পাথরঘাটায় নির্বাচনী সহিংসতা দেড় শতাধিক আসামি করে পুলিশের মামলা
বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় ওসি সহ ২০ পুলিশ সদস্য ও দুজন সাংবাদিক সহ শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দেড়’শ জনকে আসামি করে পাথরঘাটা থানায় মামলা করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল হোসেন সরকার।
তিনি জানান সরকারি কাজে বাধা প্রদান পুলিশের উপর হামলা এবং অস্ত্রের মহড়া দেখিয়ে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানোয় এ মামলা দায়ের করা হয়। এঘটনা ১২ পুলিশ সদস্য প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও ওসি সহ ৮ জনের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা চলছে বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল তার সমর্থকদের নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পাথরঘাটা পৌর শহরে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ উভয় পক্ষকে শান্ত করে দুদিকে সরিয়ে করে দেয়। এর কিছুক্ষন পরেই তালতলা এলাকা থেকে প্রায় ৫ শতাধীক নারী-পুরুষ ‘সোহেল ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ এই স্লোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্র রামদা, রড, জিআর পাইপ ও লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল দিয়ে থানার দিকে অগ্রসর হয়। এসময় পুলিশ কয়েক দফা বাঁধা দিলেও তাদের ইট-পাটকেল, গাছের গুঁড়ি, লাঠি, কাঁচের বোতল, জুতা নিক্ষেপ করে মিছিল নিয়ে এগিয়ে থানার সামনে যায়।
পাথরঘাটা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল হোসেন সরকার জানান, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাথরঘাটা শহরে জিরো পয়েন্টে নৌকা সমর্থনের লোকজন অবস্থান নেয় অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের সমর্থনের পাঁচ শতাধিক সশস্ত্রকর্মী থানার সামনে থেকে শহরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫০ রাউন্ড ফাকাগুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পাথরঘাটা থানার ওসি শাহাবুদ্দিনসহ প্রায় ২০জন পুলিশ এবং দৈনিক আমাদের সময় ও সমকালের দুই সাংবাদিক সহ উভয় পক্ষের শতাধীক আহত হয়। এর আগে তারা বিএফডিসি এলাকায় র্যাবের টহল টিমের গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
তিনি আরো জানান এ সময় যদি পুলিশ কঠোর অবস্থানে না যেতো তাহলে পাথরঘাটায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেত। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর সন্ধ্যায় বিএফডিসি শ্রমিক ঘাট ইউনিয়নে কার্যালয় এবং তার অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ঘর বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। তিনি জানান এসম তার সমর্থকদের কুপিয়ে জখম করেছে নৌকা প্রতীকের লোকজন। তবে ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল গাজী জানান ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল নিজের লোকজনের দ্বারা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে নৌকার সমর্থকদের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে।
পাথরঘাটা উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান সোহাগ জানান নৌকা প্রতীকের আনোয়ার হোসেন আকনের ভাইর ছেলে, নাতি ও আওয়ামীলীগের নেতাদের দাপটে আমরা কোনঠাসা হয়ে আছি। ঘর থেকে বের হতে পারছিনা তাদের হুমকি-ধামকির কারণে।
বর্তমান পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন জানান, ইতিপূর্বে মোস্তাফিজুর সোহেল আমার বেশ কয়েকজন কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে। তারা আমার প্রাণ নাশের জন্য কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ একত্রে হয়ে শহরে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশের সহায়তায় আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।
জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফারজানা সবুর রুমকি জানান, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বিএফডিসি মৎস্য ঘাট থেকে অবৈধ ইনকাম করা কালো টাকার বিনিময়ে বহিরাগত নারী-পুরুষ ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে পাথরঘাটা পৌর নির্বাচনের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চেষ্টা করছে। পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
পাথরঘাটা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আইয়ুব আলী হাওলাদার জানান ৩০ জানুয়ারীর নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য সকল কর্মসূচির প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সাবরিনা সুলতানা পাথরঘাটা নিউজকে জানান, রাজনৈতিক মাঠ যতই উত্তপ্ত থাকুক এর প্রভাব ভোটকেন্দ্রে পড়বে না। কেননা নির্বাচন কমিশনের দেয় নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো জানান আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শহরে ভ্রাম্যমাণ টহল দিচ্ছে। এছাড়া আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) থেকে অতিরিক্ত নয় জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিজিবি মোতায়েন করা হবে পৌরশহরে।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তদন্ত সাঈদ আহমেদ জানান, মামলার এজাহার আসামিদের মধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।