ঝুকিপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল পাথরঘাটার জেলেদের সব আশা শেষ!
দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ মৎস্য শিকারের সাথে জড়িত। তারা মাছ আহরণ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। মওসুম প্রায় শেষ! আর সমুদ্রে গিয়ে এক ট্রিপ দিয়ে আসতে পারবে এ রকম সময় আছে তাদের হাতে। এর মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে মা ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশ রক্ষার সময়কাল শুরু হবে ১৪ অক্টোবর, থাকবে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। অপর দিকে গত মার্চ মাস থেকেই শুরু হয়েছে করোনা মহামারী। তার মধ্যে গেছে ৬৫ দিনের সব রকমের মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা। সব শেষে তাদের শেষ ভরসা ছিল মওসুমের শেষ সময়টুকু। সাগর উত্তাল থাকায় জীবনের ভয়ে সাগরে গিয়েও খালি হাতে উপকূলে ফিরে আসতে হচ্ছে জেলেদেরকে। এখন তাদের দাবি সরকারি কোনো সহযোগিতা যদি না পাওয়া যায় তাহলে জেলেদের এই এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। তা না হলে দাদন ও ধারদেনা কিভাবে শোধ করবেন তারা?
পাথরঘাটা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় সরকারি তালিকায় ১৪ হাজার ৩৫০ জন নিবন্ধিত জেলে ছিল, বর্তমানে নতুন করে হালনাগাদে তা কমে ১১ হাজার ৪৩৮ জন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে আবার যখন তালিকা করা হবে সে সময় জেলের সংখ্যা বাড়বে বলে জানা গেছে। সরকারি তালিকা ছাড়া এ উপজেলায় ২২ হাজার জেলে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬৫ দিনের অবরোধ ও মা ইলিশ রক্ষার সময় সরকারিভাবে ১১ হাজার ৪৩৮ জেলের মধ্যে কেউ ৫৬ কেজি আবার কেউ ৩০ কেজি করে সরকারি চাল সহযোগিতা দেয়া হয়েছে, বাকি জেলেরা,কোনো সহযোগিতা পাননি।
জেলে মনির, এমাদুল, হানিফা, সাব্বির জানান, আমাদের শেষ ভরসাটুকুও শেষ, এখন নিঃস্ব। এক দিকে ৬৫ দিনের অবরোধ আবার তার মধ্যে শুরু হয়েছে করোনা। এখন আবার মা ইলিশ শিকারের জন্য ২২ দিনের অবরোধ। তা ছাড়া এ বছর শুরু থেকেই বন্যা লেগে আছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে গেলেও উত্তাল সাগরের কারণে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। জেলেরা মওসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এনজিও, মহাজন ও আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে সাগরে নেমে থাকে। এ বছরের যে অবস্থা তাতে আমাদের পালিয়ে অন্যত্র যেতে হবে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, এ বছর জেলেদের সব দিক থেকেই দুর্ভোগ শুরু হয়েছে, সাগরে মাছ নেই বললেই চলে। এ বছরের আবহাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জেলেদের পাশাপাশি ট্রলার মালিকরাও নিঃস্ব হয়ে গেছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বাজার-সওদা করে সাগরে পাঠিয়ে খালি হাতে ফেরার কারণে জেলে পল্লীতে চলছে হাহাকার। জেলে ও ট্রলার মালিকদের যদি সরকারি সহযোগিতা করা না হয় তাহলে তাদেরকে এই পেশা থেকে সড়ে আসতে হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে এ বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস একটু বেশি, যে কারণে জেলেরা সাগরে কম যেতে পেরেছেন। কিন্তু সে হিসাবে মাছের যে আধিক্য সেটা কিন্তু কম না। প্রথম দিকে হয়তো জেলেরা মাছ পাননি, পরবর্তীতে কিন্তু ঠিকই তারা প্রচুর পরিমাণে মাছ পেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের জেলেরা আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করায় কোন কোন স্থানে মাছ আছে তা নির্ধারণ করতে না পারায় বেশি মাছ শিকার করতে পারছেন না। যারা নির্ধারণ করতে পারছেন তারা মাছ শিকার করতে পারছেন। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাছ কিছুটা কমেছে।