দেশে ফিরে, কথা রাখলেন অনন্ত জলিল
অনলাইন ডেস্কঃ কথা রাখলেন চিত্রনায়ক-প্রযোজক ও দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় প্রথমে হাত হারানো ও পরে মৃত্যুবরণ করা তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের ছোট দুই ভাই মেহেদি হাসান ও আবদুল্লাহর দায়িত্ব নিলেন তিনি।
রোববার সাভারের হেমায়েতপুরে অনন্ত জলিলের নিজস্ব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এজেআই গ্রুপের কার্যালয়ে রাজীবের ছোট দুই ভাইকে ডেকে নেন তিনি। এ সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজীবের খালা ও মামা। নিজ কার্যালয়ে বসে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন অনন্ত।
এরপর তিনি মেহেদি হাসান ও আবদুল্লাহর লেখাপড়া, ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব নেন। এর আগে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজ থেকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে অনন্ত ঘোষণা দেন, রাজীবের অসহায় ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে চান তিনি।
এ ঘোষণা দেয়ার সময় তিনি পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে সপরিবারে অবস্থান করছিলেন। এরপর দেশে ফিরে তিনি রাজীবের দুই ভাইকে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন।
অনন্ত জলিল যুগান্তরকে বলেন, ‘সৌদিতে অবস্থানকালীন আমি জানতে পারি রাজীব মারা গেছে। খুব কষ্ট করে বাবা-মা হারা ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করছিল ছেলেটি। কিন্তু সে মারা যাওয়ার পর ওর ভাই দুটো একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছে। পত্রিকায় বিষয়টি পড়ে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। তাই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিই, ভাই দুটোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নেব। যেহেতু তাদের কেউ নেই, তারা আমার কাছে থেকে পড়াশোনা করবে। সেই ব্যবস্থা আমি সৌদিতে অবস্থানকালীন সময়ই আমার অফিসের কর্মীদের নিয়ে করে ফেলেছিলাম। দেশে এসে দুই ভাইকে খুঁজে বের করে তাদের দায়িত্ব নিলাম। তাদের দায়িত্ব নিতে পেরে আমার বেশ ভালো লাগছে। আশা করি ওরা নিজেদের জীবন গড়ে নিতে পারবে। আমি সবসময় ওদের খোঁজ খবর রাখব।’
যদিও অনন্ত বলেছিলেন রাজীবের ছোট ভাইদের তিনি নিজের তত্বাবধানে রাখবেন। এ লক্ষ্যে তাদের জন্য সাভারের হেমায়েতপুরে বাসা ভাড়া সহ একজন মুফতিও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা করতে এসে অনন্ত জানতে পারেন, রাজীবের ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তার খালা ও মামা।
তারা চাইছেন মেহেদি হাসান ও আবদুলল্লাহরবর্তমানে যেখানে পড়াশোনা করছে এবং যে হোস্টেলে থাকছে, সেখানেই রাখতে। অনন্তও রাজীবের খালা ও মামার পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে সেই ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম রাজীবের আপন বলতে কেউ নেই। তাই তার ছোট ভাই দুটোকে আমার নিজের তত্বাবধানে রাখার ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন যেহেতু দেখছি ওর খালা ও মামা আছে, এবং তারা চাইছেন মেহেদি ও আবদুল্লাহ যে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে সেখানেই রাখতে, তাই আমি আপত্তি করিনি। সেখানেই ওরা থাকবে এবং পড়াশোনা করবে। তার যাবতীয় খরচ আমি বহন করবো। বরং যাতে আগের চেয়ে আরও ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে সেই ব্যবস্থাও নিয়েছি। বাবা-মা আগে থেকেই নেই। একমাত্র বড় ভাই, সেও চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে। এ মুহূর্তে খালা-মামাদের সান্নিধ্যে থাকলে হয়তো ছেলে দুটিও মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে। তাই তাদের মতামতকেই গুরুত্ব দিয়েছি। পরবর্তীতে যদি তারা মনে করে আরও ভালো কোথাও পড়াশোনা করা দরকার, তাহলে সে ব্যবস্থাও আমি নেব’
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন।
বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছলে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসি বাসটির গা ঘেঁষে অতিক্রম করে। দুই বাসের প্রবল চাপে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ওই ঘটনার পর পথচারীরা রাজীবকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে গত ১৬ এপ্রিল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি।
রাজীবের বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার টাইপ করে তিনি নিজের এবং ছোট দুই ভাইয়ের খরচ চালাতেন।
এ এম বি । পাথরঘাটা নিউজ