পাথরঘাটায় প্রথম স্বামীর অপহরণ মামলায় হাইকোর্টে জামিন পেলেন দ্বিতীয় স্বামী
বরগুনার পাথরঘাটার ফাতেমা বেগম নামের এক গৃহবধূর প্রথম স্বামীর করা অপহরণ মামলায় কারা দণ্ডপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্বামী শাহ আলমকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া ২০ বছর কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে শাহ আলমের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ মামলার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ফাতেমা বেগম ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম স্বামী জাকির হোসেনকে তালাক দেন। অতঃপর তিনি শাহ আলমকে বিয়ে করেন। ২০১২ সালের ১০ মে মূল মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি তাদের প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট তাদের দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর অপহরণের দায়ে শাহ আলমকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল এবং আসামির জামিন আবেদন করা হয়। আদালতে শাহ আলমের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো: সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: হাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ আটজন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করে। আসামিপক্ষ দুইজন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করে। তার মধ্যে ফাতেমা বেগম ১ নম্বর সাফাই সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দী দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: হাফিজুর রহমান আসামি শাহ আলমকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
এ ছাড়াও বাকি সাতজন আসামির প্রত্যেককে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
রায়ে বলা হয়, ফাতেমা অপহরণ হননি এবং প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলে ২২ ধারায় যে জবানবন্দী দিয়েছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মনে হচ্ছে, ডিভোর্স না দিয়েই তিনি শাহ আলমের কাছে চলে গেছেন। আইনের চোখে এটা অপরাধ মনে হওয়ায় আসামিকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
এ মামলায় ফাতেমা বরগুনার পাথরঘাটার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ ধারার জবানবন্দীতে বলেন, আমাকে শাহ আলম অপহরণ করেননি। শাহ আলমকে আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। ২০০৭ সালে জাকিরের সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু জাকিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শাহ আলমকে বিয়ে করি। তবে দ্বিতীয় বিয়ের চার-পাঁচ মাস আগে জাকিরকে তালাক দেই। তিনি এখন আর আমার স্বামী নন। আমাকে কেউ অপহরণ করেনি।