পাথরঘাটার অসহায় শাহা ভানু’র কস্টের জীবন!
শরীরের দিকে তাকালেই বোঝা যায় বয়সের ছাপ। আর পরনের কাপড় দেখেই সহজেই অনুমান করা যায় দারিদ্রতার কষ্ট! এইতো কয়দিন আগেও ভিক্ষা করে যা পেতেন তা দিয়েই দিন চলে যেতো তার।
একটি দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়ে একাকি হাঁটার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেছে। বিয়ের পর কপালেও জোটেনি কোনো সন্তান। সন্তানের মুখে মায়ের মত মধুর ডাকও কানে বাজেনি। একাকিত্ব জীবন যে, কত অসহায় তা শাহা ভানুই জানেন।
শাহা ভানুর বয়স প্রায় ৭০। নিজের বা স্বামীর রেখে যাওয়া কোনো ভিটেমাটি নেই।
সরকারি আবাসনে থাকেন তিনি। স্বামী নুরুল ইসলাম মারা গেছে ২০০৭ সালে। তাদের দাম্পত্য-জীবনে কোনো সন্তানাদি নেই।
বয়সের ভারে তিনি কানেও কম শোনেন, লাঠি আর অন্যের সহায়তা ছাড়া তার হাঁটার চিন্তাই করা যায় না। কেমন আছেন শাহা ভানু! পাথরঘাটা উপজেলার হোগলাপাশা আবাসনে গিয়ে দেখা যায় তার অসহায় জীবন কত কষ্টের।
কেমন আছেন? জানতে চাওয়া মাত্রই তিনি বললেন ‘মোর পোলা-মাইয়া নাই’ দ্বিতীয়বার বলার পরে তিনি বললেন, ‘কানে কম হুনি জোরে কন’।
শাহা ভানুর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে জানা যায়, প্রথম স্বামী মারা যায় ৩০ বছর আগে। ওই সংসারে কোনো সন্তান হয়নি। পরে দ্বিতীয়বার বিয়ে হয় নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনিও মারা যায় ২০০৭ সালে। সেখানেও তার কোনো সন্তান হয়নি। বাবার বাড়ির জমি থাকলেও স্বামী কোনো জমি-জমা রেখে যেতে পারেনি। তাই দীর্ঘবছর ধরে আবাসনে থাকেন তিনি। স্বামী জীবিত থাকাকালীন দিন-মজুরি করে যা আয় করতেন তা দিয়েই সুখে-শান্তিতেই দিন চলে যেতো তাদের। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভিক্ষা করে নিজের পেট চালাতেন। করোনা মহামারির কারণে এখন তাও পারছেন না। বছরখানিক আগে পড়ে গিয়ে দুই পা ভেঙে গেছে তার। সেই থেকেই অন্যের সাহায্য ছাড়া চলা-ফেরা করতে পারছেন তিনি। নিজের চুলাও জ্বলে না এখন। জ্বালাতেও পারেন না। এখন আবাসনের বাসিন্দাদের ডাল-ভাতেই দিন যায় শাহা ভানুর। তবে আবাসনের সবাই আপন করে নিয়েছেন শাহা ভানুকে।
প্রতিবেশী শামসুল হক বলেন, আমরা শাহা ভানুকে মায়ের মতোই দেখি। যা পারি তাকে সহযোগিতা করি। আমরা যা খাই তাকেও সাধ্যমতো দিই। শাহা ভানুর কোনো সন্তান নেই, আমরাই তার সন্তানের মতো। তিনিও (শাহা ভানু) আমাদের সন্তান হিসেবেই দেখেন।
তিনি আরও বলেন, শাহা ভানুর জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়ার কারণে কোনো সহায়তা পায় না।
একই গ্রামের সিরাজুম মুনিরা মনি বলেন, শাহা ভানু খুবই অসহায়। একজন বৃদ্ধা কতটা অসহায় একাকিত্ব জীবন-যাপন করেন তাকে দেখলেই বোঝা যায়। সরকার বা সমাজের বিত্তশালীদের তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে। ইতোমধ্যেই তাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। (বাংলানিউজ)