বরগুনায় রডের বদলে বাঁশ: স্কুল বন্ধ থাকায় রক্ষা পেল শিক্ষার্থীরা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াস ব্লক নির্মাণে ভিমে রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহারের ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। নির্মাণের মাত্র তিন বছরের মাথায় ভিম ভেঙে পড়েছে। বরগুনার আমতলী উপজেলার বৈঠাকাটায় এ ঘটনা ঘটে।
করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। স্থানীয়রা রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াস ব্লক নির্মাণকারী ঠিকাদার নুরজামালকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর আমতলীর বৈঠাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াস ব্লক নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে দরপত্র আহবান করে। ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই কাজ পায় আমতলীর ঠিকাদার নুর জামাল। নির্মাণের শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। কাজের শুরুতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতে বাঁধা দেয়। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাঁধা উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদার নুর জামাল কাজ করেন। তার ভয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ দেখভাল করতে পারেনি। তৎকালিন উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে আঁতাত করে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছা মাফিক রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি (টুনি) দিয়ে ওয়াস ব্লক নির্মাণ করেছে। ২০১৭ সালে ওই কাজ শেষ হয়। ওই সময়ে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোসা. সুলতানা রাজিয়ার কাছে প্রত্যায়ন চায়। কিন্তু কাজের মান ভালো না হওয়ায় তিনি প্রত্যায়ন দেয়নি এমন দাবি প্রধান শিক্ষকের।
ওয়াস ব্লক নির্মাণের তিন বছরের মাথায় লেন্টিন ও ওয়ালে ফাটল ধরে। ওই ফাটল মেরামতের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য এ বছর বিশ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। শনিবার ওই ওয়াস ব্লকের মেরামতের কাজ শুরু করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাজ মিস্ত্রি সুলতান হাওলাদার কাজের শুরু করলেই মুহুর্তের মধ্যে ওয়াস ব্লকের লেন্টিন ও ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে। এরপরই লেন্টিন থেকে বেড়িয়ে আসে রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি। তাৎক্ষনিক রাজ মিস্ত্রি সুলতান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয়দের খবর দেন। প্রধান শিক্ষক রড়ের পরিবর্তে রাশের কাঞ্চি দেখে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমানকে জানায়।
রোববার বিকেলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বিদ্যালয় ভাঙ্গা ওয়াস ব্লক পরিদর্শণ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম ও ঠিকাদার নুর জামাল গিয়ে ভাঙ্গা ওয়াস ব্লক থেকে বাঁশের কঞ্চির লেন্টিন ও কঞ্চি সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াস ব্লকের ভিতরে লেন্টিন ও ওয়াল ভেঙ্গে পড়া নির্মাণ সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। লেন্টিনের মধ্যে রডের পরিবর্তে বাশ কাঞ্চি দেয়া আছে। স্থানীয় মুরাদ খান, দেলোয়ার হোসেন ও এনামুল খাঁন বলেন, ঠিকাদার নুর জামাল রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ওয়াস ব্লক নির্মাণ করেছে। ঠিকাদার নুর জামালের বিচার দাবি করছি।
বিদ্যালয় দফতরি মো. শাওন খলিফা বলেন, প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম ও ঠিকাদার নুরজামাল এসে ভেঙ্গে পড়া লেন্টিন সরিয়ে ফেলেছে। আমি নিষেধ করা সত্বেও তারা শুনেনি। পরে গোপনে আমি ভাঙ্গা লেন্টিনের দুইটি টুকরো লুকিয়ে রেখেছি।
রাজ মিস্ত্রি মো. সুলতান হাওলাদার বলেন, মেরামতের কাজ শুরু করা মাত্রই ওয়াস ব্লকের লেন্টিন ও ওয়াল ভেঙ্গে পরেছে। পরে দেখতে পাই লেন্টিনের মধ্যে রাশের কঞ্চি।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোসা. সুলতানা রাজিয়া বলেন, ঠিকাদার নুর জামাল ওয়াস ব্লকের কাজের শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেন। ওই সময় আমি নিষেধ করলে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমি তার কাজের কোনো প্রত্যায়ণ দেয়নি। এখন দেখছি রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার নুর জামাল রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াস ব্লক নির্মাণের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমতলী উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদার রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াস ব্লক নির্মাণ করেছে। আমতলী ইউএনও মনিরা পারভীন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।