হাদিসের আলোকে সু্ন্নাতী পোশাকঃ শাহ্ মোহাম্মদ কাওসার
পাথরঘাটা নিউজঃযেহেতু আমরা মুসলিম, মাথা থেকে নিয়ে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর আবরণের জন্যেও রয়েছে মুসলিমদের জন্যে আদর্শ পোশাক৷ আর সেই আদর্শ পোশাক হচ্ছে, আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পোশাক পরেছেন, সেই পোশাক৷ সেই পোশাকই আমাদের কাছে আদর্শ পোশাক৷ যাকে আমরা সুন্নাতী পোশাক বলেও অভিহিত করি৷
১. রাসূল সা, পাগড়ী পরিধান করেছেন৷ তাই পাগড়ী পরা রাসূল সা, এর অভ্যাসগত সুন্নাত৷
عن جَابِرٍ، أَنّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ.
জাবির রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল। (সহীহ মুসলিম: ১৩৫৮)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اعْتَمَّ سَدَلَ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ قَالَ نَافِعٌ: وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَسْدِلُ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ، قَالَ عُبَيْدُ اللهِ: وَرَأَيْتُ القَاسِمَ، وَسَالِمًا يَفْعَلاَنِ ذَلِكَ.
হযরত ইবনে উমর রা, বলেন, রাসূল সা, যখন পাগড়ী পরতেন, তখন তার শিমলা উভয় কাঁধের মাঝখানে পেছন দিকে ঝুলিয়ে রাখতেন। নাফে রহ, বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন উমর রা, কে এরূপ করতে দেখেছি। নাফে’র শিষ্য উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি আবু বকর রা, এর পৌত্র কাসিম বিন মুহাম্মদকে এরূপ করতে দেখেছি। (তিরমিজী: ১৭৩৬)
২. রাসূল সা, টুপি পরেছেন, তাই টুপি পরা সুন্নাত৷ হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত-
عن رجل من الصحابة : قال : أكلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ورأيت عليه قلنسوة بيضاء
একজন সাহাবী বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি৷ (আল ইসাবাহ ৪/৩৩৯)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يلبس من القلانس في السفر ذوات الآذان، وفي الحضر المشمرة يعني الشامية.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় কান বিশিষ্ট টুপি পরতেন আর নিজ আবাস স্থলে শামী টুপি পরতেন। (আখলাকুন নুবুওয়্যাহ, আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে পৃ. ২০২)
ইবনুল কায়্যিম রাহ, বলেন:
وكان يلبَس القلنسُوة بغير عمامة
“রাসূল সা, পাগড়ী ছাড়াও টুপি পরতেন৷” (যাদুল মা’আদ: ১/১৩০)
৩. রাসূল সা, ক্বামীস বা কুর্তা যাকে আমরা পাঞ্জাবী বলি; সেটা পরেছেন৷ যার হাতা কব্জি পর্যন্ত ছিলো৷ (যাদুল মা’আদ: ১/১৩০)
ﻋﻦ ﺍﻡ ﺳﻠﻤﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ عنها ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﺜﻴﺎﺏ ﺍﻟﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟﻘﻤﻴﺺ
হযরত উম্মে সালামা রা, বলেন, পোষাক সমূহের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট সর্বাধিক প্রিয় ছিলো “ক্বামীস”। (শামায়িলুন নববী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম, পোশাকের বিবরণ অধ্যায়, হাদীস নং: ৫৫,৫৬,৫৭)
৪. রাসূল সা, জুব্বা পরিধান করেছেন৷ জুব্বা হচ্ছে, দীর্ঘ ও প্রশস্ত আস্তিন বিশিষ্ট জামা৷ যার সামনের দিক ফাড়া৷ (বুখারী: ৩৬৩৬, মুসলিম: ২৭৪, যাদুল মা’আদ: ১/১৩০)
৫. রাসূলুল্লাহ সা, এর কাছে সাদা রংয়ের কাপড় পছন্দনীয় ছিলো এবং তিনি সাদা রংয়ের কাপড় পরতে বলেছেন৷ তাই সাদা রংয়ের কাপড় পরিধান করাও সুন্নাত৷
عن ابن عباس رضي الله عنهما: أنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: الْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمْ البَيَاضَ؛ فَإنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ.
(رواه أبو داود: 3878 والترمذي: 994 وقال: حديث حسن صحيح)
ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা, ইরশাদ করেন: তোমরা সাদা পোশাক পরিধান করো, কেননা তোমাদের পোশাকসমূহের মধ্যে সাদা পোশাকই উত্তম। এবং তোমাদের মৃতদেরকে সাদা কাপড় দ্বারা কাফনের ব্যবস্থা কর। (আবু দাউদ: ৩৮৭৮, তিরমিযী: ৯৯৪)
عن ابن عباس رضى الله عنهما ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله خلق الجنة بيضاء واحب شئ الى الله البياض.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ তিনি জান্নাত সৃষ্টি করেছেন সাদা রংয়ের করে। আর মহান আল্লাহ’র কাছে অধিক পছন্দনীয় হচ্ছে সাদা রংয়ের বস্তু।” (মাজমাউয যাওয়াইদ: ৫ম খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠা)
৬. তিনি লাল রংয়ের সঙ্গে কালো রংয়ের রেখা মিশ্রিত জোড়া (লুঙ্গী এবং চাদর) কাপড় পরেছেন৷ অন্যথায় শুধু লাল রংয়ের কাপড় পরা নিষেধ৷
عن البراء بن عازب رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم مَرْبُوعاً - متوسط القامة, وقد رأيته في حُلةٍ حمراء, لم أر شيئا قط أحسن منه صلى الله عليه وسلم.
(رواه البخاري: 5400، ومسلم: 4308)
হযরত বারা ইবনে আযিব রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সা, ছিলেন মাঝারি ধরনের উচ্চতাসম্পন্ন৷
আমি রাসূল সা,কে একসেট লাল কাপড় পরিধান অবস্থায় দেখেছি৷ রাসূল সা, এর চাইতে সুন্দর কখনো আর কাউকে দেখি নি৷” (বুখারী: ৫৪০০, মুসলিম: ৪৩০৮, জামউল ওয়াসাইল: ১/১১৫)
৭. নিসফে সাক অর্থাৎ হাঁটুর নিচে টাখনুর উপরের মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত কাপড় নামিয়ে পরা সুন্নাত৷
عن أبى سعيد الخدرى قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إزرة المؤمن إلى نصف الساق ولا حرج أو لا جناح فيما بينه وبين الكعبين.
(رواه أحمد: ١١٩٤٤)
“হযরত আবু সঈদ খুদরী রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মু’মিন ব্যক্তির ইযার (লুঙ্গি) হবে হাঁটুর নিচে এবং নলার উপরের অর্ধাংশ অর্থাৎ মধ্যবর্তী স্থান (নিসফে সাক) পর্যন্ত। আর গোনাহ নেই টাখনুর উপর পর্যন্ত কাপড় পরলে।’’ (মুসনাদে আহমাদ: ১১৯৪৪)
৮. সালোয়ার-পাজামা পরাও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত৷ কেননা রাসূল সা, সালোয়ার খরিদ করেছেন৷ এটা পরিষ্কার কথা যে, খরিদ করেছেন পরিধানের জন্যেই৷ কোনো কোনো রেওয়ায়াতে পরিধানের কথাও পাওয়া যায়৷ (যাদুল মা’আদ: ১/১৩০)
وعن ابن عباس - رضي الله عنهما - عن النبي - صلى الله عليه وسلم -قال: من لم يجد إزاراً فليلبس سراويل، ومن لم يجد نعلين فليلبس خفين.
(رواه البخاري– الفتح، كتاب اللباس، باب السراويل(10/284) رقم (5804)
“ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা, ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি ইযার তথা লুঙ্গী না পায়, সে যেন সালোয়ার পরে নেয়৷ যে জুতা না পায়, সে যেন মোজা পরে নেয়৷” (বুখারী: ৫৮০৪)
৯. রাসূল সা, আরবের প্রচলিত মোজা পরিধান করেছেন৷ যা ছিলো শক্ত এবং চামড়ার৷ তাই এটাও সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত৷
وعن ابن عباس - رضي الله عنهما - عن النبي صلى الله عليه وسلم: ومن لم يجد نعلين فليلبس خفين.
(رواه البخاري – الفتح، كتاب اللباس، باب السراويل (10/284) رقم (5804)
“ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা, ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জুতা না পায়, সে যেন মোজা পরে নেয়৷” (বুখারী: ৫৮০৪, যাদুল মা’আদ: ১/১৩০)
১০. রাসূল সা, এর একটি সবুজ ও একটি কালো চাদর ছিলো৷ তাই এগুলোও সুন্নাতী পোষাকের অন্তর্ভুক্ত৷ (যাদুল মা’আদ: ১/১৩০)
সুন্নাতী পোশাক সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে সংক্ষিপ্ত করার মানসে এখানে শুধু বাছাইকৃত আলোচনাগুলো উদ্ধৃতি সহকারে এনেছি৷ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসারী হিসেবে কবুল করুন৷ আমীন৷
লেখকঃশাহ মোহাম্মদ কাওসার, (ইসলামী লেখক ও গবেষক
— সাহেবজাদা, মদনা দরবার শরীফ, চাঁদপুর)