পাথরঘাটার সেই রুপক এবার বিদ্রোহী প্রার্থী
এই মুহুর্তে শেখ হাসিনাকে পুলিশ রিমান্ড দিলে ১০ ট্রাক অস্ত্রেও ঘটনা বের হয়ে আসবে’ এমন মন্তব্য করে সমালোচিত মিজানুর রহমান রুপক বরগুনার পাথরঘাটার রায়হানপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ওই ইউনিয়ন থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্ত মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রুপকের মনোনয়ন জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আইয়ুব আলী হাওলাদার।
মিজানুর রহমান রুপক বর্তমানে রায়হানপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে রায়হানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৩য় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ওই ইউয়িন থেকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ইউয়িনয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলামকে।
তফসিল ঘোষনার পর রুপকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ইউয়িন আওয়ামী লীগ। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয় মিজানুর রহমান রুপক ২০০২ সালে রায়হানপুরের লেমুয়া কলেজ মাঠে বিএনপির ডাকা জনসভায় তৎকালীন বিএনপির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনিকে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। ওই জনসভায় বক্তৃতাও করেণ রুপক। এসময় বক্তব্যে মিজানুর রহমান রুপক তৎকালীন বিরোধীয় দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দশ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনায় শেখ হাসিনাকে রিমান্ডে নিলেই তথ্য বের হয়ে আসবে’। তৎকালীণ বরগুনা-২ আসনের বিএনপি জোটের সাংসদ নুরুল ইসলাম মনির ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও মনির সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে নিয়মিত অংশ নিয়ে শেখহাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতেন রুপক এমন অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থী বাছাইয়েরতৃনমূলের সর্বোচ্চ ৩১ ভোট পেয়ে মাইনুল ইসলাম মনোনয়নের জন্য নির্বাচিত হলেও কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন করে মিজানুর রহমান রুপককে মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নিয়ে কোন্দল দেখা দিলে ওই বছর (২০১৬ সাল) ১২ জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন সাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনেও উল্লেখকরা হয়, মিজানুর রহমান রুপক ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে লেমুয়ার সৈয়দ ফজলুল হক কলেজ মাঠে জনসভায় বক্তৃতায় বলেন, এই মুহুর্তে শেখ হাসিনাকে পুলিশ রিমান্ড দিলে ১০ ট্রাক অস্ত্রেও ঘটনা বের হয়ে আসবে।
এ বিষয়ে রায়হানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার মনোনীত চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম বলেন, গতবার আমি মনোনয়নের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পরও ‘ক্ষমতার দাপটে’ তৃনমূলের মতামত উপেক্ষা করে দলীয় চেতনার পরিপন্থি বিএনপির সমর্থক মিজানুর রহমান রুপক মনোনয়ন পেয়েছিলেন। গত পাঁচ বছর আমাদের এটা মেনে নিতে হয়েছে। এবার আমি মনোনয়ন পেয়েছি, কিন্ত রুপক দলীয় পদে থেকে দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে। আমি আশা করছি উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ রুপকের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রায়হানপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুররহমান রুপক মুঠোফোনে বলেন, আমি স্কুল ও কলেজ লাইফে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। কখনো বিএনপি করিনি, বিএনপির সাংসদ নুরুল ইসলাম মনির সাথে ঘনিষ্ঠতা ও শেখ হাসিনাকে ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনায় রিমান্ড চাওয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করে রুপক বলেন, এটা আমার শত্রুদের অপপ্রচার।
রুপক বলেন, জনপ্রিয়তার বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গত পাঁচছর মানুষের সেবা করেছি। এবারও আমার মাঠ ভালো তাই প্রার্থী হয়েছি। আমি দলের বাইরের কেউ নয়, মনোনয়ন না পেলেও এলাকার মানুষের স্বার্থে আমি প্রার্থী হয়েছি। আমি দলের সাথেই আছি এবং আজীবন থাকব।
যোগাযোগ করা হলে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা বিদ্রোহ করে প্রার্থী হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নেব। বিদ্রোহীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে আমরা সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেব।
তৃতীয় ধাপে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা চারটি ইউনিয়নে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৮ নভেম্বর পাথরঘাটা সদর, চরদুয়ানী, রায়হানপুর ও নাচনাপাড়া এই তিন ইউনিয়নে ভোটগ্রহনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রথমধাপে একই উপজেলার সাত ইউয়িননের মধ্যে কালমেঘা,কাঠালতলী ও কাকচিড়া ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সুত্রঃ আজকের পত্রিকা