বেতাগীতে সকালে ঘরে আগুন, রাতে কুপিয়ে যখম
বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত যুবকের নাম রফিক বিশ্বাস (২৮)। সে সরিষামুড়ি ইউনিয়নের ভোড়া গ্রামের সালাম বিশ্বাসের ছেলে।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রাত ১০ টায় সরিষামুড়ি ইউনিয়নের ভোড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিমে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, ভোড়া এলাকায় ইউপি সদস্য প্রার্থী ফোরকান সিকদারের বাড়িতে কর্মীসভা থেকে ফিরছিলেন রফিক। ওই কর্মীসভা থেকে ফেরার পথে ইউসুফ শরীফের বাড়ির সামনে আসতেই কয়েকজন ব্যক্তি রফিককে কুপিয়ে যখম করে। ওই কর্মীসভায় অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ইউসুফ শরীফের ছেলে আজিম, জয়নাল মেম্বরের ছেলে সোহেল, টিটু মেম্বরসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ইউসুফ শরীফের বিজয়ের বাড়ির সামনে অবস্থান করছিল। রফিক সেখান থেকে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে পাশ্ববর্তি একটি ঘেরে ভেতর নিয়ে কুপিয়ে যখম করা হয়। এসময় ইউসুফ শরীফের নিরাপত্তায় মোতায়েন বেতাগী থানা ও চান্দখালি পুলিশ ফাঁড়ির পাঁচজন পুলিশ সদস্য ওই বাড়িতেই অবস্থান করছিল। চিৎকার শুনে ওই পুলিশ সদস্যরা রফিককে উদ্ধার করে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যান
বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল আবাসিক অফিসার ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার জানান, আহত রফিকের ব্য ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আঘত গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসারজন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভোড়া এলাকার জামাল বিশ্বাস, জয়নাল ও ফয়সাল বিশ্বাস জানান, সকাল দশটার দিকে তাদের ঘরে আগুন দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। জয়নাল বিশ্বাস বলেন, আহত রফিক সম্পর্কে তাদের চাচাত ভাই। সে ঢাকায় একটি কোম্পানীতে চাকরি করে। নবজাতক সন্তানকে দেখতে সপ্তাহখানেসপ্তাহখানেক আগে রফিক বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পরপরই ইউসুফ শরীফের ছেলেরা নির্বাচনে তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করতে বলে। কিন্ত ডাকে সাড়া না দেয়ায় ইউসুফ ও তার ছেলেরা ক্ষুদ্ধ ছিল। এ কারনে সকালে তাদের তিনটি ঘরে আগুন দেয়া হয় এবং রাতে রফিককে কুপিয়ে যখম করা হয়।
ওই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইমাম হোসেন শিপন বলেন, পুলিশি নিরাপত্তায় আমার কর্মী ও সমর্থককে নির্মমভাবে কুপিয়ে যখম করা হয়েছে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে তিনটি ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। ইউসুফ শরীফ ও তার ছেলেরা চারামাস আগে আমাকে কুপিয়ে যখম করেছিল পঙ্গুপ্রায় অবস্থায় আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। জামিন নিয়ে ইউসুফ গং এলাকায় ফিরেই একের পর এক তান্ডব চালাচ্ছে। বেতাগী থানা পুলিশের সামনেই আমার উপর হামলা হয়েছিল। আর আজকে পুলিশ পাহারায় আমার সমর্থককে কোপানো হয়েছে। ইউসুফ ও তার ছেলেদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তার না করলে তারা একের পর এক তান্ডব চালাতেই থাকবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ শরীফের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও তার ছেলে আজীমের নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ আহত অবস্থায় রফিক নামের একজনকে উদ্ধার করে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার প্রসঙ্গে ওসি তপু বলেন, পুলিশ ওই এলাকায় টহলরত থাকলেও ঘটনাস্থল থেকে দূরে ছিল।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের কালিকাবাড়িতেই হামলার শিকার হন বর্তমান চেয়ারম্যান ,জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমাম হাসান শিপন জোমাদ্দার। তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন একই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ শরিফ তার দুই ছেলেসহ সমর্থকরা।
এ ঘটনায় ইউসুফ ও তার দুই ছেলেসহ ১৪ জনকে আসামী করে বেতাগী থানায় মামলা দায়ের হয়। ওইদিনের পর থেকে লাপাত্তা ছিলেন ইউসুফ ও তার পরিবার লাপাত্তা ছিলেন। বুধবার হাইকোর্ট থেকে মামলায় জামিন লাভ করেন এবং গত শুক্রবার এলাকার আসেন ইউসুফ। ওইদিনও ইউসুফ ও শিপন সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন আহত হন।
হামলার শিকার শিপন তিন মাসেরও বেশি ঢাকা জাতীয় অর্থপেডিক্স হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিতসাধীন ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারী তিনি নিজ ইউনিয়ন বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি আসেন এবং দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী প্রকৃয়ায় অংশ নেন।