বরগুনায় চলন্ত বাস থেকে যাত্রী ফেলে দেয়ার অভিযোগ: আহত ৫
আমতলী (বরগুনা): বরগুনার আমতলীতে কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে বাসের সিট চাওয়ার অপরাধে চলন্ত বাস থেকে যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ তোয়া পরিবহন বাসের সুপার ভাইজার মিজান এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় ৫ যাত্রী আহত হয়। আহত হারুন গাজী ও আবদুল মালেককে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ গাড়ীসহ চালক আলমগীর মাতুব্বর (৩২) ও সুপার ভাইজার মিজানকে (৩০) গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০ টায় পটুয়াখালী-কলাপাড়া মহাসড়কের আমতলীর তুলাতলী নামক স্থানে।
জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলা শহরের টাউন জৈনকাঠী গ্রামের হারুন গাজী, তার বেয়াই আবদুল মালেক দু’পরিবারের মহিলা শিশুসহ ১০ জন শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় আমতলী বাস কাউন্টার থেকে তোয়া পরিবহনের বাসে (বি-বাড়িয়া জ ০০-০১) ৯ টি টিকেট কাটে। গাড়ীতে উঠে কাউন্টার থেকে দেয়া সিট খালী না পেয়ে সুপার ভাইজার মিজানকে সিটে বসিয়ে দিতে বলে। মিজান যাত্রীদের সিটে বসিয়ে দেয়ার কথা বলে কালক্ষেপন করতে থাকে।
এক পর্যায় যাত্রী হারুন গাজী ও আবদুল মালেকসহ তাদের লোকজন চালক আলমগীর মাতুব্বর ও সুপার ভাইজার মিজানকে বাস থামিয়ে তাদের নামিয়ে দিতে বলে কিন্তু তারা যাত্রীদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এ নিয়ে ওই যাত্রী ও সুপার ভাইজারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় সুপার ভাইজার মিজান যাত্রী মুন্নির কোল থেকে এক বছরের শিশু ঈশিতাকে টেনে হেঁচরে নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করে অপর যাত্রীরা। পরে সুপার ভাইজার চলন্ত গাড়ী থেকে প্রথমে শারমিন, মুন্নি, মাফুজা, আনোয়ারা, আবদুস ছত্তার, আনেয়ার গাজী ও হাসান মৃধাকে নামিয়ে দেয়। এতে মুন্নি, মাফুজা ও আবদুস ছত্তার আহত হয়। পরে হারুন গাজী ও আবদুল মালেককে চলন্ত গাড়ী থেকে ধাক্কা মেরে সুপার ভাইজার মিজান ফেলে দিয়ে দ্রুত গাড়ী চালিয়ে যায়। এতে হারুন গাজী ও আবদুল মালেক গুরুতর আহত হয়।
স্থানীয় লোকজন আহতদেরকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। গুরুতর আহত হারুন গাজী ও আবদুল মালেককে চিকিৎসা শেষে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। অপর আহতদের চিকিৎসা দেয়া হয়। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ তোয়া পরিবহনের বাস,বাসের চালক আলমগীর মাতুব্বর ও সুপার ভাইজার মিজানকে আমড়াগাছিয়া খানকার সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বাস যাত্রী শাহজাহান, জামাল হোসেন, শিপন ও নজরুল জানান, সিটের জন্য সুপার ভাইজারের সাথে কয়েকজন যাত্রী কথা কাটাকাটি করছিল। এমন সময় সুপার ভাইজার ওই যাত্রীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এক মহিলার কোল থেকে একটি শিশুকে টেনে নিয়ে ফেলে দিতে চেষ্টা করে। এ সময় বাসের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে এক পর্যায় চলন্ত বাস থেকে সুপার ভাইজার চার নারী ও তিন জন পুরুষকে নামিয়ে দেয়। একটু সামনে গিয়ে অপর দুই যাত্রীকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমরা চালককে গাড়ী থামাতে বললেও সে থামায়নি।
আহত হারুন গাজী, আবদুল মালেক, মুন্নী বেগম ও শারমিন জানান, আমতলী বাস কাউন্টার থেকে ৯ টি টিকেট কেটে বাসে উঠে সুপার ভাইজারকে সিট খালী করে দিতে বলি। সিটে না বসিয়ে চালক দ্রুত গাড়ী ছেড়ে দেয়। এ নিয়ে সুপার ভাইজারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় সুপার ভাইজার ক্ষিপ্ত হয়ে মুন্নীর কোল থেকে শিশু ঈশিতাকে টেনে নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। বাসের যাত্রীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে সুপার ভাইজার আমাদেরকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। এতে ছিটকে পরে ৫ জন আহত হয়েছি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ বলেন, আহত হারুন গাজীর কপাল ও মুখমন্ডল থেতলে গেছে ও তিনটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া তার (হারুন) ও আবদুল মালেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
আমতলী থানার এসআই রফিকুল ইসলাম পাইক বলেন, খবর পেয়ে বাসটি, বাসের চালক ও সুপার ভাইজারকে গ্রেফতার করেছি।
পটুয়াখালী বাস ও মিনি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা দুলু মৃধা বলেন, ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হলে সমিতির আইনানুযায়ী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি সহিদ উল্যাহ বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করেছি এবং বাসটি থানায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এন এ এস/পাথরঘাটা নিউজ