যান্স ছিল না মুশফিকের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে (৪ ও ৯) করেছিলেন মাত্র ১৩ রান। পরের বছরের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকটু বেশি (১৮ + ৪১ = ৫৯) করলেও উজ্জ্বল অনেকের ভিড়ে ওই পারফরম্যান্স দিয়ে তাঁকে খুঁজে নেওয়া কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই (৭১ ও ৭৮) ফিফটি করেছিলেন তামিম নিজেই। প্রথম ইনিংসে ৮৪ রান করা সাকিব আল হাসানের ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তিতেই মিলেছিল জয়। আগের বছর ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা তরুণ অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের ম্যাচে ১২ উইকেট নেওয়ার সাফল্যেই মঞ্চায়িত হয়েছিল ‘ইংল্যান্ড-বধ কাব্য’। যে টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির (১০৪) পর ৪০ রানের আরেকটি মূল্যবান ইনিংসও খেলেছিলেন তামিম। ফিফটি দেখা দিয়েছিল মমিনুল হক ও ইমরুল কায়েসের ব্যাটেও।
ব্যাট হাতে তেমন কিছু না করেও তবু সব কৃতিত্ব পাচ্ছেন মুশফিক। কারণ এমন এক সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন, যেটি তামিমের চোখে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবেই ইতিহাসে লেখা হয়ে থাকার মতো, ‘টেস্ট ক্রিকেটে যে পর্যায়ে আমাদের এত দিনে যাওয়া উচিত ছিল, সেখানে কিন্তু আমরা যেতে পারিনি। তার পরও আমাদের সাম্প্রতিক যেসব সাফল্য, বিশেষ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে টেস্টে হারানো, এটা অবশ্যই বিশাল ইতিবাচক দিক। এ জন্য যদি কাউকে কৃতিত্ব দিতে হয়, আমি একমাত্র মুশফিকুর রহিমকেই তা দেব। কেন দেব? কারণ হলো নিজেদের মাঠে কেমন উইকেটে খেলব, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন।’
নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে স্পিন উপযোগী উইকেটে জেতার ছক সাজাতে বাধ্য করেছিলেন টিম ম্যানেজমেন্টকেও, ‘‘দেশে তো স্পিনিং উইকেটে কখনোই এর আগে সেভাবে খেলিনি আমরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হঠাৎ করে স্পিন উইকেটে খেলার ব্যাপারটি সামনে এলো। সাহস দেখিয়ে ওই সিদ্ধান্তটি নেওয়া অনেক বড় ব্যাপার ছিল। এমনকি আমিও স্পিন উইকেটে খেলার আলোচনা প্রথম শুনে বলেছিলাম, ‘নাহ, কী দরকার এ রকম উইকেটে খেলার?’ সেই চ্যালেঞ্জটি নিয়ে অধিনায়কের স্পিন উইকেটে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সত্যিই খুব বড় কিছু ছিল। আমাদের সাম্প্রতিক টেস্ট সাফল্যের জন্য তাই ওনাকেই আমি কৃতিত্ব দেব। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমরা স্পিনিং উইকেটেই জিতেছি। এর কৃতিত্ব ওনার পাওয়া উচিত।’’ নেপথ্যের সেই মুশফিককে তুলে আনতে গিয়ে তামিম এও বললেন, ‘উনি অধিনায়ক ছিলেন। এবং সিদ্ধান্তটি ওনার একার। আমি তখন সহ-অধিনায়ক ছিলাম। তাই খুব কাছ থেকেই আমি ব্যাপারটি দেখেছি। (চন্দিকা) হাতুরাসিংহের সঙ্গে আলোচনা করে স্পিন উইকেটে খেলার সিদ্ধান্তটি ওনারই ছিল। যেটা দেশের মাটিতে আমাদের টেস্ট ক্রিকেটটাই বদলে দিয়েছে।’
তাই মাঠে তেমন কিছু না করেও সতীর্থের চোখে মুশফিক বাঁকবদলের নায়কই।
সুত্রঃ কালের কন্ঠ