পাথরঘাটায় অনিবন্ধিত অটোরিকশার দাপট সড়কে, শহরজুড়ে জট
বরগুনার পাথরঘাটা পৌর শহরে নিয়ন্ত্রণহীন ও নিবন্ধনহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) ছড়াছড়িতে এবং বিশৃঙ্খল অবস্থায় চলাচল করায় সড়ক জুড়ে যানজট লেগেই থাকে। এতে পৌরশহরে বসবাসরত মানুষরা অতিষ্ঠ হয়ে অবৈধ অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
সরেজমিন পাথরঘাটা পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, শহরের মধ্যে অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ফলে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। শহরের জিরো পয়েন্ট, শেখ রাসেল স্কয়ার, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাদ্রাসা সড়ক, নতুন বাজার ব্রীজের উপর উওর-দক্ষিণ দুই পাড়, মাছ, মুরগি ও সবজি বাজার, থানার সামনে, হাসপাতাল গেট, বাজারের প্রধান সড়ক, কলেজ রোড এলাকায় বেশিরভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। ফলে সময়ের কাজ সময়ে করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে।
পাথরঘাটা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পাথরঘাটা পৌরসভায় প্রথম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু করলেও ২০১৭-১৮ অর্থ বছর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অটোরিকশার নিবন্ধন শুরু করে পৌরকর্তৃপক্ষ। এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে করোনার কারনে নিবন্ধন বন্ধ ছিল। তবে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে নতুন নিবন্ধন শুরু করলে তাতে মাত্র ১৬ টি গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে বলে জানান (অতিরিক্ত দায়িত্বরত লাইসেন্স পরিদর্শক) বাজার পরিদর্শক বিপ্লব মৃধা।
তবে ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তালিকায় ৫৬২ টি অটোরিকশা নিবন্ধিত রয়েছে বলে জানান লাইসেন্স পরিদর্শক বিপ্লব কুমার রায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ৪-৫ বছর আগের নিবন্ধনকৃত অটোরিকশা গুলোর অধিকাংশই বিকল অথবা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তবে নতুন মডেলের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভিবাটেক ও ইজিবাইক নামে বাজারে আসলে আগের মডেলের অটোরিকশার চাহিদা তুলনা মূলক কম। বর্তমান সময়ে পাথরঘাটায় অটোরিকশা, ভিবাটেক, ইজিবাইক মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি অনিবন্ধিত ও অবৈধ বাহন রয়েছে বলে পৌরসভা সুত্রে জানা যায়।
অপরদিকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রাম-গঞ্জে চলাচল করা অটোরিকশাগুলো দিনে পাথরঘাটা পৌর শহরে এসে চলাচল করে আবার রাতে গ্রামে ফিরে যায়। এছাড়াও বিষখলি নদী পার হয়ে সদর উপজেলার নিশানবাড়িয়া এলাকা থেকে এসে ও পৌর এলাকায় গাড়ি চালানোয় পৌর শহরে যানজট বেশি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত অবৈধ অটোরিকশা বন্ধের দাবি তাদের।
পৌরসভার একাধিক বাসিন্দা জানান, পৌর শহরে মানুষের চলাচলে যে পরিমাণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রয়োজন তার প্রায় কয়েকগুণ বেশি রিকশা শহরে চলাচল করছে। তাই শহর ঝুড়ে যানজট লেগেই থাকছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে পৌরবাসী।
নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ও স্থানীয় গণ্যমাধ্যম কর্মী রফিকুল ইসলাম কাঁকন বলেন, পৌর শহর ও শহরের বাহিরে যতগুলো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার অধিকাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণেই ঘটে। কারণ অধিকাংশ অটোরিকশা চালক অদক্ষ। তাদের বিশৃঙ্খল অবস্থায় রিকশা চলাচল করার কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় ব্যাবসায়ী সৌরভ জানান, শহরের জানজট নিরসনে অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধ করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে নিবন্ধনের আওতায় এনে এলাকা ভিত্তিক চলাচলের অনুমতি দেয়া উচিত।
পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, লাইসেন্স ছাড়াও অবৈধ অটোরিকশা শহরে চলাচল করছে। তাদের নিবন্ধন করতে শহরে মাইকিং করা হয়েছে। যথাসময়ের নিবন্ধন না করলে অটোরিকশা বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়াও শহরের যানজট লাগবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ জানান, ইতিমধ্যে মাহিন্দ্রা চালক সমিতির নেতারা অটোরিকশায় অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং অপ্রাপ্ত চালকদের দিয়ে চালানো বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।