অবরোধ শেষ হলেও পাথরঘাটার জেলেদের সমুদ্রযাত্রা অনিশ্চিত
বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত সকল মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননের জন্য ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হয়েছে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উপকুলের জেলেদের সাগরে যাওয়া অনিশ্চিত। এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় জেলেরা।
একদিকে করোনা মহামারী, অপর দিকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় দক্ষিনাঞ্চলের জেলেদের অনেক কষ্ট হয়েছে। বর্তমানে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটসহ অন্যান্য ঘাটে জেলেদের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে অবরোধ শেষ হতেই গভীর সমুদ্রে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। যা শেষ না হলে জেলেরা সাগরে যেতে পারবেন না।
ছোট পাথরঘাটা এলাকার জেলে মনির, বিএডিসি ঘাটের জেলে ইলিয়াস, কালামসহ একাধীক জেলেরা জানান, একদিকে করোনা মহামারী, আর একদিকে সাগরে কম মাছ পাওয়ায় জেলে পরিবারগুলোয় হাহাকার শুরু হয়েছে। গতবছর সাগের মাছ কম পাওয়া গেছে। মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিতে নিতে এখন তারাও শেষ হয়ে গেছে। এ অবরোধের আগে যখর সাগরে যাই তখন মনে হয়েছে মাছের মধ্যে করোনা শুরু হয়েছে, কারণ সাগরে মাছ ছিলো না। এখন আবার শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। এভাবে চলতে থাকলে তাদের ভিক্ষা করা ছারা কোনো উপায় নেই।
আল্লাহর দান ১, ২ ও ৩ নম্বর ট্রলারের মালিক মো: আবুল হোসেন ফরাজী জানান, জৈষ্ঠ মাসের শেষ সময় থেকে শুরু হয় ইলিশ আহরণের মওসুম। যা চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে ৬৫ দিনের মাছ শিকারের সরকারি নিশেধাজ্ঞাও শেষে হয়েছে। এই নিশেধাজ্ঞা পার করা গেলেও সাগরে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ।
তিনি বলেন, আমার তিনটি ট্রলার রয়েছে। এর প্রত্যেকটি ট্রলারে জন্য তার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বাজার করতে হবে। এর আগেও সাগরে জালে ইলিশ ধরা পরেনি। যে টাকা ব্যায় করতে হয়েছে নিশেধাজ্ঞার পরে ইলিশ না পাওয়া গেলে আমার মতো ট্রলারমালিকদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সাগরে শুরু হয়ে নিম্নচাপ। এখন পথে বসা ছাড়া উপায় নেই। সরকার যদি কোনো সহায়তা তাদের না করে তবে এ মৎস্য শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, হঠাৎ এই নিম্নচাপে যারা সাগরে গিয়েছিলেন তারা অনেকেই ফিরে এসেছেন। যারা সাগরে গেছে তাদের দাবি, আর কত দিন মানুষের কাছ থেকে দাদন নিয়ে খাবো?
তিনি আরো জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই আমরা এর বিরোধিতা করেছি এবং বিবেচনা সাপেক্ষে অবরোধের সময় পরিবর্তন করার কথা জানিয়ে আসছি মন্ত্রনালয়কে। এ অবরোধের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছি, কিন্তু ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকলে উপকূলের জেলেরা নিঃস্ব হয়ে যাবে। তার পরেও সরকারি আইন মেনে চলতে হবে তাই জেলেরাও মেনে চলছে। তাছাড়া সরকার যে সহায়তা দেয় তাতে কিছুই হয় না। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই অবরোধের সময়টি আবার বিবেচনায় রেখে এবং পাশের দেশ ভারতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য।