কে হবে মাশরাফির বিকল্প ?
অনলাইন ডেস্কঃ গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস করতে নেমে আচমকা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাশরাফি। সেই ম্যাচে জয়ীর বেশেই বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার ওই আচমকা বিদায়ের ঘোষণা সবাইকে স্তম্বিত করে দিয়েছিল। তিনি বিদায়ের কারণ হিসেবে বলেছিলেন, তরুণদের জায়গা করে দিতেই সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে মূল কারণ জানতে কারো বাকি নেই। তৎকালীন কোচ হাথুরুসিংহের ‘তারুণ্যনির্ভর’ টি-টোয়েন্টি দল গড়ার স্বপ্নের কারণেই যে মাশরাফি অমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তার কান্নাভেজা মুখখানা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্তদের জন্য কতোটা হৃদয়বিদারক ছিল তা আর বলে বুঝানো সম্ভব নয়। এরপর তাকে ফিরিয়ে আনতে ভক্তদের কতো প্রচেষ্টা! মিছিল থেকে শুরু করে গান পর্যন্ত বাঁধা হয়েছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও খেলা শেষ হওয়ার পর মাশরাফিকে ফোন করে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। আর এবার আরেকটি শ্রীলঙ্কা সফরের আগে সেই মাশরাফিকেই ফিরে পেতে অনুরোধ জানানোর কথা বলেন বিসিবি প্রধান।
বিসিবি প্রধান সেদিন সাংবাদিকদের আরও একটা কথা বলেন যে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে শেষ হওয়া সিরিজেও মাশরাফিকে দলে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাশরাফি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে টেস্ট খেলার ইচ্ছা কথা জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ, টি-টোয়েন্টি নয়, টেস্ট হলে মাশরাফি ফিরতে পারেন। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে বিশেষ করে বিপিএলে মাশরাফি নিজে ভাল খেলার পাশাপাশি দলকে চ্যাম্পিয়নও করেছিলেন। এই না বলাটা যে অভিমান থেকে, তা বুঝতে কারও বিশেষজ্ঞ হতে হয়না। সেদিন বিসিবি প্রধান স্বীকার করেন, নতুন বলে মাশরাফিই সেরা আর মুস্তাফিজ ছাড়া টি-টোয়েন্টির জন্য সবচেয়ে নির্ভর করার মত বোলার মাশরাফি। এতদিন পর বিসিবি’র টনক নড়েছে। কিন্তু মাশরাফির সিদ্ধন্ত তাতে পাল্টে যায়নি। কখনোই কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করানো মাশরাফি বরং নিজেকে দূরে রাখাই ঠিক মনে করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তাকে ছাড়া বাংলাদেশ দল অনেকটা ছন্নছাড়া এটা স্বীকার করতেই হবে।
সর্বশেষ খালেদ মাহমুদ সুজনও নিশ্চয়তা দিয়েছেন মাশরাফিকে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে কোনোভাবেই ফেরানো যাচ্ছে না। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে, মাশরাফির না ফেরাটা যে নিদাহাস ট্রফির বোলিং লাইনআপে একটা বড় ক্ষত হয়ে যাচ্ছে। চোটের কারণে লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন না সাকিবও। যোগ্য অধিনায়কত্ব আর পরিকল্পনার অভাবে লঙ্কানদের কাছে বাজেভাবে আত্মসমর্পণ করে টাইগাররা। মাশরাফি এবং অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্পষ্টই বুঝা গেছে। ফলে গত সিরিজে দলে একঝাঁক তরুণের অভিষেক ঘটিয়ে যে শিক্ষা বিসিবি পেয়েছে, এবার আর তারুণ্যনির্ভর দলের দিকে ঝুঁকবে না তারা। ২০২০ বিশ্ব টি-টোয়েন্টির জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছয়জন নবীনের উপর ভরসা রেখে এক নাজমুল ইসলামের ২৫ রানে ২ উইকেট ছাড়া বাকিদের বলার মতো কিছুই নেই। অভিজ্ঞদের উপরই ভরসা রাখতে হবে তাদের। সাকিব ফিরবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। শোনা যাচ্ছে, তাসকিন, মোসাদ্দেক ফিরবেন। সাব্বির সহ কয়েকজন নবীন বাদ পড়ছেন। তবে দুয়েকজনকে রাখা হতে পারে। কিন্তু মাশরাফির কোন বিকল্প কি পাওয়া গেল তাতে?
দলে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ’র মতো অভিজ্ঞরা আছেন। তবে তাদের মধ্যে সাকিব ছাড়া বাকিরা ব্যাটসম্যান। বোলিং বিভাগে এক মুস্তাফিজ ছাড়া আর কে আছেন? তাসকিন ফিরবেন শোনা গেলেও তার ফর্ম কতোটা ফিরেছে তা নিশ্চিত নয়। রুবেল-সাইফদের অবস্থা জানাই আছে। তাহলে নতুন বলে মাশরাফির বিকল্প আর কে? বলে আগের মতো গতি নেই, তবু সুইং আর লাইনের উপর নির্ভর করে আজও তার মতো কিপটে বোলার এদেশে তৈরি হয়নি। মুস্তাফিজ হয়তো অনেক দুর যাবেন, কিন্তু মাশরাফির আরও একটি গুণ যা বাকিদের মাঝে অনুপস্থিত তা হলো নেতৃত্বগুণ। মাঠে তার উপস্থিতি আজও টনিকের মতো কাজ করে দলের জন্য। এই বিষয়ে তার বিকল্প সত্যিই নেই। সাকিব হয়তো একদিন অনেক সফল অধিনায়ক হবেন। কিন্তু মাশরাফির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ তো থাকছে না। টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে দেশের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। তার অধীনে ২৮ ম্যাচের ১০টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। ফলে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
মাশরাফির ফেরা নিয়ে ভারতের ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আশা করছি মাশরাফি আবারো দলে ফিরবে এবং দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে। ওর (মাশরাফি) বুদ্ধিমতা যথেষ্ট ভালো। এমন দলে ভালো নেতৃত্ব দেওয়া অনেক বড় ভূমিকা পালন করে বিশেষ করে ক্রিকেট বিশ্বে উঠতি এমন দলে।’ এমন অভিমত এদেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমীদেরও। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। বিসিবি যে ভুল করেছিলো তা শোধরানোর সুযোগ নেই। সঞ্জয় মাঞ্জেরেকার আরো বলেন, ‘মাশরাফি বিস্ময়কর একজন টেকনিশিয়ান।’ আর এমন একজন টেকনিশিয়ানকে হারানো কোনভাবেই ভাল কিছু হতে পারেনা। টেকনিশিয়ান হিসেবে যাকে পাওয়া যাবে তিনি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। নিজেই যে কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন, সেই তিনিই আবার দলের দায়িত্ব নিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে সত্যি কিছু না বলাই ভাল।
এদিকে আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজে পেসারদের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন মাশরাফি, এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুজন। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ খেলায় সেই সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে হাথুরু’র অদৃশ্যভাবেই মাশরাফির বিদায় ঘটানোর পর নিজেদের ভুল ভালভাবেই বুঝতে পারছে বিসিবি। বিসিবি প্রধান কদিন আগে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি জানি, আমি বললে মাশরাফি অবশ্যই ফিরবে।’ না, তা আর সম্ভব না। বড্ড দেরি হয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। ৫২টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪২ উইকেট নেওয়া মাশরাফির অভিমান এতো সহজে ভাঙছে না। মাশরাফির পাগল ভক্তদের মনে আশার প্রদীপ এখনো নিভু নিভু করে জ্বলছে। তবে সেই আলো যে আসন্ন সিরিজে জ্বলছে না, সেটা এখন নিশ্চিত।
সিনিয়রদের কাছ থেকে শিখার পরামর্শ মাশরাফির
৮ মার্চ নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে নামবে বাংলাদেশ। নিশ্চিতভাবেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ জয় এনে দেওয়া অধিনায়ক মাশরাফিকে খুব মিস করবে বাংলাদেশ দল। শুধু বোলার মাশরাফি নয়, তরুণদের আগলে রেখে, দলের মধ্যে একতা বজায় রাখার অসাধারণ গুণ যে লড়াকু খেলোয়াড়ের মধ্যে বিদ্যমান, তাকে মিস না করে পারে কোন দল? মাশরাফির যে কোন বিকল্প নেই।
সুত্রঃবিডিক্রিকেটটাইমস/মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক/পাথরঘাটা নিউজ