পরিবেশ আমাকে জ্যেষ্ঠ হতে দিলো নাঃ-মা’ছুম বিল্লাহ বাশারী

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪১ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ০৯:৪৫ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০১৮

পরিবেশ আমাকে জ্যেষ্ঠ হতে দিলো না -মা’ছুম বিল্লাহ বাশারী
জন্মের পূর্বেই আব্বু নাম ঠিক রেখেছিলেন, ছেলে হলে মা’ছুম বিল্লাহ ডাকবো। স্বাধীনতার তৃতীয় দশকের প্রথম বছরটাতে জন্ম নিলাম। দিনদিন বড় হতে চললাম। বুলি থেকে স্বর-হস্তলিপি-ধ্বনি-শব্দ ও বাক্য শিক্ষা শেষে আদইয়ায়ে মাসনুনাহ আওড়াতে থাকলাম আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট বয়সসীমায় উপনীত হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমন শুরু করলাম।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয় শুরু। নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় পরীক্ষা দিচ্ছি একটি শ্রেণি শেষে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছি আর এভাবেই এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম ২০০৮ সনে।

হঠাৎ জীবনের মোড় ঘুরে আলিয়া নেছাবের দাখিল মাদরাসায় ভর্তি হলাম। সেখানেও পড়লাম। দাদার আকাঙ্খায় আবারও নড়েচড়ে গ্রাম থেকে চলে যেতে হলো ছারছীনা দ্বীনিয়ায়। সেখানে চারটি শ্রেণিতে পড়লাম তিনটি বৎসরে। দ্বীনিয়ায় ২০০৮ সনে তালতলী হুজুরকে বলে এক সপ্তাহের সময়সীমায় শ্রেণি উত্তীর্ণের পরীক্ষা দিয়ে হাশতম থেকে হাফতমে উঠে গেলাম।

২০০৯ সনের ৩১শে ডিসেম্বর দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ২০১২ সনে দাখিল পরীক্ষা দেই। মাঝখানে ঝরে গেলো ২০০৮ - ২০১২ = ৪টি বৎসর। আলিম পরীক্ষা ২০১৪ সনে দিলাম, বরাবরই রেজাল্ট ভালো তাই গোল্ডেন মিললো। প্রাইমারি থেকেই বৃত্তি পেয়ে আসছিলাম।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো এমন মানসিকতা লালন করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষে ভর্তি হতে যাবো দুদিন পর, এরইমধ্যে আব্বু আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয় হুজুরের কাছে ফোন দিয়ে দেখা করিয়ে নছিহতের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষার অনার্সে ভর্তি হওয়ার অনুপ্রেরণা দিলেন। ভর্তি পরীক্ষা বিজ্ঞপ্তির জন্য একটি বছর অপেক্ষান্তে বিজ্ঞপ্তি পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সানন্দে পড়াশোনা করছি।

ভর্তি সেশন হলো ২০১৪-২০১৫, এখন আমি গর্বিত দ্বিতীয় বর্ষে আদু ছাত্র পরিচয় বহন করছি। সম্প্রতি ২য় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। একই সেশনে আমার প্রিয় সহপাঠী বন্ধুরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়তে অনার্স ৪র্থ বর্ষের সমাপনী সেমিস্টারের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে আর ভাবছে আগত মাস্টার্স ও বিসিএস নিয়ে।

গত ১৯/০৪/১৮ তারিখে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্ত ফাজিল ২য় বর্ষ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। ডিসেম্বরে শুরু হয়ে জানুয়ারিতে পরীক্ষাটা সম্পন্ন করে ৩মাসের মাথায় রেজাল্ট দিয়েদিলো। আর ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধীনে ফাযিল ২য় বর্ষের পরীক্ষা হয়েছে ১বছর গত হলেও আদৌ ফলাফল প্রকাশ করেনি এবং ৩য় বর্ষের পরীক্ষার ঘোষণা দেয়নি। ফলে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জুনিয়র ছাত্ররা আজ সিনিয়র হয়ে গেলো, আর ইবির অধীনে ছাত্ররা সিনিয়র হয়েও জুনিয়র হয়ে গেলাম। পরিবেশ আমাদেরকে জুনিয়রদের কদমবুচি করার পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। এই হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা! এজন্যই বলছি পরিবেশ আমাদেরকে জ্যেষ্ঠ হতে দিলো না।

এ দ্বায়ভার করা নিবে? সিলেবাস শেষ হওয়ার পর স্বভাবতই পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্ররা পরীক্ষার অপেক্ষা করে বছর গুনে আর বিভিন্ন কর্মপেশায় জড়িত হয়। ঠিক এই জায়গাটাতে এসে অনেক কিছুই বলার আছে, কিন্তু বলতে পারছিনা। জগতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের একমাত্র সম্বল হলো বেয়াদব শব্দটি। এটা উচ্চারণ করলেই বাধ্যগত পোষ্যরা কাবু হয়ে যায়। (বিঃদ্রঃ এখানের প্রতিটি স্টেপে অনেক কথা এড়িয়ে যেতে হয়েছে, তবে পরে লিখবো)

ভাবছেন এটা একমাত্র মা’ছুম বিল্লাহ সময় অপচয়ের জীবন কাহিনী। না এটা লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের জীবন কাহিনী। আমি হয়তো স্কুল ঘুরে এখানে এসেছি। কিন্তু মাদরাসা পড়ুয়া ৯০% ছাত্র হিফজ বিভাগে জীবনের এ সময়টা দিয়ে তারপর এখানে আসে। আর এ কারণেই মাদরাসার ছাত্ররা একটু বেশী বয়স্ক হয়ে যায়।

সকল হাফেজ ছাত্রের আর্থিক সামর্থ্য হয়না যে, ছারছীনায় খুছুছী, ঝালকাঠিতে তাহিলী আর দারুননাজাতে তাখছিছী পড়ে পেছন জীবনের সময়টাকে গুছিয়ে বরাবর করবে।

তবুও বাস্তবতা মেনে নিয়ে জন্মতারিখ পরিবর্তন করে ভর্তি হয়। বর্তমান বাংলাদেশে এমন কোনো আলেম নেই যে সনদের জন্মতারিখ আর সত্যিকার জন্মতারিখ একই দেখাবে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন থাকতে পারে তবে এ সংখ্যা নগণ্য। তবুও যদি আমাদের জীবন নিয়ে এমন চলতেই থাকে তাহলে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে সত্য অসত্যের দোহাই দরকার কি?

পরীক্ষা দিচ্ছি ২০১৮তে কিন্তু শিরোনাম লিখতে হয় ২০১৬, শিরোনামেই যদি এতোবড় মিথ্যা ও অন্যায় চর্চা করতে বাধ্য হতে হয় তাহলে পরীক্ষার হলে বিশৃঙ্খলা ও পাশাপাশি তাকিয়ে লেখা কোনো অন্যায়ই হতে পারে না। তবে হ্যাঁ, আমরা পরীক্ষার হলে সকল অন্যায় থেকে মুক্ত এবং সকল অন্যায়েরই বিরুদ্ধে সজাগ।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধীন দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মারাসায় আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)