খেলার মাঠে বিচারপ্রার্থীরা, স্কুল কক্ষে চলছে বিচারকার্য পাথরঘাটায় একযুগ ধরে নেই চৌকি আদালত ভবন
মোহাম্মদ কাজী রাকিব, পাথরঘাটা(বরগুনা). বরগুনার পাথরঘাটায় একযুগ ধরে নেই চৌকি আদালত ভবন। ঝুকি নিয়ে ভাড়া করা ভাংঙ্গাচুড়া স্কুল ভবনের কক্ষে চলছে বিচার কার্য। যে কোন সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পাড়ে বিচারকসহ আইনজীবিরা। নিজস্ব ভবন না থাকার ফলে ঝড়বাদলের দিনে বিচার প্রাথীরা নানা বিরম্বনার স্বীকার হচ্ছে। জরুরী বিত্তিতে একটি আদালত ভবনের দাবী জানিয়েছেন আইনজীবিরা।
পাথরঘাটার সিনিয়র আইনজীবি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, উপকূলীয় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা নদীবেষ্টিত এলাকা। ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে সারাদেশে প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে নির্বাহী মেজিষ্ট্রেট আদালত গঠন করা হয়। এই নির্বাহী বিচার আদালত আইন মন্ত্রনালয়ের আওতায় জুডিশিয়াল বিভাগে পৃথক করার পর অনেক উপজেলা থেকে কিছু আদালত উঠিয়ে নেয়া হলেও পাথরঘাটা জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট আদালতটি জরুরী হিসাবে এই আদালতটি চালু রাখা হয়েছে। প্রথমে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের মধ্যে এই আদালতের নিজেস্ব ভবন ছিল। ২০০৮ সালে ভবনটি ব্যাবহারে অযোগ্য হয়ে পড়ায় ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে সরকার। তারপরও কয়েক বছর বিচার কার্য পরিচালনা করা হয় পরিত্যক্ত ভবনে। পরে ২০১৪ সালে মার্চ মাসে পাথরঘাটা সরকারি কেএম পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি স্কুল ভবন ভাড়া নিয়ে সেখানে আদালতের কার্যক্রম চলছে। চলমান স্কুল ভবন আদালতের ছাদের প্লাস্তারাল খসে পড়ায় ঝুকি নিয়ে চলছে বিচার কার্য।
পাথরঘাটা আইনজীবি অফিসের সভাপতি মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, বর্তমান ভাড়া করা ভবনটিতে তাদের বসার মতো একটি কক্ষ নেই। ল’চেম্বার থেকে এসে দাড়িয়ে কোর্ট করে আবার ল’চেম্বারে চলে যেতে হয়। এখানে নেই কোন সৌচাঘারের ব্যাবস্থা। তাদের বিচারপ্রার্থীরা এসে স্কুলের খেলার মাঠে দাড়িয়ে থাকতে হয়। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পরে অফিসের দরকারি কাগজপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এখানে আসামিদের রাখার জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আদালতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা জানান, খোলা মাঠের পাশে স্কুল শেটের আদালত ভবনে তাদের বিশ্রাম নেওয়ার কোনো ব্যাবস্থা নেই। যেখানে দিনের বেলায় মহরী দের আনাগোনা থাকে সেখানেই তাদের রাত্রি যাপন করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিচারকের আবাস স্থল কোর্ট থেকে এক কিলোমিটার দুরে একটি ভাড়া করা বাসভবন। সেখান থেকে কোর্টে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার অভাব। বিচারকের বাসভবনসহ আদালতের অফিস ভবন এখন অতি জরুরী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাথরঘাটা সরকারি কেএম পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর আলম জানান, পাথরঘাটা জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট আদালতের কাছে প্রথমে এক বছরের চুক্তিতে আমাদের স্কুলের একটি ভবন ভাড়া দিয়েছিলাম। এতে করে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। কোর্ট চলাকালিন সময় প্রতিদিন পুলিশ আসামীদের হাতকড়া দিয়ে বেধে কোর্টে নিয়ে আসে। এসময় স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দেখে ভয় আতংকিত হচ্ছে। এতে করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব পরছে বলে জানান তিনি।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন জানান, পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট কোর্টের একটি ভবন বরাদ্ধের জন্য আমি চেষ্টা করছি। একনেকে পাশ হলেই ভবনটি নির্মান করা হবে।