বিশ্ব মৎস্য দিবস মৎস্যজীবী ও মৎস্যখাতের উন্নয়ন কার্যকর সময়ের দাবি
বাংলাদেশে অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের অবদান প্রশংসনীয়। এতে যে জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ঝড়-তুফান ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সমুদ্রে মাছ ধরে দেশের অর্থনিতির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মানুষের আমিষ জোগান। সেই জেলেদের জীবন কীভাবে কাটে, সেটি আমাদের নীতিনির্ধারকেরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে ভাবেন বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস’র গবেষণায় উঠে সমুদ্রগামী জেলেদের জীবনের দুরবস্থার কথা উঠে এসেছে।
তাদের গবেষণায় মৎস্য পেশার সাথে যারা সরাসরি সম্পৃক্ত, তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করে অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলেরা সাগরে নিহত বা আহত হলেও পাচ্ছেনা কোন ক্ষতিপুরন।
মৎস্যশ্রমিকদের সুরক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা স্কিম চালু করা, মৎস্যজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষন কর্মসুচি গ্রহণ, ট্রলারে নিরাপত্তা সামগ্রী, জেলেদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, মৎস্য শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে মৎস্যখাতে সম্পৃক্ত অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণ, জেলেদের আইনী সহায়তার জন্য উপকুলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ থানা ঘোষনা, জেলেদের জন্য কল্যান তহবিল, মৎস্যজীবীদের জন্য আলাদা ব্যাংক, সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ভারতের সাথে এক সঙ্গে দেয়া, দুর্যোগে সাগরে জেলেদের উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার, সাগরে ভাসমান হাসপাতাল দেয়া, সকল ট্রলারের নিবন্ধন নিশ্চিত করা, সাগরে যাওয়ার সময় জেলেদের তালিকা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করাসহ ৪৬টি সুপারিশ মালা ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে একটি গবেষনা পত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস’র রেজুয়ানুল হক আজম।
২১ নভেম্বর বিশ্ব মৎস্য দিবস উপলক্ষে বরগুনার পাথরঘাটায় ‘প্রান্তিক মৎস্যজীবী ও মৎস্যখাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যকর সমন্বয়’শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভায় এগুলো তুলে ধরেন তিনি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ডেনিশ ইনম্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটের অর্থায়নে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস’র বাস্তবায়নে পাথরঘাটা কে.এম. পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে দিনব্যাপি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বহির্বিশ্বে জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সেদেশের সরকার যথেষ্ট পরিমাণে উপকরণ সরবরাহ সহ জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঘাটতি দিয়ে হলেও স্বল্পমূল্যে জেলেদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৪–৫ গুণ বাড়লেও জেলেদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। সামগ্রিকভাবে জেলেরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যাঁরা সমুদ্রে মাছ ধরেন, তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয়। অনেকের স্থায়ী ঘরবাড়িও নেই। কোনোভাবে সরকারি জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। এর মধ্যে যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন তাদের পরিবারের অবস্থা হয় পরে শোচনীয়। এর থেকে উঠে আসতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমারর অপুর সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন, পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, পাথরঘাটা পৌর প্যানেল মেয়র রোকনুজ্জামান রুকু, বিলস’র প্রোগ্রাম উন্নযন কর্মকর্তা রেজুয়ানুল হক আজম, বরিশাল আঞ্চলিক সমন্বয়কারি জাকির হোসেন, পাথরঘাটা সমন্বয়কারি আউয়াল হোসেন খলিফা, জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নজমুল হক সেলিম, মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ, আমিন সোহেল, শফিকুল ইসলাম খোকন, জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন প্রমুখ।