পুলিশের ভাবমূর্তি বদলাবে?
দুর্ঘটনায় আহতের পরিচর্যা করছেন পুলিশ কর্মকর্তা : এ ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়
সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা। একটি সড়ক দুর্ঘটনা, আরেকটি মেয়েদের যৌন হয়রানি। দুটি ক্ষেত্রেই মানুষের সহায়তায় পুলিশের এগিয়ে আসার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার পেয়েছে প্রশংসাও পেয়েছে।
কিন্তু এমন একটি-দুটি ঘটনা কি পুলিশের ইমেজ পাল্টাতে পারবে?
ঢাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের সাহায্য করা ও সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য শবনম আক্তার পপি নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘রোল মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে । তার আগে মার্কেটে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের পুলিশি সহায়তার ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়।
পুলিশ নিজেও এই ঘটনার প্রচারের সুযোগ হাতছাড়া করেনি।
কিন্তু বাংলাদেশে পুলিশের ইমেজ হলো এটি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত বাহিনী - যারা উল্টা মানুষকে হেনস্তা করে।
‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ’ - এমন একটা প্রচলিত কথাই রয়েছে। এ ধরনের কথা তৈরি হওয়ার পেছনের কারণটা সম্ভবত একটিই - মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
ঢাকার এক আবাসিক এলাকায় কথা হচ্ছিল এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজনের সাথে।
তিনি বলছেন, “আমি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান ছিল। হঠাৎ শুনি আমার ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গেছে। ওরা সবাইকে খাবার দিয়ে বাড়ির পাশে একটা ব্রিজে বসেছিল। ”
এরপর তাকে সোজা চালান দিয়ে দেয়া হয়। তবে তিন দিন পর আদালত তাকে খালাস করে দেয়া সত্বেও পুলিশকে কিছু টাকা তার দিতেই হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপালগঞ্জের এক বাসিন্দা পেশাগত কারণে ঢাকায় থাকেন। সম্প্রতি ঢাকার মহাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনার পর এক পুলিশ কর্মকর্তার আহতদের সেবা করার ছবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বলছেন তিনি পুলিশের ভালো কাজের খবর শুনে অবাক হচ্ছেন। কদিন আগে ঢাকার চাঁদনি চকে ও মিরপুরের একটি ফুটপাথ মার্কেটে দোকানিদের হাতে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের পুলিশের সহযোগিতার ভিডিও ফেইসবুকে বেশ ভাইরাল হয়েছে।
ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী লোকাল বাসে যৌন সহিংসতার হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার অভিযোগ তোলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেশ ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দেয়ার জন্যেও ফেসবুকে পুলিশের প্রশংসা হয়েছে।
কিন্তু এ ধরনের প্রচার পুলিশের ইমেজ পরিবর্তনে কতটা সহায়তা করবে?
অনলাইনে ধোঁকাবাজির শিকার হয়ে বড় অংকের টাকা হারিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়া এক নারী বলছেন, “পুলিশ কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেফতার করা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতা শুরু করেছিল।
ওদের সঙ্গে আলাদা রুমে কথাবার্তা বলে এসে একপর্যায়ে বলে পুরো টাকা পাওয়া যাবে না। আমরা বাধ্য হয়ে সে টাকাটাই নিয়েছিলাম”
মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন বলেন, পুলিশের এই ইমেজ পরিবর্তন অতটা সহজ হবে না।
তিনি বলছেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আছে তার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ আছে, সাহায্যের জন্য যাওয়া মানুষকে সে হেনস্তা করে।
“তাদের বিরুদ্ধে এমনকি বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। চিত্র যদি এমন হয় - তখন সোশাল মিডিয়াতে দু-একটা ভালো ঘটনা আসলে তারা কিছুটা উপকৃত হবে সেটা সাময়িক।”
তিনি বলছেন, “পুলিশকে তার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। যদি নিজেকে সে সংশোধন করতে চায় তাহলে তার নিয়োগের প্রক্রিয়া থেকে সেটি শুরু হতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশের সবচেয়ে বড় ঘাটতির জায়গাটিই হচ্ছে তার নিয়োগ ও পদোন্নতিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, বিশেষ করে দলীয় প্রভাবমুক্ত যতক্ষণ না করা যাবে ততক্ষণ এটা থেকে যাবে।’
এমন আস্থার সঙ্কট দুর করতে পুলিশ নিজে ঠিক কি করছে?
জিজ্ঞেস করেছিলাম ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমানের কাছে।
তিনি বলছেন, “আমরা এখন বলি সার্ভিস ডেলিভারি। অর্থাৎ মানুষকে আমরা সার্ভিস দিতে চাই। যেমন আমরা ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। যেমন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে।”
“তারপর ধরুন কেউ যদি প্রথমবার থানায় জিডি করতে আসে তাদের জন্য জিডির একটা ফরম্যাট তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ ছাড়াও আমাদের সদস্যদের জন-বান্ধব করার জন্য নানা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি”
বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে।
উন্নয়ন সংস্থার দেয়া তহবিলে তারা নানা প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করতে দেশের বাইরে যাচ্ছেন।
তবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ মূলত কর্মকর্তা পর্যায়েই বেশি হচ্ছে। বাদ পড়ে যাচ্ছে সরাসরি মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।(সূত্রঃ নয়াদিগন্ত)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২৮ এপ্রিল