শা’বান মাস নিয়ে প্রিয় নবী যা বলে গেছেন জেনে রাখুন
হিজরী বর্ষের ৮ম মাস শা’বান। এ মাসকে স্বীয় মাস হিসেবে আখ্যায়িত করে এ মাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহর প্রিয় রাসূূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অন্যান্য নবীগনের উপর আমার শ্রেষ্ঠত্ব যেমন-অন্যান্য মাসের তুলনায় শা’বান মাসের ফজিলত তেমন। “শা’বান” আরবী শব্দ এর আভিধানিক অর্থ শাখা- প্রশাখা বিস্তৃত হওয়া। এ মাসে আল্লাহর রহমত ও করুনার দ্বার উম্মুক্ত করে দেয়া হয়; যাতে বান্দাগণ স্বীয় গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে নিতে এবং সমস্ত নেক মাকসুদ হাসিল করতে পারে। মাহে শা’বানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “রমজান” পূর্ব মাস হিসেবে, মাহে রমজানকে যথাযথভাবে বরণ করে নেয়ার প্রস্ততি গ্রহণের মাস হিসেবে শা’বান মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে আলোড়ন স”ষ্টি করে। হাদীস শরীফে এসেছে রজব শা’বান ও রমজান অধিক পরিমাণে এবাদত করার মাস । রজব (এবাদতের) বীজ বপণ করার মাস, শা’বান পানি সিঞ্চন করার মাস এবং পবিত্র রমজানুল মোবারক হল ফসল কাটার মাস। এ মাসে এমন একটি বরকত পূর্ণ রজনী নিহিত আছে যাকে লায়লাতুল বরাত” বা শবে বরাত বলা হয়। শুধু এখানেই শেষ নয় বরং এ মাসে দোয়া কবুল হয় ও বান্দার আমল সমূহ আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে পৌছানো হয়।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল পাক (দঃ) বলেছেন শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আমার নিকট এসে বললেন ,হে আল্লাহর রাসূল (দঃ) আজ আপনার মাথা আকাশের দিকে উঠান। কেননা আজ বরকতের রাত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন বরকত? তিনি বললেন, আল্লাহ্ তায়ালা এ রাতে ৩০০ রহমতের দরজা খুলে দেন। হাদীসে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধানকারী, অন্যায় ভাবে টেক্স আদায় কারী, মানুষ হত্যাকারী, প্রভৃতি লোকদেরকে ক্ষমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে । দুঃখের বিষয় আজ আমরা কি করছি, খেল-তামাশা গীবত, হত্যা ও লুটতরাজ সহ নানাবিধ পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছি। যার ফলে মানবতা আজ বিধ্বস্ত, ভ্রাতৃত্ববোধ তিরোহিত, ইসলামী জীবন-যাপন সমাহিত, চারদিকে শরীয়ত বিরোধী কাজ চলছে। এসব থেকে বাচঁতে হলে আমাদেরকে রাসূলে পাক (দঃ) এর আদর্শ অনুযায়ী এ রাতের এবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে এ রাতের তাৎপর্য সহ প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। যে জীবন অমর, যে জীবনে থাকে সমাজ ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ। বিশেষত এ মাসের ১৫ তারিখের রজনী যা শবে বরাত হিসেবে পরিচিত।
মুসলিম দেশ সমূহের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গ রূপেও প্রতিপালিত হয়ে থাকে এ রাতটি। উল্লেখ্য যে, কিছু কিছু ব্যবসায়ী রমজান মাসকে সামনে রেখে শাবান মাস হতে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুদ শুরু করে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অবৈধ মুনাফা হাসিলে তৎপর হন। অথচ তারা এভাবে সংকট স”ষ্টি করার কারনে তারা অমার্জনীয় অপরাধ সংগঠিত করছেন। মানুষ সহ সর্ব প্রকার সৃষ্টির ক্ষতিকর ভূমিকা হতে নিব”ত থাকার জন্য ইসলাম শিক্ষা দেয়, আইনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং ইসলাম যে সব কার্যক্রম সমর্থন করে না তা সকলকে স্মরণে রাখার জন্য আহবান জানাই। এ মাসের কতিপয় আমলঃ শা’বান মাসের প্রতি বৃহস্পতি বার দিবাগত রাতে চার রাকাত নফল নামাজ আদায়ের জন্য হাদীস শরীফে উৎসাহিত করা হয়েছে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ত্রিশ বার করে আদায় পূর্বক যে এ নামাজ আদায় করবে তাকে একটি হজ্জ ও উমরাহ’র সওয়াব দান করা হবে। অপর হাদীস শরীফে বর্ণিত ঃ যে ব্যক্তি শা’বান মাসে তিন হাজার বার দরূদ শরীফ পাঠ করবে তার জন্য কিয়ামত দিবসে রাসূলে (দঃ) এর সুপারিশ অবধারিত। এ মাসের (১৫ তারিখ) ১৪ তারিখ দিবাগত রাত শবে বরাত বা ভাগ্য বন্টনের রাত হিসেবে চিহ্নিত। হযরত শেখ আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) বলেন অধিকাংশ ইমামের অভিমতানুযায়ী এ রাত হতে সৃষ্টির মহান কার্যাদি আরম্ভ হয়ে শবে কদরে তা সমাধা হয়। এ রাতে লিপিবদ্ধ করা হয় মানুষের হায়াত ও রিযিক এবং যারা মাফ চায় তাদের ক্ষমা করা হয়। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-’’ তোমাদের মধ্যে এমন কে আছ? যে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কে আছ রিযিক প্রার্থী? তাকে রিযিকের প্রাচুর্য দান করব। কেউ কি আছ বিপদগ্রস্থ যা হতে মুক্তি প্রার্থী? আমি তাকে বিপদ হতে নাজাত দান করব। যে কোন চাহিদাই আজ পূর্ণ করব। (ইবনে মাজাহ) হাদীস শরীফেও বলা হয়েছে যে, এ রাতে বিনিদ্র এবাদত- বন্দেগীতে অতিবাহিত করে পরদিন রোজা পালন করার জন্য। অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি; এ রাতে এবাদতের নিয়তে গোসল করে তার জন্য প্রত্যেক পানির বিন্দুতে সাত রাকাত নফল নামাযের সওয়াব লিখা হবে। গোসলের পর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ পড়বে প্রতি রাকাতে একবার আয়াতুল কুরছি ও তিনবার সূরা ইখলাস দ্বারা। এরপর সূরা ফাতিহার সাথে একবার সূরা কদর ও পঁচিশ বার সূরা ইখলাস দ্বারা আট রাকাত নামায আদায় করবে। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা কাফিরুন, ইখলাস, খালাক ও নাস-এ চারটি সূরা এবং একবার আয়াতুল কুরসী ও লাক্বাদ জাআকুম রাসুলুমমিন আন-ফুসিকুম-(শেষ পর্যন্ত) দ্বারা আদায় করে সালাম ফিরানোর পর যে দোয়া করবে তাই কবুল হবে।
যাদুকর মুশরিক, কৃপন, মাতা-পিতাকে কষ্ট প্রদানকারী, গণক, মদ্যপায়ী, ব্যভিচারী, অপর মুসলমানের প্রতি শত্রুতা পোষণকারী, সুদখোর, ঘুষখোর এবং যারা পাপ হতে তওবা করবে না তাদের দোয়া এ মহান রাতে কবুল হবেনা। আল্লামা আবুল কাশেম আফফার (রহঃ) বর্ণনা করেন-আমি একদা স্বপ্নে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর সাক্ষাত লাভ করি। সাক্ষাতান্তে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম-আপনার রূহের প্রতি কিরূপ আমলের সাওয়াব বখশিশ করলে আপনি অধিক আনন্দিত হন? তিনি বললেন-হে আবুল কাশেম! শা’বান মাসে এক নিয়তে আট রাকাত নামাজ প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস পাঠ করে আমার রূহের প্রতি সাওয়াব বখশিশ করলে আমি অত্যন্ত খুশি হই এবং তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ না করা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করব না। এ মাসে ওফাত প্রাপ্ত কয়েকজন বুযুর্গ: ২ শা’বান ইমামে আজম হযরত আবু হানিফা (রহঃ), ৩ শা’বান : শায়খ আবুল ফাতাহ (রহঃ), ১৫ শা’বান : হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহঃ), ২৪ শা’বান : পীর মুহাম্মদ শাহ সাহেব (রহঃ)।