কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর জবি শিক্ষার্থীর খোলা চিঠি

নোমান আল সাকিব
নোমান আল সাকিব, ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ পিএম, ২৩ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০৩:৩০ এএম, ৯ এপ্রিল ২০১৮

ছবি: জেসমিন আক্তার
কোটা সংস্কার নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন বরগুনা জেলাধীন পাথরঘাটা উপজেলার সন্তান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার।নিচে হুবাহু তার খোলা চিঠি তুলে ধরা হলো-

খোলা চিঠির মাধ্যমে মুক্ত করলাম কোটা সংস্কার শীর্ষক ৪০ লক্ষ বেকারের আর্তনাদের অভিব্যক্তি !!

মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
২২/৩/২০১৮ ইং

হে মানবতার জননী,
আসসালামু আলাইকুম….
কেন শুধু আপনাকেই লিখতে শুরু করলাম এই নিশ্চিত গন্তব্যহীন খোলা চিঠিটি ????

পাঠক সম্প্রদায়ের উত্তর, ” স্বাভাবিক, কারণ সে যে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার প্রধান। ”

কিন্তু আমার প্রতিউত্তর, “না”। আপনাকে চিঠি লিখতেছি কারণ আপনি বাঙালি জাতির জনক,বঙ্গবন্ধু “শেখ মুজিবুর রহমান ” এর কন্যা ও সুযোগ্য উত্তরসূরি।বিগত স্বাধীনতার ৪৭ বছরে আপনি ছাড়াও বেশ
কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সরকার পরিচালনা করেছেন এবং যতদিন বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকাবাহী অখণ্ড দেশটি সগর্বে অবস্থান করবে ততদিনে আরও অনেক প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত প্রধানমন্ত্রী আসবেন। কিন্তু আপনি ব্যতীত আর ২য় কোন প্রধানমন্ত্রী নেই এবং আসবে না যার বঙ্গবন্ধু কন্যা হওয়ার পরম সৌভাগ্য আছে, যার রক্তে বইছে বৈষম্যহীন গনতন্ত্রের আদর্শ।
কারণ শহীদ সাহেবকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ” ১৯৪২ সালে নাজিমুদ্দিন সাহেব প্রধানমন্ত্রী হয়ে নিজের ভাইকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন।আবার তার বংশ থেকে ১১ জনকে MLA বানিয়েছিলেন।এদেশে আর কোন লোক ছিল না? মুসলিম লীগে আমরা কোন কোটারী করতে দেব না।”-অসমাপ্ত আত্মজীবনী ( পৃষ্ঠা নং :৪২)।

হে দেশরত্ন শেখ হাসিনা,
শপথ বাক্য পাঠের পর যেকোন সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিই প্রধানমন্ত্রী হয় কিন্তু সফল সরকার প্রধান ক’জন হয়? নিঃসন্দেহ যারা শপথ বাক্যের আদর্শকে সমুন্নত রেখে দেশ পরিচালনা করেন।এখন পর্যন্ত আপনি একজন সফল প্রধানমন্ত্রী। আপনাকে যত প্রসারিত বিশেষনণেই বিশেষায়িত করে শব্দভাণ্ডার ফুরিয়ে ফেলি না কেন আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা অপরিমেয়।আপনার অর্জিত সেই সফলতার সূত্রানুসারেই এই আপনাদের প্রতি আমার এই অনাকাঙ্ক্ষিত চিঠি লেখার অনুপ্রেরণা। তার কাছেই আবদার করে মানুষ যে আবদার পূর্ণ করার যোগ্যতা ও সামর্থ্য রাখে।

হে শ্রদ্ধাভাজন বিদ্যানন্দিনী,
কোথায় এই খোলা চিঠিটার যৌক্তিকতা নিহিত?

“কয়েকজন যোগ্য লোকের মৃত্যুতে একটি দেশের যে ক্ষতি হহয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতি হয় যখন একজন অযোগ্য ব্যক্তি ক্ষমতায় আসে।”-মাওলানা রূমী

বাংলাদেশের বর্তমান প্রচলিত কোটা ব্যবস্থা যেন ১০০ টি কমলার ৫৬ টি কমলাকে ২ জনকে বিতরণ শেষে অবশিষ্ট ৪৪ টি কমলা ৯৮ জন প্রার্থীর মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে সন্তুষ্ট করার বৃথা চেষ্টা।
যখন একজন মানুষ দেখতে পেল অন্য কাউকে কোটায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে, মেধাবীরা সেখানে অনুধাবন করলো দেশের ১০ বছর পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। যখন একজন তুলনামূলক কম যোগ্য লোক প্রকৃত মেধাবীদের নিয়ন্ত্রণ করার আলাদিনে চেরাগ হাতে পায় তখন দেশের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করে অস্বচ্ছতা এবং অর্থ আর ক্ষমতা লিপ্সু সংকীর্ণমনা বসন্তের কোকিলদের সংখ্যা ও বাড়তে থাকে ক্রমবর্ধমান হারে।

হে ১৭ কোটি বাঙালির অভিভাবক,
আপনি যদি কোন স্থাবর উন্নয়ন (উড়ালসেতু) করে দেশবাসীর প্রতি কর্তব্য পালন করেন তবে সেটা হবে সাময়িক ও নির্দিষ্ট সময়সীমা ব্যাপী উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়নে দরকার জনসংখ্যাকে জনসম্পদের রুপান্তর করা যার পরিক্রমায় দেশ অদূর ভবিষ্যতে উন্নত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর সাথে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।যার জন্য প্রয়োজন কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে মেধা প্রতিষ্ঠার বাধা দূর করা। যদি এমনটি আগেই বাস্তবায়িত হত তবে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় করে বাংলাদেশ সফর করতে ” রোবট সোফিয়া ” কে আনতে হত না বরং বাংলার অদম্য মেধাবীরা সোফিয়াকে সপরিবারে আবিষ্কার করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করতে সাহায্য করত।

হে মাননীয় সরকার প্রধান,
যেখানে আপনি বিশ্ব- আলোচিত রোহিঙ্গা সংকটে প্বার্শবর্তী দেশ মায়ানমারের প্রায় ১০ লক্ষাধিক আধিবাসীদের পুনর্বাসন করেছেন সেখানে আপনার পিতার আমৃত্যু স্বপ্নের সোনার বাংলায় যুবকদের আর্তনাদের বুলি” আমরা স্বদেশী রোহিঙ্গা, হয় আমাদের ৪০ লক্ষ বেকারদের মেধার যথার্থ মূল্যায়নের পরে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেন না হয় ৪০ লক্ষ ভিসা ও পাসপোর্ট সরবরাহ সহজলভ্য করে বিদেশে কূটনৈতিক খাতিরে আমাদের মেধা পাচার করে দেন।অন্তত বিশ্ব মেধার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে উপকৃত হোক”।প্রতিবছর অসংখ্য মেধাবীরা উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গিয়ে আর দেশে প্রত্যাবর্তন করছে না। এতে দেশ মেধাশূণ্য হয়ে পড়ছে ক্রমশ। ২০১৭-১৮ সালে প্রশ্ন পত্র ফাঁসে মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা কী হেয় হয় নি?

হে মমতাময়ী মা,
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাটি এমন দীর্ঘমেয়াদী যেখানে শিক্ষা জীবনের অবসান হতে বার্ধক্যের ছাপ এনে দেয় অনেক ক্ষেত্রে, হারাতে থাকে উদ্বোধনী শক্তি বয়স পৌঁছে যায় ২৬ এর কোঠায়।তারপরে যদি থাকে স্বৈরাচারী পাক-আমলের ন্যায় আকাশ পাতাল ব্যবধানের কোটা বৈষম্য তাহলে তাদের শেষ গন্তব্য কতদূর?

হে বিশ্বশান্তির অগ্রদূত,
আপনাকে একজন স্বশিক্ষিত নারী, মা ও সুনাগরিক হিসেবে আমি অনুধাবন করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আকড়ে ধরেছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা আর মীর জাফর বাহিনীর পদচারনার স্থান,সময় সব একই ছিল পার্থক্য ছিল মনুষ্যত্ববোধে। আপনার চারপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের হস্তক্ষেপ ছাড়া কার হিম্মতে প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করে আবার সেই সনদ ব্যবহার করে চাকরি ও দিচ্ছে?? আজকের এই ঘৃন্য মুক্তিযোদ্ধা সনদ আদান -প্রদান বানিজ্যের জন্যই কী সে দিন জাতির পিতার নির্দেশনায় ৭.৫ কোটি বাঙালির একাত্মতায় হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ??
কত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যে শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত জীবন যাপন করেছেন…… কাল চশমা ধারীরা কেউ নিয়েছে তাদের খোজ? আজ কত সুবিধাবাদী নব্য চেতনাধারীর বিস্তার এ দেশব্যাপী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

এই কোটা সংস্কার থেকে আমার কতটুকু উপকার??
বর্তমান প্রচলিত কোটা বিন্যাস আনুযায়ী,
( নারী কোটা ১০% + জেলা কোটা ১০%) =২০% কোটা আমার আছে।
গর্বের বিষয় ইতিমধ্যেই অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার কোটা সংস্কার প্রসংগে জোরালো সমর্থন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বক্তব্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি ৫% করে দিন তবে এই নারী কোটা আর জেলা কোটা। না হয় অটুট থাকুক মায়ের মুখের বুলি (৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা), কারণ সন্তান যে মায়ের প্রতি সম্মানে বিসর্জন দিতে রাজি।

হে বিশ্বশান্তির অগ্রদূত,
আমার উপর্যুক্ত লেখনীর প্রবাহে আমি খুব রাতারাতি আমার অজ্ঞাতে “রাজাকার পরিবারের শিবির কর্মী ” এই উপাধিলাভ করতে পারি।তাই আমার পরিচয় দিতে হলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

আমি জেসমিন আক্তার

১)ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদিকা, পাথরঘাটা ডিগ্রী কলেজ (২০১২-২০১৪)
২)সহ-সম্পাদক,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ (২০১৭)
৩)যুগ্ম -আহ্বায়ক, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রীহল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৭)

উপরের পদবীগূলো আমার তেমন চাহিদা ছাড়াই স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতবৃন্দ দিয়েছিলেন আমার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে সেটা অবশ্যই রাজনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে। নেত্রী তো দূরের কথা একজন রাজনৈতিক আদর্শিক ক্ষুদ্র কর্মী হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই বলে আমি মনে করি।
তবে আমৃত্যু আমি জাতির জনকের আদর্শিক অনুসারী থাকব এটাই আমার ব্রত।

বিদ্র: যে দিন আমি “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” পাঠ শেষ করেছি সে দিন শপথ নিয়েছি বাংলার মাটি ছেড়ে কোথাও যাব না শেষ দিনটি পর্যন্ত।

এন এ এস/পাথরঘাটা নিউজ/২৩ মার্চ ২০১৮

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)