প্রতিবন্ধিকে ঠ্যাঙ ভেঙে দেয়া হুমকি দিলেন পাথরঘাটার ইউপি চেয়ারম্যান
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নে ফোরকান আকন নামের প্রতিবন্ধি ব্যক্তিকে ঠ্যাঙ ভেঙে দেয়ার হুমকী দিয়েছেন ইউপি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম নাসির। সম্প্রতি ফোরকানের সাথে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ওই কথোপকথন তার নয় বলে দাবি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসিরের একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধি ফোরকান আকনের সাথে কথা বলতে শোনা যায়। ফোরকান একটি কাগজে স্বাক্ষরের জন্য চেয়ারমান নাসিরকে কল করেন। ফোরকানের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর চেয়াম্যান নাসির ক্ষেপে যান এবং ক্ষোভের স্বরে ফোন করার কারন জানতে চান। এসময় ফোরকান একটি কাগজে স্বাক্ষরের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে অনুনয় বিনয় করলে চেয়ারম্যান ধমক দিয়ে বলেন ‘ তুই আমারে বার বার টেলিফোন করো ক্যান? তোরে আমি স্বাক্ষর দেবনা, পাইছোডা কি? আমারে চেন তুই! আমাদের কখনো কল করবিনা। তোর একটা ঠ্যাঙ ভাঙা আরডাও ভাইঙ্গা দিমু, তুই আমারে মানুষই চেনোনায়। আর কোনোসময় কল করবিনা বলে তিনি লাইন কেটে দেন।’
ফোনালাপের সূত্রধরে যোগাযোগ করলে জানা যায়,পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের মতিয়ার রহমান আকনের ছেলে ফোরকান আকন (৩৭) পাঁচবছর সুপারী গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। এতে তার উভয় পা অচল হয়ে পড়ে। দীর্ঘবছর দেশের বিভিন্নস্থানে চিকিৎসা করার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। সবশেষ ২০২১ সালের মাঝামাঝি বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ফোরকানের চিকিৎসা করান। শারীরিকভাবে সুস্থ্য হলেও তার পা আর ভালো হওয়ার সুযোগ নেই এমনটা জানিয়ে দেন পঙ্গু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এরপর বাড়িতে ফিরে আসেন ফোরকান। এমপি রিমন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটি পাকা ঘর বরাদ্দ দেন। এছাড়া নারী সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা সম্প্রতি ফোরকানকে চিকিৎসা সহায়তায় অর্থ ও দোকান তৈরী করে দেন। নিয়মিত ওষুধ সেবনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫শত টাকা দরকার হয় তার। এই টাকা বিভিন্ন দানশীল মানুষদের সহায়তা নিয়ে জোগাড় করেন তিনি।
ফোরকান বলেন, সম্প্রতি দাতা সংস্থার সহায়তার আবেদনের জন্য একটি কাগজে স্বাক্ষরের জন্য চেয়ারম্যান নাসিরের ফোনে কল করেন ফোরকান। কিন্ত গোলাম নাসির টাকা দাবি করে ঘুরাতে থাকেন। নছোড়বান্দা ফোরকান হাল না ছেড়ে অন্য একটি নম্বর দিয়ে চেয়ার্যানকে কল করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন চেয়ারম্যান গোলাম নাসির তাকে ওই কথা বলেন। ফোরকান বলেন, ‘রেকর্ডটি ফাঁস হওয়ার পরপরই চেয়ারম্যান তার সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ ও নানা ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনের সেই রেকর্ডেও বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় কালমেঘা ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম নাসিরের সাথে। তিনি দাবি করেন, ওই রেকর্ড তার নয়। এটা বানানোও হতে পারে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ বলেন, আমি ওই অডিও শুনিনি। তবে ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে বিষয়টি দেখব।
যোগাযোগ করা হলে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বলেন, ‘আমি এখনো কথোপকথন শুনিনি। তবে ফোরকানকে আমি চিকিৎসা করিয়েছি, তাকে ঘর দিয়েছি। আমার যথাসাধ্য সহায়তা অব্যহত রেখেছি। যদি চেয়ারম্যান এমন বলে থাকেন সেটা দুঃখজনক।
সুত্রঃ বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।