পাথরঘাটায় এক যুগেও নির্মাণ হয়নি বেড়িবাঁধ
ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এক যুগেও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় পদ্মা ও জিনতলা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। এই ১২ বছরে অন্তত ১২ বার ভেঙেছে বাঁধ ২টি। সর্বশেষ ৫ দিন ধরে চলমান অস্বাভাবিক জোয়ারে পদ্মার বেড়িবাঁধের ১ কিলোমিটার ভেঙে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী জিনতলা বেড়িবাঁধ।
জিনতলা ও পদ্মা বেড়িবাঁধ দুটি বিষখালী ও বলেশ্বর নদ–নদীর তীরবর্তী পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে অবস্থিত। এ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জিনতলা ও পদ্মা বেড়িবাঁধ দুটি ভেঙে যায়। যার কারণে এ এলাকার ৫৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ১২ বছরেও এ ২টি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দিনে-রাতে জোয়ারের পানিতে ভাসছেন। এ ভোগান্তিতে সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়নও মানুষের কাছে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তাই জিনতলা ও পদ্মা বেড়িবাঁধ দুটি টেকসইভাবে নির্মাণ করতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় প্রতিদিন বেলা দুইটার দিকে জোয়ার শেষে পানিতে ভাটির টান শুরু হলে তাঁরা রান্নাবান্না শুরু করেন। খেতে খেতে প্রায় সন্ধ্যা। আবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জোয়ার শুরু হলে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। অনেক সময় ওই দুপুরে এক বেলা খেয়েই থাকতে হয়। এভাবেই চার দিন ধরে তাঁদের দিন কাটছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক কর্মী খাইরুল ইসলাম বলেন, ৪-৫ দিন ধরে বলেশ্বর ও বিষখালী নদ–নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে পদ্মা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে এবং জিনতলা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় জিনতলা বাঁধটিও ভেঙে যেতে পারে।
পদ্মা বেড়িবাঁধ এলাকার কালাম মাঝি, মনির গাজী, আব্দুল মালেক, জাহিদ হাসান, আলমগীর হোসেন, সেলিম সরদার সহ একাধিক ভুক্তভোগীরা বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে তাঁদের খেয়ে না–খেয়ে জোয়ারের পানিতে ভাসতে হচ্ছে। বারবার বেড়িবাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাঁদের একটাই দাবি, দ্রুত পদ্মা ও জিনতলা বেড়িবাঁধ দুটি টেকসই করে নির্মাণ করা হোক।
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, পদ্মা বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে জিনতলা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় মানুষজন ঝুঁকির মধ্যে বাস করছেন। একমাত্র টেকসই বেড়িবাঁধই হতে পারে এসব মানুষের নিরাপত্তা বেষ্টনী। এ জন্য এ এলাকায় পৌনে তিন কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অতিশীঘ্রই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার আলম বলেন, পদ্মার ভাঙন এলাকায় বর্তমানে জরুরি মাটির মেরামত করা হচ্ছে। পদ্মা, জিনতলা, পরিঘাটা, কালমেঘা ও কাকচিড়া—এ ৫টি বেড়িবাঁধের ১১ কিলোমিটারে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্প পাস হলে এ পাঁচটি বেড়িবাঁধে ব্লক দিয়ে ঢালসহ তীর সংরক্ষণ করা হবে।