ভাগ্য বদলাতে চায় পাথরঘাটার জেলে পল্লীর শতাধিক বাসিন্দা
সুন্দরবনের পূর্বপাড় বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের বেরিবাঁধের উপরে বাস করছে ত্রিশটি জেলে পরিবারের শতাধিক বাসিন্দা। এরা প্রত্যেকেই তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে নদীন ভাঙ্গনে। তাই নদীর ধারে বেরিবাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করছে প্রায় বিশ ধরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি। আবারো নতুন করে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করছে তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় উত্তাল বলেশ্বর নদীর তীরে পলিথিন, গোলপাতা, তালপাতা দিয়ে বেড়া ও পাতলা টিনের ছাপড়া দিয়ে কোন মতে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এ জেলে পল্লীর বাসিন্দারা। ঘরে ভিতরে নামে মাত্র কিছু রশদ ও আসবাবপত্র ছড়ানো ছিটানো। এদের নেই কোনো সুপেয় ও প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত পানির ব্যবস্থা। অপরদিকে নেই স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোনা পানির সাথে বেড়ে উঠছে এখানকার শিশু সন্তানরা।
এখানকার বাসিন্দা জাকির হোসেন, রাকিব ও শিল্পী বেগম জানান, তাদের পূর্বপুরুষদের জমিজমা ঘরবাড়িসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে তারা বেরিবাঁধের পার্শে সরকারি জমিতে বসবাস করছে। সিডর, আয়লা, আম্ফান, বুলবুল, ফনিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো এখানে থেকে মোকাবেলা করে আসছে তারা।
স্বামী হারা পিয়ারা বেগম জানান, জীবনের শুরু থেকেই এই বলেশ্বর নদীর সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করছি। আবার এই বলেশ্বর নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখছি। জীবনের শেষ মুহূর্তে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই। যাতে একটু শান্তিতে মরতে পারি। এমন দাবি শুধু পিয়ারা বেগমের একার নয়। এই পল্লীতে বসবাসকারী সব নারী পুরুষ ও শিশুরা চায় তাদের ভাগ্য বদলাতে। যেতে চায় নতুন কোন স্থায়ী আবাসন প্রকল্পে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ জেলে পল্লীর বাসিন্দারা আসলেই অনেক মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে বার বার এদের ঘরবাড়ি হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির জানান, বিষয়টি আমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি। খোঁজ খবর নিয়ে বিস্তারিত দেখছি। অবশ্যই এদের জন্য সরকারের পক্ষ ভালো একটি ব্যাবস্থা করা হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ জানান সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা চলছে। এরা উপকারভোগী হলে এদের পুর্নবাসনের ব্যাবস্থা করা হবে।