মাজহাব কেন অনুসরণ করবেনঃ ইমরান বিন বদরী
পাথরঘাটা নিউজঃ নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ। আমি লা-মাজহাবি মাজহাব তাহজাত এগুলা আবার কি!? আমি শুধু মুসলমান এর বাইরে অন্যকিছু গ্রহণ করিনা। ধরণের কিছু মডার্ন মুসলমান আজকাল দেখা যায়। মহিলা স্টাইলে বুকের উপর হাতবাঁধাকে মনেকরে সে মাজহাব মানেনা। অথচ সেটাও একটি মাজহাবের অনুসরণ!
তর্ক নয় বাস্তবিক বিষয়গুলা জেনে রাখা আমি মনেকরি সবার অতীব জরুরী। পৃথিবীতে যারা নিজেকে লা-মাজহাবি দাবীকরে তারা নিজেরাও জানেনা যে মনের অজান্তে সে ৪ মাজহাবের যে কোন একটি মজহাবকে অনুসরণ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বস্তুত এসব মূর্খদের মাঝে মাজহাব বিষয়টা আসলে কী! সে সম্পর্কীয় নুণ্যতম ধারণাও নেই।
মাজহাব নিয়ে ইমামুনা হজরত ইমামে আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির যে জীবনী লিখেছিলাম সেখানে অনেক আলোচনাদি করেছি। সুতরাং যাদের পড়ার ইচ্ছে তারা ইচ্ছে করলে আমার টাইমলাইনে খোঁজে দেখতে পারেন। আজ মাজহাবের বর্ণনা নয়, কেন আমরা মাজহাব বা তার ইমামদের অনুসরণ করবো সে ব্যাপারে কিছুটা আলোচনা করবো।
আমাদের সমাজে অনেক ভাইকে দেখা যায় তারা মাজহাব বিরোধী ভূমিকা রাখেন। তাদের যুক্তি কুরআন এবং সহীহ হাদিস দিয়ে জীবন গড়বো সেখানে মাজহাব অনুসরণ করার কোন প্রয়োজন নেই। তাদেরকে যদি প্রশ্নকরা হয় সহীহ হাদিস কোনটি সে উত্তরে বলবেন বুখারী শরীফ, দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করলে বলবে মুসলিম শরীফ। আশ্চর্যান্বিত হবেন যদি তাকে প্রশ্ন করেন এর বাইরে কি আর অন্যকোন হাদিসের কিতাব নেই? সে বলবে থাকতেও পারে তবে আমি সহিহ হাদিসটাই মানি। আর যদি সহিহ জঈফের মাননির্ণয় কিভাবে করা হয় অর্থাৎ সেটা কি সনদের কারণে নাকি মতনের কারণে তার উত্তর পাওয়াও কঠিন হবে। আর যদি প্রশ্ন করেন বুখারী শরিফের নাম কি? সে আপনাকে বলবে নামতো বলেছি এর আবার নাম কিসের? সিহা সিত্তার বাকী কিতাবের কথা বা নাম দেখবেন তার জানাও নেই। এছাড়াও যদি তাকে প্রশ্ন করেন আপনি ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মাজহাবকে অনুসরণে অস্বীকার করেন অথচ ইমাম বুখারী রহঃ এর একক হাদিসকে কিভাবে অন্ধভাবে অনুসরণ করেন? উত্তরে দেখবেন লা-জাওয়াব।
আসলে মাজহাব যে পবিত্র কুরআন হাদিসের নির্জাস সে বিষয়ে তাদের সামান্যতম ধারণাও নেই। তারা সব বিষয়ে এখতেলাফে বিশ্বাসী কিন্তু সম্মানিত ইমামদের ইজতিহাদী মাসয়ালা মাসায়েল কে অনুসরণ করতে একেবারেই নারাজ। আলাপিনীতে তারা এমন ভাব নিয়ে আপনার সাথে কথা বলবে যেন সম্মানিত ইমামদের ১ হাজার বছর পরে জন্ম নিয়েও তাদের চেয়ে কোনদিকেও কম বুঝেননা। অথচ সূরা নিসার ৫৯ আয়াতের দিকে যদি একটু খেয়াল করলে দেখবেন আল্লাহপাক আমাদেরকে “উলিল আমর” এর নির্দেশ আদেশ মানতে বলেছে। আলোচ্য আয়াতটি দেখুন -
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَأُو۟لِى ٱلْأَمْرِ مِنكُمْ
“হে ঈমানদারগন ! অনুগত্য কর আল্লাহর, অনুগত্য কর রাসূলের এবং উলিল আমর তোমাদের মধ্য থেকে।
এখন ‘উলিল আমর’ এর যদি আপনি নেতা কিংবা রাষ্ট্রীয় কোন হুকুম মেনে নেন তবে তা ইসলামি শরীয়তের বিরোধী হলে তা বর্জনীয়। আর যদি শরিয়তের ফায়সালায় হয় তা গ্রহণীয়। সে হিসেবে সম্মানিত ইমামদের ইজতিহাদী ফায়সালা অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য। এছাড়া আল্লাহপাক সূরা ফাতিহায় اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ দিয়ে সরল পথ খোজার তাগাদা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ সে সমস্ত লোকের পথ,যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ।
উপরোক্ত আলোচনায় এটাই স্পষ্ট যে সিরাতাল মুস্তাক্বীম তথা নিয়ামত প্রাপ্ত নবী ওলি সিদ্দিকিনদের অনুসরণীয় পথি হচ্ছে মাজহাব। আর এই মাজহাব পবিত্র কুরআন হাদিসের যেসব বিষয় অস্পষ্ট অর্থাৎ আমার আপনার মত সাধারণ কোন মানুষের বোধগম্য নয় সেসব বিষয়গুলি ইজমা এবং কিয়াসের ভিত্তিতে ইজতিহাদী সমাধানের নাম।
লেখকঃইমরান বিন বদরী, চেয়ারম্যান আল্লামা বদরী (রহঃ) ফাউন্ডেশন। মাদ্রিদ, স্পেন।