মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ পাথরঘাটা পৌরবাসী

কাজী রাকিব
কাজী রাকিব, নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, ৩ জুন ২০২২

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রবে টেকা কঠিন হয়ে পড়েছে। দিনে কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যা হলে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মিলছে না। মশার উপদ্রবে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক মানুষই অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও।


পৌর এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, নিয়মিত ড্রেন, ডোবা, পরিস্কার না করা এছাড়াও পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় যেখানে সেখানে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে। এমনকি দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রমও। ফলে মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। মশার বংশবিস্তার রোধে বার বার বললেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা পৌর কর্তৃপক্ষ এমনটাই অভিযোগ পৌরবাসীর।


পাথরঘাটা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে পাথরঘাটা পৌরসভার প্রতিষ্ঠা হয়ে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভায় উন্নিত হলেও ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। ফলে শহরের পূর্ববাজার মুরগির টল, মাছের টল, কসাইখানা, ফল বাজার, সবজি কাঁচাবাজার এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এমনকি ঝোপঝাড়, জঙ্গল, নামে মাত্র থাকা ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ড্রেনগুলোর পানির প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ড্রেনে জমে থাকা পানি, ঝোপঝাড়, জঙ্গল ও ময়লা-আবর্জনা থেকে জন্ম নিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মশা। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে দিনের বেলাতেও মশার কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করলেও মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পৌর শহরের অর্ধলক্ষ বাসিন্দাদের জনজীবন বিপর্যস্ত।


পৌরসভার বাসিন্দা, জহিরুল আহমেদ শিমু, কাজী মামুন, রিয়াজ সহ একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ করেন পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরের মশক নিধনের চোখে পড়ার মতো দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায় নি। এমনকি পৌরসভার ড্রেনগুলোও পরিষ্কার করা হচ্ছে না ঠিক মতো। যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই যত্রতত্র পানি জমে থাকে। একারণে মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। মাঝে মাঝে ফটোসেশনের জন্য ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে ছিটানো হয়।


বিষয়টি নিশ্চিত করে পাথরঘাটা ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন জানান পাথরঘাটা পৌরশহরে মশা নিধনের কোন জনবল নেই। পদ খালি থাকা সত্ত্বেও জনবল বৃদ্ধিতে আগ্রহ নেই কতৃপক্ষের। এছাড়া ও যে বাজেট আসে তা ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু মশক নিধন বাস্তবায়ন করা হয়না। গত বছরের মশক নিধনের ঔষধ এখন ড্রাম ভরা অবস্থায় আছে বলেও জানান তিনি।


মেশিন সমস্যার কারণে গত কয়েক বছর ধরে পাথরঘাটা পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কোন স্প্রে করা হয়নি বলে জানান কাউন্সিলর মশিউর রহমান। একই অভিযোগ দুই নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকনুজ্জামান রোকন ও ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মন্জুর রশিদ সুমনের।


তবে পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন বলেছেন মশা নিধনের কার্যক্রম চলমান আছে। পর্যাপ্ত জনবল ও বাজেট রয়েছে। তবে বৃষ্টি থাকায় আমরা এখন স্প্রে দিতে পারছি না।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাথরঘাটা পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান, মশার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই মশার উপদ্রব। সেটা চলছে দিন-রাতে সমানতালে। দিনের বেলায়ও কয়েল জ্বালিয়ে অফিস করতে হয়।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাথরঘাটা পৌরসভায় যে কয়টি মশক নিধনে স্প্রে মেশিন রয়েছে তার মধ্যে মাত্র একটি সচল রয়েছে। যা মাঝে মধ্যে ফটোসেশন ও পৌর ভবনের চতুর্দিকে স্প্রে করতে দেখা গেছে।


পাথরঘাটা বাজারের ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জানান, নিত্যা প্রয়োজনীয় পন্যের পাশাপাশি পাথরঘাটায় মশার কয়েল ও স্প্রের চাহিদা অনেক বেশি।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)