শ্বাশুড়ির করা মিথ্যা মামলায় পুত্রবধু জেল হাজতে বরগুনায় মায়ের মুক্তির দাবীতে দুই শিশু সন্তান রাস্তায়
সাইফুল ইসলাম (রাফিন), বরগুনা
বরগুনা সদর উপজেলাধীন ৫নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের শ্বাশুড়ি আলেয়া বেগমের দেয়া মিথ্যা মামলায় পুত্রবধু অনিতা জামান জেল হাজতে।
অন্যদিকে মায়ের মুক্তির দাবীতে অবস্থান ধর্মঘটে আছেন বড় ছেলে আলিফ (১৩) ও দুগ্ধপোষ্য ছোট ছেলে গালিফ (আড়াই বছর)।
মায়ের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা থেকে উঠবেন না বলে জানিয়েছেন। শনিবার সকাল থেকে বরগুনা টাউনহল চত্ত্বর ও পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।
মামলা সূত্রে জানাযায়, ২০ জুন পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বাশুড়ি বরগুনা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি.আর ৩৪১/২০২১নং মামলা করেন। এ মামলায় দুই ছেলে ও বড় পুত্রবধুকে আসামী করা হয়েছে। এর কিছুদিন পরে শ্বাশুড়ি আলেয়া বেগম দুই ছেলে পুত্রবধু ১৩ বছরের নাতিসহ ৫ জনকে আসামী করে একই আদালতে আরেকটি সি.আর ৩৭৮/২০২১নং মামলা করেন।
মামলায় তিনি দাবী করেন তার বড় পুত্রবধুসহ অন্যান্য আসামীরা মারধর করেন। এদিকে অনুসন্ধান করে জানাযায় দুটি মামলায় তার বড় ছেলে মনিরুজ্জামান জুয়েল গাজীপুরে তার কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। যাহার ডিজিটাল হাজিরা সীট প্রতিবেদকের নিকট রয়েছে। অবস্থান কর্মসূচীতে অসহায় আলিফ দাবী করে সাংবাদিকদের বলেন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অনতিবিলম্বে মায়ের মুক্তি হোক।
সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিচার চাই ও বরগুনা-১ আসনের সাংসদ এ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর, বরগুনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করি। পুত্রবধুকে জেলে পাঠিয়ে শান্ত হননি মামলার বাদী আলেয়া বেগম। তিনি গত শুক্রবার তালা ভেঙে মেয়ে মনিরাকে নিয়ে ঘরে ওঠেন।
স্থাণীয় সূত্রে জানাযায়, বসবাসকৃত ঘরখানা অনিতা জামানের বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে তৈরি করা। মেয়ে মনিরা বেগমের একাধিক বিবাহের পরেও বাবার বাড়িতে থেকে অনৈতিক কর্মকান্ড করে। এর প্রতিবাদ করায় দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধুকেসহ পাড়াপ্রতিবেশীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। ছাড়েনি মাত্র ১৩ বছরে শিশু আলিফকেও। এমন তথ্যই স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে।
তারা আরও জানান, বসতঘরে পুত্রবধু থাকলে শ্বাশুড়ি আলেয়া বেগম ও মেয়ে মনিরা থাকবে না। তাই তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে তারা ঘরের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করেন। অনিতা জামানের বড় ছেলে আলিফ ঘরের তালা ভেঙে ওঠার বিষয়টি জরুরি কল সেন্টার ৯৯৯ এ ফোন করে অভিযোগ করলে বরগুনা সদর থানার কর্তব্যরত এসআই দেবাশীস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কিন্তু ঘরে তালা ভেঙে ওঠার বিষয়টি তেমন গুরুত্বসহকারে আমলে নেননি। কারণ মা ছেলের ঘরে তালা ভেঙে ওঠা কোন অপরাধ নয় বলে জানান।
স্থানীয় যুবলীগ কর্মী ইদ্রিস মৃধা নামে এক ব্যক্তি শিশু সন্তান আলিফের সামনে কারাবরণকারী মা অনিতাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। আলিফের পিতা জুয়েল বাড়িতে আসলে তাকে ঝুলিয়ে মারবে বলেও হুমকি দেন। ঠিক মামলার এ সময়কে কাজে লাগিয়ে মামলা চলাকালীন অবস্থায় তালা ভেঙ্গে ঘরে ওঠার বিষয়টি কতটা যৌক্তিক তা কারোরই বোধগম্য নয়। সহযোহিতা পাবার বদলে শিশু আলিফ পেয়েছে বঞ্চনা। বাদী আলেয়ার কান্নায় বরগুনা পুলিশ সুপারের মন গলে যায়। ফলে শুক্রবার বিকেলে তার বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসেন। যা ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, অসহায় আলিফ সকাল ১০টায় বরগুনা টাউনহল চত্ত্বরে এ অবস্থান কর্মসূচী শুরু করে। তার ফুফুর কথিত স্বামী মোঃ হারুন একাধিকবার ফোনে অসহায় আলিফকে হুমকি দেয়। অবস্থান কর্মসূচী চলাকালীন সময় সুশিল সমাজের ব্যক্তিরা বলেন, আদালতে মামলায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোনে তারা অসহায় এই দুই শিশুর পাশে দাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেননি।
বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনাসহ অনিতা জামানের অচিরেই মুক্তি মিলবে বলে আশা করছেন বরগুনাবাসী। এখন শুধু বরগুনাই নয় বরং গোটা বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে বিজ্ঞ আদালতের রায়ের দিকে।
এ বিষয়ে অনিতা জামানের আইনজীবি এ্যাড. মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন- আমি অনিতা জামানের জামিনের জন্য বিজ্ঞ বরগুনা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছি। ভার্চ্যুয়াল আদালতে রোববার জামিনের শুনানী হবে বলে আশা করছি। আমরা আশা করছি বিজ্ঞ আদালত সন্তুষ্ট সাপেক্ষে জামিন দিবেন। অনিতার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। যেটা হৃদয়বিদারক।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আলেয়া বেগমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে.এম তারিকুল ইসলাম ও বরগুনা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম টিটু নিজ উদ্ধোগে অসহায় বাচ্চাদের খাবার বিতরণ করেন।
তবে এ রিপোর্ট লেখা (৪.৩০) পর্যন্ত বরগুনার কোন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কোন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই অসহায় শিশু দুটির পাশে দাড়াননি।