বর্ষায় শিশুর যত্ন
কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া কখনো হয়ে ওঠে গরম, আবার কখনো ঠান্ডা। তাই ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর যত্নের ধরনও বদলে যায়। এজন্য এ সময় শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বর্ষায় কীভাবে শিশুর যত্ন নেবেন জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় তাদের অসুখ-বিসুখও বেড়ে যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে বর্ষায় বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে। তাই সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস খুব সহজেই রোগ ছড়াতে পারে। বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ডায়রিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, সর্দি-কাশি, টাইফয়েড, ছত্রাকজনিত ত্বকের সমস্যা। তাই এ সময়ে শিশুদের যত্নের বিষয়ে খুব সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
এ সময় শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারণ বর্ষায় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, গরম আর ঘাম মিলে শিশুদের পায়ের আঙুলের ফাঁকে, কুচকিতে, মাথায় ও চুলে ছত্রাক সংক্রমিত হয়। নিয়মিত গোসল না করালে ময়লা আটকে ছত্রাক সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গোসলের পর চুলের গোড়া ভালো করে শুকাতে হবে যাতে ছত্রাক সংক্রমিত না হয়। ভ্যাপসা গরমের জন্য কানের ভেতর ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে। এই আবহাওয়ায় ফাংগাল ইনফেকশন খুব দ্রুত ছড়ায়। এতে কানে চুলকানি হয়। এক্ষেত্রে মায়েরা বা শিশু নিজে চুলের ক্লিপ, কাঠি, কটন বাড বা অন্যকিছু দিয়ে কান না চুলকিয়ে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। এ সময় চুলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন বিশেষ শ্যাম্পু। আর গোসলের পানিতে ডেটল বা কোনো জীবাণুনাশক দিতে পারেন।
বর্ষায় মশার উপদ্রব অনেক বেড়ে যায়। আর এ থেকে ডেঙ্গু জ্বরসহ নানা রোগের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই এই ঋতুতে শুধু বাড়ির ভেতরটা নয়, পরিষ্কার রাখতে হবে বাড়ির আশপাশও। বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড় থাকলে সম্ভব হলে তা পরিষ্কার করিয়ে মশার ওষুধ ছিটিয়ে দিন। ঘরের ভেতর খাটের নিচে, আলমারির পেছনসহ বিভিন্ন ফার্নিচারের আটকানো জায়গাগুলো পরিষ্কার করে নিন। কারণ ঘরের এসব জায়গাতেই মশা লুকিয়ে থাকে। এডিস মশার উপদ্রব কমাতে ফুলদানি, ফুলের টব বা পড়ে থাকা পাত্রে এক সপ্তাহের বেশি যেন পানি আটকে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। রাতে তো বটেই, দুপুরে বা বিকালে শিশু ঘুমালেও মশারি টানিয়ে দিন।
বর্ষার পোশাকের ক্ষেত্রে শিশুর জন্য আরামদায়ক সুতি কাপড় বেছে নিন। ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পোশাক পরিবর্তন করে নিন। ছোট শিশুদের কাঁথা, চাদরও ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে রাখুন। তাহলে আর স্যাঁতসেঁতে হবে না। এই সময় প্রায়ই রাতে বৃষ্টি হয়ে কিছুটা ঠান্ডা ভাব বিরাজ করে। তাই ঘুমের সময় শিশুর গায়ে পাতলা সুতি কাপড় পরিয়ে রাখুন।
জ্বর, সার্দি-কাশি, জন্ডিস, টাইফয়েড, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের মধ্যে এই সময় সর্দি-কাশিতেই শিশুদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। প্রচন্ড গরমের পর হঠাৎ করে বৃষ্টি এবং কিছুটা ঠান্ডা আবহাওয়ায় শ্বাসতন্ত্র সহজেই সংক্রমিত হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি-কাশি ইত্যাদি দেখা দেয়। সর্দি-কাশিতে লেবু চা, আদা ও পুদিনা পাতার রস, মধু বেশ কার্যকর। গলাব্যথা থাকলে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করতে দিন। দ্রুত গলাব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
বর্ষার মিশ্র আবহাওয়ায় খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। সে কারণে শিশুদের বাইরের খাবার ও বাসি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। শিশুকে ঘরে তৈরি হালকা ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে। তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। অনেক শিশুর পুষ্টিকর খাবার ও শাক-সবজির প্রতি অনীহা থাকে। জোর করে না খাইয়ে কৌশলে ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে শিশুদের এসব খাবার খাওয়াতে হবে। এ সময় বাজারে আম, লিচু, জামরুল, জাম, কাঁঠাল, আনারসসহ নানারকম মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। এসব ফল বেশি বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। তবে এসব ফলে যেহেতু ফরমালিন দেওয়া থাকে তাই খাওয়ার আগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।