পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচন
বরগুনার পাথরঘাটার পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯০ সালে। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরে কয়েক দফা নগরপিতার পরিবর্তন হলেও পৌরবাসীর ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন ও আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি এই শহরের। ২য় শ্রেনীর এই পৌরসভাটি সাগর তীরবর্তী হওয়ায় প্রতিটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে এই পৌরশহরে। কয়েক কিলোমিটার স্থান রয়েছে বিষখালী নদীর তীরে যা প্রতিদিন ভাঙছে আর পৌরবাসীকে আতঙ্কে রাখছে। একইসঙ্গে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা লোকজন বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় তলিয়ে যায় পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা। পৌরসভার ৪০ ভাগ রাস্তা এখনও কাঁচা রয়েছে। সাগরের কাছে হওয়ায় নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। তাই ১৭ কিলোমিটার দূর থেকে খাবার পানি সরবরাহ করা হয় যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এমনকি পৌরসভার নিজস্ব ভবন না থাকায় পাবলিক লাইব্রেরিকে পৌরভবন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পৌরবাসী এখানে এসে বসতেও পারে না জায়গা সংকুলানের অভাবে। নেই ২৫ হাজার নাগরিকের শহরে গাড়ি রাখার মতো নিজস্ব কোনও স্ট্যান্ড।
এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে মল্লিক মোহাম্মদ আইউব ও আনোয়ার হোসেন আকনই রাজত্ব করেছেন এই পৌরশহরের। তবে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে এই প্রবীন দুই মেয়রের স্থান দখল করতে নতুনরা নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন পৌরসভাবাসীকে। তারা চাচ্ছেন অগোছালো শহরকে একটি পরিচ্ছন্ন শহরে ফিরিয়ে আনতে।
গত মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের এক সভায় নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ইসি সচিবালয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ইসির পক্ষ থেকে সারাদেশের নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান আইনানুযায়ী মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ও কাউন্সিলর এবং নারী কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রতীকে ভোট হবে।
এ নির্বাচন ঘিরে মাঠে চোখে পড়ার মতো প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। কারণ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেন মেয়র প্রার্থীরা। এবারও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে নামার আগে দলীয় মনোনয়ন লাভের লড়াইয়ে নামতে হবে। যার লোভিং শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন। এদের অনেকেই দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের মাঠে থেকে তারা ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবেন।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বাড়ানোসহ কারোনাকালে স্থানীয় লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করে পৌরবাসীর মনে স্থান পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা নির্বাচন সামনে রেখে একান্ত বৈঠক করেছেন পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে। বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা অসহায়দের মাঝে বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তেমনিভাবে সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মাঠে কাজ করছেন। সবার লক্ষ্য একটাই- আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া। এই পৌর নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মাঝে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে প্রার্থী যে দলের হোকনা কেন যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে পৌরবাসী আর ভুল করবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আইউব আলী হাওলাদার জানান, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাথরঘাটা পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। তবে তারা ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে এই নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্ভব্য প্রাথী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান মেয়র, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আকন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাবির হোসেন, যুবলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। এবং বিএনপির থেকে সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মল্লিক মোহাম্মদ আইউব, কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান, পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাহাবুদ্দিন সাকু, এডভোকেট মনিরুজ্জামানের নাম শোনা যাচ্ছে।