সুন্দরবনের নদী ও খাল থেকে অবাধে পারশে পোনা নিধন

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০৭:৪৭ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

---

সুন্দরবনসহ আশপাশের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে চলছে পারশে মাছের পোনা নিধন। মৎস্য প্রজনন এলাকা বা নিষিদ্ধ বনাঞ্চল ও বনের বিভিন্ন নদ-নদীতে জাল দিয়ে পোনা ধরতে গিয়ে শতাধিক প্রজাতির জলজ সম্পদ নষ্ট করারও অভিযোগ উঠেছে।

কোস্টগার্ড সদস্যরা ১৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীতে অভিযান চালিয়ে পাঁচ লাখ পারশে পোনা ও জালসহ চন্নু শেখ নামে এক জেলেকে আটক করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোনা নিধনকারীরা প্রথমে সাদা মাছ পরিবহনের জন্য ট্রলারের অনুমতি নেয়। এরপর সাদা মাছ আহরণের বদলে তারা সুন্দরবনের আলোরকোল, দুবলার চর, বাটলুরচর, ছাচানাংলা, পশুর, আগুন জ্বালা, কালিরচর, গেড়া চালকি, বজবজা, হংসরাজ, আন্দারমানিক, ঢাংমারী, ছিচখালী ও মজ্জত নদী থেকে বিপুল পরিমাণ পারশে মাছের পোনা আহরণ করে। এক্ষেত্রে মনো ফিলামেন্ট নেট ব্যবহার করায় পারশে পোনাসহ নিধন হচ্ছে বাগদা, গলদা ও বিভিন্ন প্রজাতি মাছের পোনা।

পশুর নদ ওয়াটারকিপারের (সুন্দরবনকেন্দ্রিক পেশাজীবী সংগঠক) সমন্বয়কারী মো. নুর আলম শেখ জানান, একশ্রেণির মহাজন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে গরিব জেলেদের হাজার হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে পোনা নিধনের জন্য সুন্দরবনে পাঠায়। গোপন চুক্তিতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এতে সহযোগিতা করছে কতিপয় বন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পূর্ব সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কাশেম।

তিনি দাবি করেন, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে এ পোনা নিধন করছে।

পূর্ব সুন্দরবনের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শাহীন কবির বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে সব ধরনের মাছের পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জেলেরা বন বিভাগের অফিস থেকে সাদা মাছের পারমিট নিয়ে অবাধে পোনা নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্ষুদ্র নেট দিয়ে ছাঁকনির মাধ্যমে পোনা আহরণের ফলে শুধু পারশে পোনা ধ্বংস হচ্ছে না, সমুদ্রের হাজার হাজার প্রজাতির জলজপ্রাণিও ধ্বংস হচ্ছে। তাছাড়া পারশে পোনা অন্যান্য প্রজাতির পোনার চেয়ে নরম প্রকৃতির হওয়ায় নেট জাল থেকে অন্য পাত্রে রাখার সময় অর্ধেকের বেশি মারা যায়।’

তিনি বলেন, ‘অবৈধ পোনা শিকারিদের আটকে বন বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে জাল।’

পরিবেশবিদ ড. মিজানুর রহমান জানান, এভাবে পোনা শিকার করায় সুন্দরবনের জলজসম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ কমে দেশে আমিষের ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মিনারুল হক বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে বিভিন্ন এলাকায় পারশে মাছের পোনা ধরার খবরে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ১৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের সন্ধ্যা নদীতে অভিযান চালিয়ে পোনা, জালসহ চন্নু শেখ নামে এক জেলেকে আটক করা হয়।

তিনি জানান, গত ১০ জানুয়ারি থেকে কোস্টগার্ড জাটকা রক্ষা অভিযান পরিচালনা করছে। কোস্টগার্ডের আওতাভুক্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মা ইলিশ ও জাটকা নিধন রোধে কোস্টগার্ড জিরো ট্রলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে।

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২৪ ফেব্রুয়ারি

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)