মঠবাড়িয়ায় শিক্ষক পিতার মৃত্যুর পর ছেলে প্রতিবন্ধী সেজে পেনশনের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শিক্ষক পিতার মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ভুয়া শ্রবণ প্রতিবন্ধীর কাগজ তৈরি করে পেনশন ভাতা চালু করে লাখ লাখ সরকারী টাকা আত্মসাৎ করার প্রমান পাওয়া গেছে। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ হওয়ায় সংশিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে তদন্তে এলে ভূয়া জাল জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের প্রমান পান।
এদিকে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাত করার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে এবং ওই টাকা আত্মসাৎকারী পুত্র লোকলজ্জার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ৯নং সাপলেজা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড চড়কগাছিয়া গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মৃত লেহাজ উদ্দিন মাস্টারের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী জবেদা খাতুন স্বামীর পেনশন ভোগ করে আসছিলেন। মা সাত সন্তানের জননী জবেদা খাতুনেরও মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মোঃ শহীদ হাওলাদার অন্যান্য ৮ ওয়ারিশ গনকে না জানিয়ে গোপনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করে শ্রবন প্রতিবন্ধীর ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে অফিসে জমা দেন। পরে পেনশনভোগী পিতার মৃত্যুয়ান্তে পরবর্তী ভোগকারী মায়ের মৃত্যুর পর বিগত ২০১২ ইং সাল থেকে উক্ত পেনশন ভাতার প্রায় ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে।
একটি সূত্র জানায়, সরকারি চাকুরিজীবীর কোন সন্তান প্রতিবন্ধী থাকলে ওই সন্তান পেনশন ভাতা উত্তোলন ও ভোগ করতে পারবেন বলে এ নিয়ম জেনে শারিরিক ভাবে সুস্থ শহিদ এ প্রতারণার আশ্রয় নেন।
সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত পিতার পেনশন ভাতা ভোগ করতে চাওয়া সন্তান অর্থাৎ আবেদনকারী প্রতিবন্ধী কিনা এজন্য ডাক্তারি সনদ প্রয়োজন হয়। এরপর অনলাইনে এন্ট্রি দেওয়ার পর একটি পরিচয় পত্রের প্রিন্ট কপি বের করতে হয়। উক্ত পরিচয় পত্র অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সমাজসেবার মাঠকর্মী ওই আবেদনকারীর নাম রেজিস্টার বইতে এন্ট্রি করেন। এন্ট্রি করার পর সমাজকর্মী পরিচয়পত্রটি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর ডাক্তারী সনদ দেখে তিনি পরিচয়পত্রটিতে স্বাক্ষর করার নিয়ম।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, এ বিষয়টি আমি এ কর্মস্থলে যোগদানের।তারপরেও প্রতিবন্ধীর বিষয়টি ডাক্তারী সনদের ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসক ওই ব্যক্তিককে প্রতিবন্ধী হিসেবে সনদ দেয়ায় তার নামে প্রতিবন্ধী কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, এ জালিয়াতির সাথে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের জুনিয়র অডিট অফিসার মজিবর রহমান প্রাথমিক শিক্ষা ও সমাজসেবা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারী জড়িত রয়েছে। উক্ত শহিদ এদেরকে মাসোয়ারা দিয়ে ভাতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
যদিও বিষয়টি উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মরত অডিট অফিসার মজিবর রহমান এ জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সরেজমিনে চড়কগাছিয়া গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, শহীদ একজন ধুরন্দার প্রকৃতির লোক। জাল জালিয়াতি করে বিভিন্ন দপ্তর থেকে সরকারী টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করাই তার নেশা।
স্থানীয় মাসুদ খলিফা জানান, তার পিতা সমবায়ের অডিট অফিসার নুরুজ্জামান ওরফে রত্তন খলিফা অবসরে যাওয়ার পর তিনি নিয়মিত পেনশন ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু তার বাবর মৃত্যুর পর প্রতিবেশী শহীদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করে তার মা রাবেয়া বেগমের নামে পেনশন ভাতা চালু করে। এককালীন ৫লাখ ২৮হাজার টাকা পেলে ওই প্রাপ্য টাকার ২লাখ ৫০হাজার টাকা শহীদকে অফিস খরচ বাবদ দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মোঃ ফিরোজ মিয়া বলেন, ওই শহীদ সাপলেজা ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম মৃত্যুর পর তার পুত্র রুহুল আমীন মোল্লা ও শিক্ষক ঠাকুর চাঁদ মিস্ত্রীর পুত্র মিহির রঞ্জন মিস্ত্রিকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে পেনশন চালুর তদবির করে। পরে কাগজপত্র সঠিক না থাকায় তা ফেরত দেয়া হয়।
সাপলেজা ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজ মিয়া অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মৃত লেহাজ উদ্দিন মাস্টারের পুত্র শহিদ প্রতিবন্ধী নন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শহীদ হাওলাদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ বজলুর রশিদ জানান, বরিশাল ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস অফিসে অভিযোগের পর মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন নামের একজন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মি ভৌমিক জানান, বিষয়টি আমি মৌখক ভাবে শুনেছি। এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।