কুয়াকাটা-পাথরঘাটা ইয়াবার রুটে অস্ত্রের চালান
বরগুনার পাথরঘাটা মাদকের অন্যতম প্রধান রুট হিসেবে পরিচিত। ওই এলাকার জল কিংবা স্থল উভয় পথই মাদককারবারিদের নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন সময় র্যাব-পুলিশ অভিযান চালিয়ে গুটিকয়েক জনকে গ্রেপ্তার করলেও বড় কারবারিরা ধরাছোঁয়ার থাকে বাইরে। আবার যারা ধরা পড়ে তারা সবাই খুচরা বিক্রেতা, নিজেরা ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু সংগ্রহ করে এলাকায় বিক্রি করে। তবে এই রুটে গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতে অস্ত্রের একটি চালান আটক হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মাহমুদ সাব্বির বলেন, ‘মাদকব্যবসায়ীরা অপকর্ম চালাতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে। তাই জলসীমা জলদস্যুমুক্ত রাখার পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। তবে এ রুটে অস্ত্রের চালান আটক হওয়ায় নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলছে আমাদের।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বরগুনার বিভিন্ন পয়েন্টে মাদক বিক্রি হয়। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই মাদকে সয়লাব। এর মধ্যে তালতলী উপজেলার ফকিরহাট, শুভসন্ধ্যা, নিদ্রা, বরগুনা সদরের বালিয়াতলী, নিশানবাড়িয়া, গোড়াপদ্মা, ছুনবুনিয়া, সোনাতলা, নলী; পাথরঘাটার বিএফডিসি, কালমেঘা, চরদুয়ানী, কাঁঠালতলী, পদ্মা, রুহিতা ও জিনতলাসহ বিভিন্ন এলাকার চারদিকে নদী থাকায় যে কোনো পয়েন্টে ট্রলার থামিয়ে চোরাকারবারিরা মাদকের চালান খালাস করে। এ ছাড়া সমুদ্র উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর প্রধান মাদকের রুট হিসেবে এখন চিহ্নিত কলাপাড়া ও কুয়াকাটা। দ্বিতীয় রুটটি হচ্ছে গলাচিপা উপজেলার রাঙ্গাবাড়ী। বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে এসব এলাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রলারে আসে ইয়াবার চালান। গত বছর কুয়াকাটা রুটেই সাগরপথে আসা প্রায় ৫ লাখ ইয়াবার একটি বিরাট চালান আটক করেছিল কোস্টগার্ড। সেই একই রুটে গতকাল দক্ষিণ স্টেশন কোস্টগার্ড পটুয়াখালীর কলাপাড়া এলাকা থেকে আসা একটি অস্ত্রের চালান আটক করে।
পাথরঘাটা দক্ষিণ ভোলা স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মেহেদী জানান, একদল অস্ত্র কারবারি অস্ত্র নিয়ে উপকূলের দিকে আসছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত সোমবার রাতে অভিযান শুরু করে কোস্টগার্ডের দুটি ইউনিট। রাত সাড়ে ৩টার দিকে সন্দেহ হওয়ায় একটি দ্রুতগামী মাছ ধরার ট্রলারকে ধাওয়া দেয় কোস্টগার্ড। এ সময় চালক দ্রুতগতিতে ট্রলারটির রুট পরিবর্তন করে পাথরঘাটার লালদিয়ার চরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করে। সেটিকে থামাতে কোস্টগার্ড সদস্যরা ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে ট্রলারটি লালদিয়ার চরে উঠিয়ে বনের মধ্যে পালিয়ে যায় অস্ত্র কারবারিরা। পরে তল্লাশি চালিয়ে ট্রালারে মাছ রাখার ককশিটের ভেতর থেকে ২১টি অস্ত্র ও ১১টি রামদা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি রিভলবার, ছয়টি পিস্তল এবং ১৪টি একনলা বন্দুক ছিল। এ ঘটনায় ট্রলারটি জব্দ করা হলেও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান মেহেদী।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, কোনোমতে জল থেকে স্থলে উঠিয়ে নিতে পারলেই নানা ধরনের যানবাহন ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ কৌশলে পাচার হয়ে যায় ইয়াবা। তবে অস্ত্রের চালানটি স্থলে ওঠার আগেই জব্দ করা হয়। পাথরঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) সাইদ জানান, উদ্ধারকৃত অস্ত্র থানায় জব্দ তালিকায় জমা দিয়েছে কোস্টগার্ড। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হবে।