পেস বোলিং সমস্যায় মাশরাফি বিন মর্তুজার সমাধান
অনলাইন ডেস্কঃমোস্তাফিজ ছাড়া বাংলাদেশের টেস্ট দলে থিতু হতে পারছেন না কোনো পেসারই। পারফরম্যান্স ঘাটতি ও চোটের কারণে প্রায় প্রতি সিরিজেই নতুন সঙ্গী পান এ বাঁহাতি। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে টানা কয়েকটি ম্যাচে দুপেসার জুটি বেধেছেন এমন নজির খুঁজতে ইতিহাসের ধূলোজমা পাতায় হাতড়াতে হয়! এমন সমস্যায় মাশরাফীর সমাধান, যারা আছে তাদের উপরই আস্থা রাখা, সঙ্গে নতুন পেসারদের টেস্টের প্রতি বিশেষ অনুরাগও থাকা।
বেশ কয়েকবার হাঁটুর চোটে পড়ার ধকলে ৯ বছর ধরে টেস্টের বাইরে মাশরাফী। টি-টুয়েন্টি থেকেও নিয়েছেন অবসর। খেলছেন কেবল ওয়ানডে। তবুও টেস্টের প্রতি অনুরাগ এতটুকু কমেনি ম্যাশের। বিসিএলের শেষ রাউন্ডে খেলতে এসেছেন খুলনায়। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে মাশরাফী কথা বললেন সাদা পোশাকের ক্রিকেট নিয়ে। বাংলাদেশের পেস বোলিং সংকটে সমাধানের প্রেসক্রিপশনও দিলেন।
‘আমার মনে হয় একটু আস্থাও রাখতে হবে। যখন নতুন পেসার পাচ্ছেন না, যাদের পাচ্ছেন এবং চিন্তা করছেন, তাদেরকে একটা সিরিজের পরই আরেকটা সিরিজে বাদ না দিয়ে আস্থাটা রাখতে হবে। যেহেতু নতুন আর কাউকে দিয়ে হচ্ছে না। সেহেতু কাউকে না কাউকে তো পিক করে আস্থাটা রাখতে হবে। এখন ধরেন মোস্তাফিজ ফিক্সড আছে। তাও তাকে নিয়ে অনেক ইস্যুও আছে। ইনজুরি হতে পারে। তাসকিনের একই অবস্থা, শফিউলও ইনজুরিপ্রবণ, এদেরকে ওভাবেই তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে ওদেরও সেই ইচ্ছাটা থাকতে হবে।’
‘দুটির সমন্বয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগও দিতে হবে। একটা সিরিজ না হলে দু-তিনটা সিরিজ দেখলে, আমার বিশ্বাস তখন ওদের মাথা খুলবে। একটা একটা করে ম্যাচে সুযোগ দিলে ভালো করতেই হবে ওই চিন্তায় ওরা মানসিক চাপে থাকে এবং পারফর্ম করতে পারে না। সুযোগ না পেয়ে নিজেকে হারিয়েও ফেলে। যথাযথ কাঠামোয় দু-চারটা সিরিজ যদি সুযোগ পাওয়া হয়, আমার বিশ্বাস ওদের ভিতর থেকে কিছু বের হয়ে আসবে। ওদের ভিতরে কিছু নাই তা কিন্তু না।’ যোগ করেন মাশরাফী।
চলতি বিসিএলে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন নর্থ জোনের ইয়াসিন আরাফাত ও শরিফুল ইসলাম। সবশেষ ম্যাচে দুই তরুণ নিয়েছেন সাতটি করে উইকেট। দুই পেসারের বোলিং আশা জাগাচ্ছে সামনে ভালো কিছুর। এমন তরুণ প্রতিভাদের এখনই পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে বলছেন মাশরাফী।
‘ওদেরকে ওই লেভেলে হয়ত চিন্তা করছেন না, কিন্তু ওদেরকে এখন থেকেই ওই পর্যায়ের জন্য তৈরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যে ক্যাম্পগুলো আছে, এইচপি বা অন্যকিছু, ওখানে যদি চর্চা করে, ‘এ’ টিমের ট্যুর যদি করতে পারে, তাহলে ওরাই তৈরি হবে। এটা কেবল বিশ্বাস না, এটাই বাস্তবতা। সাথে একটা জিনিস যোগ করতে চাই, ওদের ইচ্ছাটা কী? ওরা কেবল টি-টুয়েন্টি আর ওয়ানডে খেলে নিজেকে গ্ল্যামার পর্যায়ে নিতে চায়, নাকি টেস্ট ক্রিকেটকেও সার্ভিস দিতে চায়? ওদের প্যাশনটা কোনদিকে সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ মাশরাফীর গুরুত্বে থাকছে লক্ষ্য স্থির রাখার কথা।
টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি হতে হলে এই ফরম্যাটের প্রতি বিশেষ অনুরাগ থাকার কথা জোর দিয়েই বললেন মাশরাফী।
‘আমাদের টেস্ট ক্রিকেটার তৈরি না হওয়ার পিছনে এইটা সব থেকে বড় কারণ। আমাদের ওই প্যাশনটা আছে কিনা, টেস্ট ক্রিকেটের যে মজা ওটা পায় কিনা। এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
‘তামিম এখন টেস্ট সেঞ্চুরি অনেকবেশি উপভোগ করে। সাকিবও টেস্ট ক্রিকেট বেশি উপভোগ করে। মুশফিকেরও তাই। ওদের পারফরমেন্সের দিকে তাকালেও বোঝক যাবে। রিয়াদকে যখন টেস্টে বাদ দেয়া হয়েছে, ওর খুব মন খারাপ ছিল। কারণ টেস্ট খেলতে চায়। এরকম প্যাশনেড না হলে সংগ্রামে টিকে থাকা খুব কঠিন। হুট করে নিলে, খেলতে না পারলে, তখন বাদ পড়তে হবে। টেস্ট দলটার সমন্বয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওদের ওই প্যাশনটা থাকতে হবে যে, আমি টেস্ট প্লেয়ার হতে চাই।’ -সিনিয়রদের দেখে টেস্টের প্রতি নিবেদনটা শিখতে বলছেন মাশরাফী।
‘আমার যখন ডেব্যু হয়, তখন নান্নু (মিনহাজুল আবেদিন) ভাইয়ের কথা বলা হত, উনি টেস্ট ক্রিকেট খেলেননি। ওনার কষ্টটা আমরা খেলেও অনুভব করতাম। ইসসস… এত বড় খেলোয়াড়, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেননি। আর আমরা যখন জুনিয়র, আমরা প্রাউড ফিল করতাম। এখনও ফিল করি। এখন খেলতে না পারলেও আমি বাংলাদেশের টেস্ট প্লেয়ার এটার প্রাউড ফিল করি। তবে কেবল ফিল করলে হবে না, এজন্য প্রাউডের জায়গাটা নিয়ে কাজ করতে হবে। ওদের সুযোগ আছে, ওখানে ফোকাসটা করা উচিত।’ -বলেন মাশরাফী।
যেখানেই সুযোগ হয় তরুণদের সেখান থেকেই শেখার কথায় জোর দিলেন মাশরাফী। শুধু আন্তর্জাতিক তারকাই নন, শেখার কথা বললেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞদের থেকেও।
‘আমরা যখন ড্রেসিংরুমে থাকি, এসব আলোচনা হয়। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে। রাজ (আব্দুর রাজ্জাক) আছে, তুষার ইমরান। খুলনা তো লাকি, ওদের মতো দুজন সিনিয়র পেয়েছে। তাদের কাছে অনেককিছু শিখতে পারে জুনিয়ররা। যদি চিন্তা করে শুধু সাকিবের থেকেই শিখবে বা তামিমের থেকে, তাহলে কঠিন। তাদেরও তো কমিটমেন্ট থাকে বিভিন্ন জায়গায়। তাদেরকে সবসময় পাওয়াও যাবে না। আমি মনে করি, তুষার, রাজ, নাঈম, শাহরিয়ার, এরা টেস্ট ক্রিকেটারদের আদর্শ হতে পারে। যে কনফিডেন্স লেভেল বা ফিটনেস নিয়ে খেলে যাচ্ছে, এটা আদর্শ হতে পারে তরুণদের কাছে।
এ এম বি । পাথরঘাটা নিউজ