মঠবাড়িয়ায় চাঞ্চল্যকর শিশুসহ তিন হত্যা, ৬ মাসেও গ্রেফতার হয়নি ২ আসামি
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় চাঞ্চল্যকর অটোচালক আয়নাল হক (৩৫), তার স্ত্রী খুকু মনি (২৫) ও তাদের তিন বছরের একমাত্র মেয়ে আশফিয়া হত্যার প্রায় ছয় মাস হলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি পলাতক দুই আসামি। ওলী ওরফে আলী ও তার অজ্ঞাত সহযোগী (নাম জানা যায়নি) গ্রেফতার না হওয়ায় মামলার বাদি ও এলাকারাসী মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য বিদায়ী বছরের ৩০ জুলাই গভীর রাতে উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের অটোচালক আয়নাল, তার স্ত্রী ও মেয়েকে ঘরে ঢুকে হত্যা করেছেন আরেক অটোচালক অলি বিশ্বাস ও তার তিন সহযোগী। হত্যাকাণ্ডের পর আয়নালের ঘরে থাকা টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যান অলি ও তার তিন সহযোগী। এ ব্যাপারে হত্যাকাণ্ডের পরের দিন আয়নালের শ্বশুর আবুল কালাম সর্দার অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলা দায়েরের এক সপ্তাহেও এ হত্যার কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ। পরে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে যৌথভাবে মাঠে নামে ডিবি, পিবিআই ও সিআইডিসহ পুলিশের পাঁচটি বিভাগ। ঘটনার ৯ দিন পর প্রযুক্তির ব্যবহার করে রহস্য উদঘাটন করে থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা বিভাগ।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খাঁনের নির্দেশে থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গত বছরের আট আগস্ট রাতে হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড অলি বিশ্বাসকে (৩৮) সাফা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর অলির দেয়া তথ্য মতে ও তার সহযোগী রাকিবকেও (২০) ওই রাতে ধানীসাফা গ্রামের বসত বাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অলি উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের মৃত তুজাম্বর আলীর বিশ্বাসের ছেলে এবং অপর আসামি রাকিব একই গ্রামের কাওসার বেপারীর ছেলে।
এ দিকে গ্রেফতারকৃত হত্যাকারীরা পুলিশ ও আদালতের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী, অলি বিশ্বাস, রাকিব, আলী ওরফে অলী ও তার এক সহযোগীসহ চারজন সিঁদ কেটে আয়নালের বসত ঘরে ঢুকেন। এ সময় আয়নাল ও তার স্ত্রীকে মারধর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করেন। মালামাল লুট ও মারধরের সময় আয়নাল তাদেরকে চিনে ফেলেন। এ সময় আয়নাল তাদেরকে অনুনয় করে বলেন, ‘অলি তুই মোরে মারিস না, টাকা পয়সা যা আছে তুই নিয়ে যা।’ এ কথা শুনে তারা আরো বেশি ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এদিকে চারজন মিলে তখন আয়নাল, তার স্ত্রী ও মেয়েকে হাত বেঁধে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জুলাই অটোচালক আয়নাল স্থানীয় সাফা বন্দর কৃষি ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে অলি দেখে ফেলেন। এ ছাড়াও অলি জানতে পারেন আয়নাল সম্প্রতি গরু বিক্রি করে টাকা ঘরে রেখেছেন এবং তার স্ত্রী খুকু প্রতিবেশীর ঘরে রাখা কিছু স্বর্ণালংকারও ঘরে রেখেছেন। ওই টাকা ও স্বর্ণ লুট করার জন্য গত ৩০ জুলাই দিনগত গভীর রাতে ধানীসাফা-মঠবাড়িয়া সড়কের পাশে আয়নালের ঘরে অলি ও রাকিবসহ চারজন সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে লুট ও হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
মামলার বাদি আবুল কালাম সর্দার জানান, তার মেয়ে, জামাই ও একমাত্র নাতী হত্যকারীরা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতার করছি করছি বলে দীর্ঘ দিন অতিবাহিত করলেও গ্রেফতার করতে পারছে না।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ জ ম মাসুদুজ্জামান মিলু জানান, পলাতক দুই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করতে পুলিশ অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খাঁন বলেন, ‘একই পরিবারের তিন সদস্যের হত্যাকারী দুই আসামিকে গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ ও পিরোজপুর জেলা ডিবি পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশাকরি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পলাতক দুই আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’