সমাজে মাদকের ভয়াবহতা জঙ্গির চেয়েও ভয়ঙ্কর
মাদকের ভয়বহতা অাজ অামাদের দেশে জঙ্গির চেয়েও মারাত্মক অাকার ধারন করেছে বলে বিভিন্ন সময় মাদক বিরোধী সেমিনার গুলোতে সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন।দেশের জঙ্গি নির্মূল করতে সরকার ও জনগনকে যে ভাবে কাজ করতে হয়েছে, অাগামী ভবিষ্যতে হয়ত মাদক নিয়ন্ত্রনে তার চেয়েও বেশি ভূমিকা পালন করতে হতে পারে। মাদক অাজ সমাজের সকল উন্নয়নে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। সমাজের প্রতিটি স্তরের সব শ্রেনীর মানুষের মাঝে এর অাসক্তি ছড়িয়ে পরেছে।
নিশ্ছিদ্র অবস্থার মধ্যে থেকেও বেহুলা লক্ষ্মিন্দার এর গল্পের মত সাপ যেভাবে অন্দরমহলে প্রবেশের মাধ্যমে বিষবাস্প ঢেলে দিয়েছিল সমস্ত শরীরে ঠিক তেমনি অাজ মাদক দেশের প্রতিটি প্রান্তে সুক্ষ্ম মাধ্যমে প্রবেশের মধ্যে দিয়ে গ্রাস করে নিচ্ছে যুব সমাজ,গ্রাস করছে তরুনদের মেধা।একটি দেশের অাগামী ভবিষ্যত হচ্ছে অাজকের তরুন ও যুবকরা । যারা কিনা সমাজের সুষ্ঠ মেধা ও মননশীলতার মাধ্যমে অাগামীর একটি সুন্দর দেশ উপহার দিবে,হাল ধরবে দেশের প্রতিটি স্তরে সেই যুব সমাজ অাজ মাদকের কড়াল গ্রাসে নিমজ্জিত। সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাষন না মেনে চলার কারনেই সমাজের এ অবক্ষয় অাজ চরম মাত্রায় দেখা দিয়েছে।
একটা সময় বস্তি বা নিম্ন শ্রেনীর মধ্যে এ মাদক ব্যবসা সীমাবদ্ধ ছিল অার সে সকল জায়গা থেকে কিনে নিয়ে সমাজের ছাত্র, বখাটে তরুণ বা উচ্ছন্নে যাওয়া যুবকরাই মাদকসেবন করত কিন্তু এখন অার এদের মধ্যেই এর বিস্তার সীমাবদ্ধ নেই। মাদক নামক মোহনীয় বস্তু এখন সরকারী প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারী থেকে শুরু করে কোনও কোনও পুলিশসদস্য, ডাক্তার, প্রফেসর, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যের মাঝেও ঢুকে পড়েছে বলে প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। আর এদের মাধ্যমেও সমাজে মাদকের বিস্তার ঘটছে প্রতিদিন। এ ধরনের মাদক বিক্রেতারা দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নেশার অতলে ডুবিয়ে রেখেছে শহর ও গ্রামগঞ্জকে। বেকারত্বের অভিশাপের পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে তরুণরা মাদকাসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ অন্যের সংস্পর্শে গিয়ে এই নেশা দ্রব্যকে গ্রহণ করছে। মাদকদ্রব্য বেচাকেনা রোধকল্পে প্রশাসনের ভূমিকা সব সময়ই থাকে সন্দেহজনক। একটি থানায় মাদকের মামলার তদন্তের দায়িত্ব সকল অফিসারদের না দিয়ে দেয়া হয় নির্ধারিত অফিসারদের যাতে লেনদেনের হিসাবটি হয় সহজ। মাদক বিক্রেতাদের অধিকাংশই জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে অাগের মতই শুরু করে মাদক ব্যবসা। অধিক ঝামেলা না নেয়ার স্বার্থে রাগব বোয়ালদের ধরার লক্ষ্যে নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে কখনোই রিমান্ড চাওয়া হয়না। এমনকি মাদক ব্যবসায়ীদের জোগসাজগে চলে মাদকের মামলা হালকা করার পুলিশি প্রতিবেদন।
মাদক সমাজের প্রতিটি স্তরে খারাপ নমূনার চিত্র বহন করছে। প্রতিটি সন্তান নিয়ে বাবা মা অাজ চিন্তিত।সমাজে অাজ বাবা মা খুন হচ্ছে সন্তানের হাতে এই মাদকের কারনে যা অাজ নিত্য নৈমিক্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। অনেক মা বাবা বাধ্য হয়ে তার সন্তানকে সেইফ কাষ্টরী অথবা মাদক নিরাময় কেন্দ্র ভর্তি করছে।
মাদকদ্রব্য ব্যক্তিকে শুধু শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, সমাজের প্রতিটি অংশে এর ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে দেয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত রাগজাগা,বদহজম, চরম অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অসংলগ্ন ব্যবহার, দুর্বল চিত্ততা,হতাশা ও মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়। বেড়েই চলেছে সমাজের সামাজিক অবক্ষয়,খুন, ছিনতাই, মারামারি,চুরি, ডাকাতি,ইভটিজিং সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ।দেশের এ সামাজিক ব্যাধি থেকে তরুণ সমাজকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এজন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে জঙ্গি নিধনের মত অাইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান অতি জরুরী। পাশাপাশি দরকার সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষ নিয়ে মাদক বিরোধী অান্দোলন গড়ে তোলা।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন সংস্থাগুলোকে অারো জোড়ালো ভুমিকা পালন করা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারি সংস্থা এবং সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে হবে মাদকের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণা ও মাদকের কুফল সম্পর্কে জনগনের মাঝে তুলে ধরতে।
সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাদকের কুফল সম্পর্কে অবশ্য সচেতন হতে হবে। অামাদের দেশ অাজ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।এই উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখতে অাগামী প্রজন্মকে হতে হবে মাদকমুক্ত সুষ্ঠ চিত্তের। অার তাই একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সমন্বিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে হবে। এ অপরাধ আমাদের সমাজের বিবেককে প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে। তৈরি করছে একটি অস্থিতিশীল সমাজ ব্যবস্থা।
মাদকের কুফলে অাজ সমাজে যে সকল অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে এর পেছনে এ সমাজেরই নানাবিধ কারন বিদ্যমান। সমাজের সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারন গুলোর মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ধর্মীয় অনুশাসনের অনুপস্থিতি, প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এবং প্রয়োগহীনতা অন্যতম।
দেশের বিদ্যমান আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীকে মানসিক দিক থেকে সংশোধনের প্রচেষ্টায় সকলকে এগিয়ে অাসতে হবে।সারা দেশ ব্যাপি গড়ে তুলতে হবে মাদক বিরোধী সংগঠন যারা কিনা সমাজের প্রতিটি মানুষকে এক জায়গায় এনে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে তুলতে পারেন। প্রতিটি জেলখানোতে যে সকল মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা রয়েছে তাদের জেলখানার ভিতরে মাদক বিরোধী শিক্ষা দেয়া যাতে তারা জেল থেকে বেরিয়ে এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে।সে যাতে বুঝতে পারে ইতোপূর্বে সে যা করেছে তা ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর তাহলেই হয়ত মাদক মুক্ত সমাজ ও অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে। অাইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপার
বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে ধরে অপরাধীকে অাইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
মাদক নিয়ন্ত্রনে অাজকের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা এ ব্যাপারে অতি জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। রাজনৈতিক অনেক নেতা অাজ সরাসরি এ ব্যবসার সাথে জড়িত।তাইতো মাঝে মাঝে এরকম কিছু শিরোনাম দেখা যায় পত্রিকার পাতায় যে,”ঐশীর গলায় ফাঁসির মালা বদির গলায় ফুলের মালা”। এরকমও দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে,যেই নেতা বক্তব্যদান কালে মাদক নির্মূলের কথা বলে সেই সকল নেতারাই অাবার মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকে।তাই রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা হতে হবে এ ব্যাপারে অতি স্বচ্ছ।প্রতিটি দলের ছাত্র সংগঠনের উচিৎ হবে তাদের সদস্যদের নিয়ে মাদক বিরোধী সেমিনার করে মাদকের সাথে জড়িত সদস্যদের এ পথ থেকে ফিরিয়ে অানা অথবা তাদের মধ্যে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করে অাইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া।এই সাহসী পদক্ষেপ যে সংগঠন নিবে তাদের জনপ্রিয়তাও সমাজে বাড়বে বলে অাশা করা যায়। অামরা একটি সুষ্ঠ ,সুন্দর ও স্বাভাবিক সমাজ ব্যবস্থার পেতে সমাজের সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাধি মাদক নামক শব্দটাকে ঘৃনার চোখে দেখে সমাজের ঐ সকল মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের সমাজের কাছে অপরাধী করে তুলতে পারলে সমাজে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক অান্দেলন ও অাইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলেই হয়ত কিছুটা এ মরন অাগ্রাসন থেকে মুক্তি মেলবে।
লেখক: শামসুদ্দোহা প্রিন্স,চিফ রিপোর্টার-দৈনিক অামাদের কন্ঠ।
চেয়ারম্যান–অামরা মাদকের বিরোধী শক্তি
পাথরঘাটা নিউজ/এসপি/এএসএমজে/৯ এপ্রিল