তালতলীতে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূর শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, কেটে দিল চুল
বরগুনার তালতলীতে দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী মার্জিয়ার (৩০) শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা ও তার কেটে দিয়েছে স্বামী মানিক খান।
শুক্রবার সকালে তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে যৌতুকের টাকা নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রীর গায়ে খুন্তির ছ্যাঁকা ও চুল কেটে দেন স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে তালতলী উপজেলার বড় আমখোলা গ্রামের আব্দুল খালেক খানের মেয়ে মার্জিয়ার সঙ্গে বরগুনা সদর উপজেলার ধুপতি গ্রামের আনোয়ার খানের ছেলে মানিক খানের বিয়ে হয়।
বিয়ের পরে শ্বশুর খালেক খান জামাতা মানিককে বাড়ি নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে মানিক শ্বশুর বাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। মানিক দম্পতির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন বছর আগে মানিক ঢাকা চলে যান। ওই সময় থেকেই স্বামী মানিক স্ত্রী মার্জিয়া ও দুই কন্যার কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার মানিক শ্বশুর বাড়ি আসেন এবং স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। ওই দিন রাত ১১টার দিকে স্বামী মানিক ব্যবসার কথা বলে স্ত্রী মার্জিয়ার বাবার কাছ থেকে ফের দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। এ টাকা দিতে স্ত্রী অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হন মানিক। পরে মানিক স্ত্রী মার্জিয়াকে বেধড়ক মারধর শুরু করে।
একপর্যায়ে স্বামী মানিক, ননদ জাকিয়া ও শাশুড়ি আলেয়া মিলে মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয় এবং চুল কেটে দেয়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশী এবং স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে। শুক্রবার সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনরা মার্জিয়াকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
হাসপাতাল গিয়ে দেখা গেছে, গরম খুন্তির ছ্যাঁকায় মার্জিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থান দগদগে ঘা হয়ে ফুলে গেছে। শরীর ব্যথায় নাড়াচাড়া করতে পারছে না। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শরীরের অন্যান্য জায়গায়ও আঘাতের ফলে কালচে দাগ হয়ে আছে। মাথার চুল কেটে দেওয়ায় মাথা এখন ন্যাড়া দেখাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী পার্শ্ববর্তী সুর্যভানু বলেন, রাতে মানিক খানের বাড়িতে চিৎকার শুনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মার্জিয়াকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করছে। তারা মার্জিয়ার শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি যাওয়ার পরে তারা মার্জিয়াকে ছেড়ে দেয়।
মার্জিয়ার বাবা আবদুল খালেক খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে জামাতা। গত তিন বছর ধরে আমার মেয়ের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে আমার মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে জামাতা মানিক, তার বোন জাকিয়া ও মা আলেয়া মিলে আমার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করে। লোক না হলে ওরা আমার মেয়েকে মেরেই ফেলতো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
গুরুতর আহত মার্জিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বিয়ের পর আমার বাবা আমার স্বামীকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দেয়। ওই টাকা দিয়ে আমার বাবার বাড়ির পাশে বাড়ি নির্মাণ করে। তিন বছর আগে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ফেলে রেখে ঢাকা চলে যান। আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। বৃহস্পতিবার বাড়িতে এসে আমার বাবার বাড়িতে যায়। আমাকে কৌশলে ওই রাতে তাদের বাড়ি নিয়ে যায় এবং ব্যবসার কথা বলে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমি এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে মারধর করে শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। মাথার চুল কেটে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অভিযুক্ত স্বামী মানিক খাঁন যৌতুক চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সামান্য ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে মারধর কিংবা কোনো খুন্তির ছ্যাঁকা দিইনি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র বলেন, মার্জিয়ার শরীরের ১২টি স্থানে আগুনে ঝলসে যাওয়ার মতো চিহ্ন রয়েছে। তার মাথায় পেছনের চুল কাটা ।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।