অন্য পেশায় ক্যারিয়ার গড়ছেন তারকাদের পরিবার
অনলাইন ডেস্কঃ নায়ক রাজ রাজ্জাক বলেছিলেন,‘বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য আমি আর কী দিবো। আমার দুটি ছেলেই তো দিয়ে দিলাম। ওদেরকে আমি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার নয়, ভালো অভিনেতা বানাতে চেয়েছি’। বাপ্পা রাজ ও সম্রাট বাবার মতোই নায়ক হয়েছেন। যদিও এখন তাঁরা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। নায়ক রাজের মতো আলমগীরের মেয়ে আঁখীও পড়াশুনা করেছেন আইনবিদ্যায়। সুন্দরী হিসেবে খ্যাতি থাকলেও তিনি গানে মন দিয়েছেন, এটাই তার পেশা। সোহেল রানার এক ছেলে মাশরুর পারেভেজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরিচালনার খাতাতেও নাম লিখিয়েছেন। আবার অনেকের সন্তান শোবিজের পথ মাড়াননি।
ববিতার একমাত্র ছেলে অনিক কানাডায় পড়াশুনা করেছেন। কানাডার ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পাশ করে সেখানেই কর্মরত আছেন।
শাবানার বড় মেয়ে সুমী ইকবাল এমবিএ ও সিপিএ করেছেন। তবে এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী। ছোট মেয়ে উর্মি সাদিক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ছেলে নাহিন সাদিক রটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে এখন ব্লুমবার্গে চাকরি করছেন। নায়িকা দিতির মেয়ে লামিয়া টুকটাক নাটক পরিচালনা করেন। ছেলে দীপ্ত শোবিজের বাইরে আছেন। মান্নার ছেলে সিয়াম বিদেশে সিনেমা নিয়ে পড়াশুনা করছেন। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিল নায়ক হিসেবে তাকে দেখা যাবে। কিন্ত তিনি পরিচালনার খাতায় নাম লেখাবেন বলে জানা যায়।
এই যে তারকা সন্তান হয়ে শোবিজে পদার্পন। সময়ের সঙ্গে এই রেওয়াজটা কমতে শুরু করেছে। যা গেল কয়েকবছরে শূন্যের কোঠায়। কেন এমনটা হচ্ছে? শোবিজ থেকে কী প্রত্যাশা শূণ্যের কোঠায়?
শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজি সিদ্দীকি দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে সেঁজুতি খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছেন। ছোটমেয়ে শ্রীমা সানজানা এখনো পড়াশুনা করছেন। তবে তারও শোবিজে কাজ করার আগ্রহ নেই বলে জানা যায়। রোজি সিদ্দকী বলেন,‘ শোবিজে আসলে দিনকে দিন অনিশ্চয়তার জায়গা হয়ে যাচ্ছে। কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন এই শোবিজে পথচলা শুরু করেছি। তখন যে আস্থা নিয়ে এসেছি। সেই আস্থা এখন পাচ্ছি না।’
জাহিদ হাসানের দুই ছেলেমেয়ে, মেয়ে পুষ্পিতা ও ছেলে পূর্ণ। পড়াশুনার গন্ডি এখনো পেড়ানো হয়নি। যদিও জাহিদ হাসান বলছেন নিজেদের মতো করেই ওরা ক্যারিয়ার গড়বে। কিন্তু পড়াশুনায় যতটা না তাদের চেপে রাখা হয়। শোবিজের কোনখানেই তাদের দেখা মেলে না। তৌকির- বিপাশা কিংবা শাহেদ-নাতাশা, কারও সন্তানই শোবিজে আসার কোন প্ল্যান নেই বলে জানা যায়।
ডা. এজাজের বড় মেয়ে তাসফিয়া এবার ডাক্তারি পাশ করেছেন। ছোটমেয়ে তাসনুভাও ডাক্তারি পড়াশুনা করছেন, এবার ফোর্থ ইয়ারে। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আবু রাশেদ ডাক্তারি পড়ছেন,তৃতীয় বর্ষে আছেন। আর সবচেয়ে ছোট ছেলে আবু বাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলথ ইকোনমিক্সে পড়ছেন। এদের মধ্যে কেউই শোবিজে নেই। কখনো কাজ করবেন বলেও বলা যায় না। সে খবর ড. এজাজ নিজেই জানিয়েছেন।
ওমর সানী- মৌসুমী দম্পত্তির ছেলে ফারদিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করছেন। পরিচালনার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। বাবা-মাও যথেষ্ট সহযোগি তার শোবিজের পথচলায়। মেয়ে ফাইজা এখনো পড়াশনুার গন্ডি পেরুয়নি।
খলনায়ক মিশা সওদাগরের বড় ছেলে হাসান মোহাম্মদ ওয়ালিদও যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করছেন। মিশা চায় ছেলে যেন উচ্চশিক্ষিত হয়ে অন্যকোন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে।
ফারুকের মেয়ে ফারিহা তাবাসসুম তুলসি ও ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশুনা করছেন। জানা যায়, শোবিজে আসার কোন প্ল্যান নেই তাদের।
এ প্রজন্মের অনেকেই আছেন। যাদের সন্তান সবে পড়াশুনা শুরু করেছেন। অথবা স্কুল পেড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ মাড়াননি। প্রায় সবাই চায় ছেলে মেয়ে উচ্চশিক্ষিত হয়ে অন্য কোন মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ুক। এর কী কারণ ? অনেকের কথার সঙ্গেই একমত পোষণ করে ফারুক বলেন,‘ আমরা তো টাকা কামাইতে সিনেমায় আসিনি। একটা ভালবাসা থেকে সিনেমা করতাম। সেই ভালবাসাটা সিনেমা আমাদের দিয়েছে। এখনকার ছেলেমেয়ে তো সেই সময় পাবে না। শিল্প- সংস্কৃতি ধান্দাবাজদের দখলে দিনকে দিন চলে যাচ্ছে। সেই ধান্দাবাজদের খপ্পড়ে কে চায় তার সন্তান পড়ুক। ‘
প্রশ্ন ছিল তাহলে যারা নতুন আসছেন। এই শিল্প- সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখছেন। তাদের উদ্যেশ্যে কী বলবেন? ‘ এখন যারা আসছেন। তারা বেশিরভাগই আসছে এমন পরিবার থেকে। যাদের শোবিজে অঙ্গনে কেউ নেই। তাদের অনেক লড়াই করতে হচ্ছে। এ প্রজন্মের যারা এভাবে টিকে আছেন। তাদের অবশ্যই স্যালুট জানাই। কিন্তু আমি সাহস পাইনি। এর জন্য আমি দু:খিত’।
এ এম বি / পাথরঘাটা নিউজ