মেয়ে সুফকার ডাকেও সাড়া দিচ্ছেন না পুলিশ কর্মকর্তা সুমন
ছোট্ট মেয়ে সুফকার সুলতানা। ভালোবাসার চাদরে তাকে জড়িয়ে রাখতেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবা সুমন আলী। সময় মতো বাবাকে না দেখলে অস্থির হতো সে। আর ফোনে কথা না বললেই জেদের সীমা ছড়িয়ে যেত সুফকা। কিন্তু মেয়ের অস্থিরতা বা জেদকে আর মূল্যায়ন করবেন না করোনাভাইরাসে মৃত বাবা সুমন। মেয়ে এখন বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু লাশ হওয়ায় আদরের মেয়ের ডাকেও সাড়া দিচ্ছেন না বাবা।
টানা ছয় দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে মারা যান সুমন আলী। ঠিকই বাড়ি ফিরেছেন বাবা সুমন। তবে লাশ হয়ে ফিরেছেন।
সুমন আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের দৌলতপুরের আবদুল লতিফের ছেলে। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সুমন আলীর স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা জানান, ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন সুমন আলী। সন্দেহের বশে নাটোরে নমুনা পরীক্ষা করান পুলিশের এ কর্মকর্তা। রিপোর্টে ফলাফল আসে নেগেটিভ। স্বস্তির পারদেই সন্তুষ্ট ছিলেন সুমন। কিন্তু দিন দিন শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। তার অবস্থার অবনতি হলে ঈদের পরের দিন অর্থ্যাৎ ২ আগস্ট ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ আসে। তার অবস্থার অবনতি হলে ৮ আগস্ট সুমনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। টানা ছয়দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তা সুমন।
রাবেয়া সুলতানা আরো জানান, সুমনকে ঢাকায় নেয়ার পর থেকেই সুফকা সুলতানা বাবাকে দেখতে অস্থির হয়ে উঠেছে। ফোনে বাবার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে। তবে লাইফ সাপোর্টে থাকায় বাবার সঙ্গে আর কথা হয়নি সুফকার। সরকারি কাজে বাবা ঢাকায় গেছে, কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে বলে মেয়েকে সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মেয়ে বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলার জন্য অসংখ্যবার জেদ ধরেছে।
নাটোরের এসপি লিটন কুমার সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্য সুস্থ হয়েছেন সাতজন। এখনো পাঁচ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। ইন্সপেক্টর সুমন আলী নাটোর জেলায় কর্মরত প্রথম পুলিশ করোনায় মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন সুমন আলী। ঈদের আগে গরুভর্তি একটি ট্রাক লুটের মামলা তদন্ত করতে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে যান তিনি। এরপরই তার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত ঢাকায় নেয়া হয়। তবে তাকে সুস্থ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।