সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০২:৩০ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

---

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল সুন্দরবন দিবস। দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলের বেড়িবাঁধ না থাকলে যেমন জনভূমি ও জনবসতি থাকত না, তেমনি সুন্দরবনে বাঘ না থাকলে এ বনকে টিকিয়ে রাখা যেত না। সুন্দরবন যদি না থাকত, তাহলে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সিডরের আঘাতে উপকূলের কোনো চিহ্ন থাকত না। সুন্দরবন উপকূল ও উপকূলের মানুষকে আরও ভয়াবহ ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করেছে।

সুন্দরবন মায়ের মতো। মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখে, তেমনি সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে। সুন্দরবন আমাদের অহংকার। শিশুরা যেমন নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে নিরাপদে থেকে খেলা করে, গড়াগড়ি খায়, ঠিক তেমনি করেই বাঘেরা গর্জন করে, হরিণেরা ঘুরে বেড়ায় মায়াভরা চাহনি নিয়ে, সাদা বক তার সফেদ ডানা মেলে উড়ে যায় পানির আয়নার উপর দিয়ে, বানরেরা লাফিয়ে চলে গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে। সবাই এখানে স্বাধীন, ঠিক মায়ের শাসনে যেমনটা থাকে। এভাবে সুন্দরবন ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে উপকূলের মানুষকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে। সুন্দরবন আমাদের অঢেলভাবে ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছে। এবার আমাদের ভালোবাসা দেয়ার পালা। দেশের স্বার্থেই এ বন টিকিয়ে রাখা জরুরি।

সুন্দরবনে মাঝেমাঝেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বনজীবী, সুন্দরবন অঞ্চলের আশপাশের স্থানীয় মানুষ, বনবিভাগ ও গণমাধ্যম সূত্রের খবরাখবর মিলিয়ে দেখা যায়, গত ১৪ বছরে প্রায় ১৮ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। ২০০২ সালের ২২ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে আগুন লাগে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রায় এক একর বন। ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ আগুনে পুড়ে যায় চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী ক্যাম্পের মাদ্রাসারছিলা অঞ্চলের ৩ একর বন। ২০০৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর আড়ুয়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৯ শতক বন। ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী অঞ্চলে পুড়ে যায় আড়াই একর বন। একই বছরের ১৩ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলায় পুড়ে ৪ একর বন। এরপর ২০০৬ সাল থেকে লাগাতার বন পুড়তেই থাকে। কেন বন পুড়ছে তার সঠিক কারণ খুঁজে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। রক্ষা করতে হবে এ বনের প্রাণিজ ও বনজসম্পদ।

সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। জাতিসংঘের এ সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে নৌপরিবহন অধিদফতর বন আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (সিবিডি), ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশনের নিয়ম লঙ্ঘন করে বনের ভেতর দিয়ে নৌপথ চালু করেছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশের।

সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানাভাবেই। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোক, আর যে কোনো উপায় হোক, সুন্দরবনের ক্ষতি কাটিয়ে এ বনকে রক্ষা করতে হবে। বাঁচতে গেলে আমাদের বিশুদ্ধ পানি লাগবে, খাদ্য লাগবে, শ্বাস নেয়ার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস লাগবে, আমাদের অস্তিত্বের জন্য বন লাগবে, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান লাগবে। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সুন্দরবনকে বাঁচাই, নিজেরা বাঁচি। মাকে বাঁচাই।

শফিকুল ইসলাম খোকন : গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক
msi.khokonp@gmail.com

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)