পাথরঘাটায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ৩
বরগুনার পাথরঘাটায় যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৪)। সোমবার ফজরের নামাজের শেষে তাদের নিজ বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়ন থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছহেরাবাদ এলাকার মৃত নাদের আলী খানের ছেলে ফজলুল হক খান (৭০), মৃত আব্দুল করিম এর ছেলে মো. ইউসুফ আলী (৭৫) এবং পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের ছোট টেংড়া এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৬৯)।
এর আগে ২০১৭ সালের ২২ মে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আব্দুল মান্নান হাওলাদার, ভাই আবদুর রাজ্জাক, বোন জামাতা হযরত আলীসহ ৪ থেকে ৫জন খাকি পোষাকধারী ও ৫থেকে ৭জন অজ্ঞাত সাদা পোষাকধারীকে আসামী করে মামলা কর হয়। মামলা নম্বর সিআর-১২২/২০১৭। সে সময় গ্রেফতারকৃত আব্দুর রাজ্জাকের নাম মামলায় উল্লেখ থাকলেও ফজলুল হক খান ও ইউসুফ আলীর নাম ছিলো না।
কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান আবু পাথরঘাটা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩০২/৩৪/৩৮০/৩৫৪/ ৪৩৬/২০১ ধারায় পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজওয়ানুজ্জামানের আদালতে আবেদন করলে দীর্ঘ আইনী পর্যালোচনা শেষে ওইদিন বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলাটি স্থানান্তরের আদেশ দেন। পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলাটি আমলে নেন। যাহার নম্বর ৮/২০১৯
মামলার আবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৯ জুন মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন অধিকারীকে রাজাকার জালালের বাড়ির সামনে ওয়াপদার উপরে বসে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় ছুড়ি চালায়। পরদিন ৩০ জুন চিত্তরঞ্জন অধিকারীকে হত্যা করতে না পেরে আপন চাচা সুরেন্দ্র নাথ অধিকারীকে হত্যা করে লাশ গোপন করে ফেলে। ১৮ আগস্ট বাদির বাবা মতিয়ার রহমান ও ১নং সাক্ষী মনমথ রঞ্জন মিস্ত্রীর বাবা মনোহর মিস্ত্রী চাচা কর্নধর মিস্ত্রীকে দিনের বেলা গুলি করে হত্যা করে। পরে মনোহরের বাড়ি অগ্নিসংযোগ করে ব্যপক ক্ষতি সাধন করে।
মামলা বাদি মিজানুর রহমান আবু বলেন, বাবা হারা আজ ৫২ বছর। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বাবাসহ প্রতিবেশী দুই ভাইকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। দীর্ঘ দিন পর হলেও সেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি এবং তিনি এ বিচার দ্রুত কার্যকরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এমএ খালেক বলেন, দীর্ঘ বছর পর হলেও যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এর দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, র্যাব ৩ জনকে থানায় নিয়ে এসেছে, আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাজির করবেন বলে জানা যায়।
গ্রেফতারের বিষয় নিশ্চিত করে র্যাব-৪ এর কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. আরিফ হোসেন বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর চেয়ে আর কিছু বলা যাচ্ছে না বলে মিডিয়া কর্মকর্তার সাথে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন।
র্যাব-৪ এর মিডিয়া কর্মকর্তার সরকারি ফোনে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেননি।