হরিণঘাটা বন হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র

আকন মোঃ বসির
আকন মোঃ বসির, প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৫০ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

---

হাজারো বৃক্ষের সবুজের মাঝে হরেক রকমের পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ। মাঝে মাঝেই হরিণের চলাফেরা চোখে পড়ে আর বনমোরগের ডাক ভেসে আসে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বনে হেঁটে চলার জন্য তৈরি করা হয়েছে পথ। সাগরের কোল ঘেঁষে এমন এক চমৎকার বন দাঁড়িয়ে আছে বরগুনা জেলার পাথরঘাটায়। হরিণঘাটা বননানা বয়সের পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় বরগুনার পাথরঘাটার লালদিয়া হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে যেমন পর্যটকদের ভীর জমতে শুরু করে পর্যটন কেন্দে তেমনি শীত শীতের পরেও দুর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভীর যমাচ্ছে । বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে শুরু করেছে এই প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের এই অপরুপ লীলাভূমিতে। বনের বনাঞ্চল সবুজে ঘেরা, নানা রকম পাখির কন্ঠের আওয়াজ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।হরিনঘাটা ব্রীজ

তবে পর্যটন কেন্দ্রটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের অভিযোগ যাতায়াতের জন্য অনুন্নত রাস্তাঘাট, নিরাপত্তাহীনতা। নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, যা পর্যটকরা মনে করছে অনেকটাই অরক্ষিত। পর্যটকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে আদায় করা হচ্ছে রাজস্ব। পর্যটকরা বলছেন এখানে সুন্দরবনের আমেজ ও সমুদ্র পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করছে। প্রকৃতির এই লীলায় হরিণঘাটার বন সেজেছে এক অপরূপ সাজে। কর্মব্যস্ত মানুষেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু বিনোদনের জন্য ছুটে এসেছেন লালদিয়ার এই সমুদ্র পাড়ে।

বিশাল চর সেখানে রয়েছে এই রকম লাল জাতের কাকড়া

বিষখালী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা চিরায়ত জোয়াড় ভাটার টান যেখানে খেলে যায় গড়ার খেলা, সেখানেই রয়েছে হরিণঘাটা বনভূমি। সৈকতের কাছাকাছি এসে শেষ হওয়া বনভূমির পর রয়েছে শত শত একর জুড়ে জেগে উঠা চর। এ চরের নাম লালদিয়ার চর। সেখানে রয়েছে শুটকি পল্লী, ঝাউবন বঙ্গোপসাগরের মোহনা। বনের মধ্যে রয়েছে আঁকাবাঁকা ফুটট্রে রাস্তা। যেখানে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটছেন পর্যটকরা।

এখনে আছে মায়াবী হরিন কেউ কেউ আবার আড্ডা দিচ্ছেন বনের মধ্যে রাস্তার পাশে বসে। আবার কেউ কেউ বনের মধ্যে গোলঘরে। কেউবা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখছেন গাছ ও মেঘের খেলা। অনেকে আবার পরিবার পরিজন নিয়ে ছোট ছোট ট্রলারে করে বনের মধ্যে আঁকাবাঁকা খাল ধরে যাচ্ছেন সমুদ্র পারের লালদিয়াতে। সমুদ্রের বিশালতায় পর্যটকরা পাচ্ছেন অন্যরকম অনুভূতি। তবে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলেন, লালদিয়াতে জেটিঘাট স্থাপন করে স্পিডবোট রাখা হলে আধাঘণ্টায় কুয়াকাটা ও আধাঘণ্টায় সুন্দরবন যাওয়া যেত। অপার সম্ভাবনাময় হরিণঘাটা ও লালদিয়া পর্যটন কেন্দ্রটি বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা পর্যটকদের পদাচারণায় মুখরিত।

এখানে আসলে আরো দেখা মিলবে বহু ধরনের কাকড়া

বর্তমানে প্রতিদিন বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। তাছাড়াও এই হরিণঘাটায় ১৫,২৬৯ একর বিস্তৃত বনভূমির প্রধান আকর্ষণের বিষয় হল সুন্দরবনের আমেজ। বিভিন্ন প্রজাতির নয়নাভিরাম এই বনভূমিতে হরিণ, বানর, শুকর সহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। নানা প্রজাতির পাখির কলতানে পর্যটকরা পেতে পারে বিভিন্ন রকম অনুভূতি।

নৌকায় চড়ে বন দেখা ও সাগর দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্টের অর্থায়নে হরিণঘাটা লালদিয়া জীববৈচিত্র সংরণ ও ইকোট্র্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছেন বনবিভাগ। বর্তমানে এই পর্যটক কেন্দ্রে ঘুরতে আসা পর্যটকরা যেমনটি মনোমুগ্ধকর হয়েছে ঠিক তেমনটি রয়েছে নানা অভিযোগ। অনুন্নত রাস্তাঘাট দিয়ে আসতে অনেকটাই কষ্ট করে আসতে হয় পর্যটকদের। কোন প্রশাসনিক নিরাপত্তা পায়নি বলে জানান পর্যটকরা। যে কারণে একটি পুলিশ ফাড়ি দাবি তাদের এবং নেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা। হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া পর্যন্ত যাবার ফুটট্রে ব্রীজটি হয়নি এখনও সম্পূর্ণ।

অনেক লম্বা পথের জঙ্গলের মধ্যে যাওয়ার জন্য রয়েছে সুবিশাল এই ব্রীজ

যেকারণে পর্যটকদের যেতে হয়েছে মাছ শিকারের ছোট ছোট বোর্টে। দ্রুত লালদিয়া ব্রীজটি করার দাবি পর্যটকদের। ফুট ট্রে ব্রিজের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গার কারনে ঝুকি নিয়ে হাটতে হয় পর্যটকদের। পর্যটকরা আরও দাবি জানান এখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানা এবং বিভিন্ন স্থানে যদি বিভিন্ন প্রানীর ভাস্কর্য রাখা হয় তাহল শিশুদের আরও ভাল লাগতো এবং শিশুরা শিখতে পারতো কোন প্রানী দেখতে কেমন। হরিণঘাটা বন কেন্দ্রের রাজস্ব আদায়কারী শীতাংশু বলেন, প্রত্যেক পর্যটকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে পাথরঘাটা বন বিভাগের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, ফুট ট্রে ব্রিজ মেরামতের জন্য ডি এফ ও পটুয়াখালীর বরাবরে আবেদন করা হয়েছে শিঘ্রই এর মেরামতের কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন হরিনঘাটা থেকে লালদিয়া সমুদ্রপাড় পর্যন্ত যেতে ফুট ট্রে ব্রিজের এখন পর্যন্ত ৯৫০ মিটারের কাজ হয়েছে বাকি আছে ২ হাজার মিটার।

ওয়াচ টাওয়ার ,যেখান থেকে দেখা যায় সাগর আর হিরন পয়েন্ট পর্যন্ত

পাথরঘাটা বনবিভাগ ফুট ট্রে ব্রিজ, লালদিয়াতে কয়েকটি গোলঘর, ওয়াচ টাওয়ার ও জেটিঘাটের জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, যা আগামী জুনে কাজ শুরু হতে পারে এবং প্রদান মন্ত্রীর দপ্তরে লালদিয়া, হরিনঘাটা পর্যটনকেন্দ্রটি উন্নয়নের জন্য সকল কাগজ পত্র পৌছে গেছে। এই পর্যটন এলাকাটি একটি ত্রিমুখী যা সুন্দরবন ও কুয়াকাটার মধ্যখানে। সরকার লালদিয়া, সোনাকাটা ও কুয়াকাটা নিয়ে পর্যটন জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

গহীণ বনে রয়েছে এই রকম বসার জায়গা

তবে হরিণঘাটায় পুলিশ ফাড়ি এবং উন্নত রাস্তাঘাট করার আশ্বাস দেন বরগুনা-২ স্থানীয় সংসদ সদস্য। শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বরগুনা-২ আসনের প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলুর একক প্রচেষ্টায় ২০১৩ সালে লালদিয়া হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রটির কাজ শুরু হয়। পর্যটনটি আরো উন্নত করলে বৃদ্ধি পাবে পর্যটকের সংখ্যা। সে সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে সরকারি রাজস্ব। এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী বুনছে স্বপ্নের জাল। তাই দ্রুত কাজ করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য উন্নত রাস্তাঘাট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বৃদ্ধি করার দাবি এলাকাবাসীর।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)