বিশ্বাস করেন আর না করেন নবীজির সাথে ইহাই ঘটেছিলো
প্রিয় নবীজি (সা.)-এর এই দুনিয়ায় শুভাগমন ও প্রস্থান উভয় ঘটেছিল রবিউল আউয়াল মাসে। উভয় দিন ছিল সোমবার। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: প্রাচুর্যময় তিনি, যাঁর হাতে সকল রাজত্ব, তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান; যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করবেন তোমাদের মধ্যে কারা কর্মে উত্তম। তিনি পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল। (সুরা মুলক, আয়াত: ১-২)। দশম হিজরিতে ৯ ও ১০ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে বিদায় হজের ভাষণের শুরুতে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে হয়তো আপনাদের সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।’ এরপর মাত্র ৮৩ দিন তিনি দুনিয়াতে ছিলেন। সফর মাসের মধ্যভাগে তিনি অসুস্থ হন, সফরের শেষ বুধবার (আখেরি চাহার শোম্বা) কিছুটা সুস্থতা বোধ করেন; ১২ রবিউল আউয়াল তিনি ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন: ‘যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করছ, তা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবেই।’ (সুরা জুমুআহ, আয়াত: ৮)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে প্রথমে রুহের জগতে রেখেছিলেন, তারপর দুনিয়ার জগতে পাঠিয়েছেন, এরপর বারজাখ জগতে থাকতে হবে এবং সর্বশেষ আখিরাত বা পরকালীন জগতে যেতে হবে। মৃত্যু হলো পরজগতে যাওয়ার সেতুস্বরূপ। ওফাত ও দাফন: তথ্যবিভ্রাট অত্যন্ত ক্ষতিকর, অনেক সময় আমরাও না জেনে-না বুঝে অথবা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পেরে এর শিকার হয়ে যাই। যেমন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবিরা তাঁর দাফনক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিন দিন সময় পার করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাফন সম্পন্ন হতে কত সময় লেগেছিল? উত্তরে উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি ৩১ জানুয়ারি থেকে ১ মার্চ যেমন তিন মাস হয় না (বরং ত্রিশ দিন বা এক মাস হয়), তেমনি তিন দিনের নাম বললেই তিন দিন (৭২ ঘণ্টা) হয় না।
বিশুদ্ধ হাদিস ও ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়েছিল সোমবার দ্বিপ্রহরে মতান্তরে বিকেলে আর দাফন হয়েছিল বুধবার এশার সময়। তাহলে আরবি হিসাবে (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক দিন ধরে) সোমবার দিনের ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা, মঙ্গলবার (সোমবার সূর্যাস্তের পর থেকে মঙ্গলবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত) ২৪ ঘণ্টা এবং বুধবারের (সূর্যাস্তের পর থেকে এশা পর্যন্ত) ১ ঘণ্টা বা ২ ঘণ্টা (মোট ২৬ বা ২৮ ঘণ্টা)। বাংলা হিসাবে (সূর্যোদয় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এক দিন ধরে) সোমবারের (সোমবারের আসর থেকে মঙ্গলবারের সূর্যোদয় পর্যন্ত) ১৩ ঘণ্টা বা ১৪ ঘণ্টা এবং মঙ্গলবারের (সূর্যোদয় থেকে এশা পর্যন্ত) ১৩ ঘণ্টা বা ১৪ ঘণ্টা (সাকল্যে ২৬ থেকে ২৮ ঘণ্টা)। ইংরেজি হিসাবে (মধ্যরাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এক দিন ধরে) সোমবারের (আসর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত) ৭ ঘণ্টা বা ৮ ঘণ্টা এবং মঙ্গলবারের (রাত ১২টা থেকে এশা পর্যন্ত) ১৯ ঘণ্টা বা ২০ ঘণ্টা (সাকল্যে ২৬ থেকে ২৮ ঘণ্টা)। ওপরের বিবরণ থেকে দেখা যায়, আরবি হিসাবে তিন দিন (সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার), বাংলা ও ইংরেজি হিসাবে দুই দিন (সোমবার ও মঙ্গলবার); কিন্তু সময় ২৬ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ ঘণ্টা মাত্র; যাকে তিন দিন তো দূরের কথা দুই দিনও বলা যাবে না। কারণ, কোনো সংখ্যা অর্ধেকের কম হলে পূর্ণ সংখ্যা বলা যায় না। সাধারণত অর্ধেকের কম হলে তা ধর্তব্যও হয় না। আর এই এক দিন বিলম্ব হওয়ার অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে, যা প্রামাণ্য সিরাত গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। দাফন বিলম্বিত হওয়ার কারণ প্রিয় নবীজি (সা.) ইন্তেকালের আগে একাধিকবার অজ্ঞান হয়েছিলেন এবং পুনরায় সুস্থ হয়েছিলেন। তাই ১২ রবিউল আউয়াল ইন্তেকাল করলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দীর্ঘ সময় পর যখন তাঁর ইন্তেকাল নিশ্চিত হয়, তখন মধ্যরাত। সকালবেলায় যখন তাঁর মৃত্যুর খবর সাহাবায়ে কিরাম শুনলেন, তখন অনেকেই তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। যেমন হজরত উমর (রা.) নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের খবর শুনে পাগলপ্রায় হয়ে গেলেন। তিনি তরবারি নিয়ে বের হলেন আর বললেন: ‘যে বলবে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তাকে খুন করব।’ এই অবস্থায় হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) সাহাবায়ে কিরামকে মসজিদে নববিতে ডেকে একত্র করে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেছেন: ‘কুল্লু নাফছিন যায়িকাতুল মাউত’, অর্থাৎ ‘জীবনমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)। তিনি আরও বলেন, কোরআন করিমে রয়েছে: ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.) অবশ্যই একজন রাসুল, তাঁর পূর্বে বহু রাসুল (আ.) গত হয়েছেন। তবে যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা শহীদ হন, তবে কি তোমরা পেছন দিকে ফিরে যাবে?’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৪)।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন: ‘(হে নবী! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয় আপনি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৩০)। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর বক্তব্যে সাহাবায়ে কিরাম নিশ্চিত হলেন, হজরত নবী করিম (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। এরপর প্রিয় নবীজি (সা.)-কে শেষ দেখা ও তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম, দোয়া-কালাম পেশ করতে থাকলেন তাঁরা। একের পর এক সাহাবি আসতে থাকলেন। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকল সন্ধ্যা পর্যন্ত। তারপর নবীজি (সা.)-কে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, প্রচলিত নিয়মে জামাত করে নবীজির জানাজার নামাজ পড়া হয়নি, এর প্রয়োজনও ছিল না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। রবিউল আউয়াল মাসের বিশেষ আমল (১) প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুসরণে প্রতি সোমবার নফল রোজা রাখা, যা সারা বছর রাখা যায়। (২) নবীজির প্রতি সর্বাধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পাঠ করা, যা সর্বদা করতে হয়। (৩) প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সুন্নতমতো জীবনযাপনে ব্রতী হওয়া, যার কোনো বিকল্প নেই।আর্টিকেলটি prothom Alo থেকে সংগৃহিত , আর্টিকেলটি নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকলে আমাদের কমেন্ট বাক্স এ কমেন্ট করবেন , উপযোক্ত তথ্য প্রমান সহ কমেন্ট করলে আমরা এই আর্টিকেলটি ডিলেট করে দিবো
share please