এইচএসসি পরীক্ষার্থী বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জগন্নাথপুর খোঁচাবাড়ি এলাকায় যুবক তানভীর আহম্মেদের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে গত ৩ দিন ধরে অনশন শুরু করেছেন সরকারি মহিলা কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
রবিবার (১ এপ্রিল) এই বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন প্রভাবশালী ছেলের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করলে তা এলাকাবাসী মেনে নেয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর খোঁচাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেবের ছেলে তানভীর আহম্মেদ বাবুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই ইউনিয়নের ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসএসি পরীক্ষার্থীর। গত দেড় বছর ধরে সম্পর্ক চলাকালে তানভীর আহম্মেদ ওই মেয়েক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবৈধভাবে মেলামেশা শুরু করে। হঠাৎ ওই শিক্ষার্থী গর্ভধারণ করে। তখন প্রেমিকা তানভীর আহম্মেদ বাবুকে ওই শিক্ষার্থী বিয়ের চাপ দেয়। তানভীর প্রেমিকার ভ্রূণ নষ্টের শর্তে বিয়ে করতে চান। বিয়ের জন্য অবশেষে গত ৩ মাস আগে ভ্রূণ নষ্ট করেন ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু ভ্রূণ নষ্টের পর তানভীর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।
অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে ওই প্রেমিকা এইচএসএসি পরীক্ষার্থী গত শুক্রবার প্রেমিক তানভীরের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেন।
এলাবাসী অনশনের বিষয়টি অবগত হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য কেদার নাথকে অবহিত করেন। পরে ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে প্রভাবশালী ছেলের বাবা মোতালেবকে ম্যানেজ করে অনশনকারী ওই মেয়েকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা জানান। কিন্তু অনশনকারী ওই শিক্ষার্থী টাকা না নিয়ে প্রেমিককে বিয়ের দাবিতে অনশন অব্যাহত রাখে। ওই ইউপি সদস্য কেদার নাথ বাড়ি থেকে ছেলে তানভীর ও তার পরিবারকে বের করে দেয়। বিষয়টি রবিবার ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বসা হবে বলে জানিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন কেদার নাথ।
রবিবার সকালে বিয়ের দাবিতে অনশনের বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে বসলে শেষ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।
স্থানীয় ব্যক্তি মেরাজুল জানান, ছেলের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অর্থ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই তারা বিয়ের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করছে। তাছাড়া মেয়েটির কালকে এইচএসসি পরীক্ষা এই মুহূর্তে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে মেয়েটির ভবিষৎ অন্ধকার নেমে আসবে।
অনশনকারী মেয়ের মা জানান, তানভীর নামে ছেলেটি আমার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত ৩ মাস আগে বাচ্চা নষ্ট করলে বিয়ে করবে বলে উপায় না পেয়ে শহরে এসে বাচ্চা নষ্ট করা হয়। কিন্তু তানভীরকে পরে বিয়ের চাপ দিলে সে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে আমার মেয়ে বিষের বোতল হাতে নিয়ে বিয়ের দাবিতে ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ছেলের বাবার কাছে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেয় আমাকে। আমার মেয়েকে ওই ছেলে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবে। কালকে তার এইচএসসি পরীক্ষা সেটা দিতে পারবে না মনে হয়।
বিয়ের দাবিতে অনশনকারী ওই মেয়ে জানান, তানভীর আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি তাকেই বিয়ে করবো। তার সাথে বিয়ে না দিলে এই বাড়িতে আত্মহত্যা করব বলে হুমকী প্রদান করে অনশনকারী।
ছেলের বাবা মোতালেব বলেন, আমার ছেলে ওই মেয়েকে বিয়ে করবে না। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে মীমাংসার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ইউপি সদস্য কেদার নাথ বলেন, স্থানীয় ভাবে অনশনের বিষয়টি সুরাহা চলছে। সুরাহা না হলে বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের কাছে জানতে তিনি বলেন, ছেলে ও তার পরিবার ওই মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মেয়ের পরিবার পরিষদে বা থানায় লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, অনশনের বিষয়টি আমরা এখনো অবগত নই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২ এপ্রিল