রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান মিয়ানমার মন্ত্রী-ড. উইন মিয়াত
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আয়ে বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে আগের সেই পরিবেশ আর নেই। সেখানে রোহিঙ্গাদের ৩০টি ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। ক্যাম্পে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের কিছু রাখার পর স্ব স্ব বাড়ি ঘরে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বুধবার বেলা ১১টায় মিয়ানমার মন্ত্রী কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ডি-৫ ব্লকের আইওএমর হাসপাতালে মিয়ানমার সামরিক জান্তা কর্তৃক নির্যাতিত ২২ জন পুরুষ ও ১২ জন নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা যাতে সেখানকার অধিবাসীদের মতো চলাফেরা করতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে। রোহিঙ্গারা জীবন-জীবিকার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ নির্মাণ করে দেয়া হবে। তবে প্রত্যাবাসনের আওতায় ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে এনভিসি কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। পরে তাদের নাগরিকত্ব সনদসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
সাক্ষাৎকালে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বুচিডংয়ের নুরুল আলম, মংডুর রফিক, ফয়েজ, রহিমুল্লাহ, জাহেদ, বুচিডংয়ের বুজুরুজ মিয়া মিয়ানমারের মন্ত্রীর উদ্দেশে বেশ কয়েকটি যৌক্তিক দাবিদাওয়া উপস্থাপন করে বলেন, বর্তমানে আকিয়াবের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে যেসব রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে তাদের নাগরিক সনদ প্রদান করে স্ব স্ব বাড়ি ঘরে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে এখানকার রোহিঙ্গারা সিদ্ধান্ত নেবে তারা মিয়ানমারে ফিরবে কিনা।
তারা আরও বলেন, মিয়ানমারে ফিরে আগে তাদের নাগরিকত্ব সনদ প্রদান করে সেখানে নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা বসবাস করছে তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে। সরকার ওই তালিকা মিয়ানমার সরকারকে প্রদান করলে তা যাচাই-বাছাইপূর্বক রোহিঙ্গাদের যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে নেয়া হবে।
এর আগে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছলে সেখানে অপেক্ষমাণ কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম মন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে ক্যাম্প ইনচার্জের সম্মেলনকক্ষে উভয়পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানান মো. আবুল কালাম। এ সময় সঙ্গে ছিলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী, সহকারি পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাই লাউ মার্মাসহ সরকারি-বেসরকারি ও এনজিও সংস্থার লোকজন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে এই প্রথম দেখতে এলেন মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তারা।(সূত্রঃ যুগান্তর)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১১ এপ্রিল