বেতাগীতে শিক্ষকদের মানবেতর জীবন
বেতাগী প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে মহামারী করোনার প্রভাবে সারা দেশের মতো দীর্ঘ সময় বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যক্তি মালিকনায় বা বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী বর্তমানে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর সহ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার এবং নুরানীসহ ৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে এবং দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রতিষ্ঠানসমুহ মাসের পর মাস বন্ধ থাকায় এসকল প্রতিষ্ঠানে সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের সামান্য বেতনের উপর নির্ভরশীল। মাসের পর মাস বন্ধ থাকায় অনেকে দিনমজুরের কাজ করছেন। অনেকে ধার দেনা করে কোনোরকম পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করছে।
সরকারি কলেজ এলাকার আল-নাবিল নুরানী প্রি ক্যাডেট একাডেমির পরিচালক শাহাদাত হেসেন মুন্না বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বেতন এবং অবসর সময় টিউশনি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করেন। কিন্ত করোনার প্রভাবে প্রতিষ্ঠানের পাশাপশি বন্ধ রয়েছে টিউশনিও। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ।
পৌর শহরে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভা সংলগ্ন একে স্কুলের পরিচালক মুনতাসীর সালমান জীবু বলেন, এঅবস্থায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এসব শিক্ষকরা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মতোই সম্মানীয়। এর অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাই তারা না পারছেন কারও কাছে চাইতে না পারছেন জীবিকা নির্বাহ করতে। ফলে কর্মহীন হয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন।
গ্রীন সোলস কিন্ডারগার্ডেনের প্রধান শিক্ষক বিবি সায়মা বলেন, করোনার প্রভাবে শুরু থকেই প্রায় ৪ মাস যাবত আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছি। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমাদের টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও কারো কাছে সহযোগিতা চাইতে না পারায় চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
বেতাগী নুরানী মাদরাসার শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবন ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ থাকলেও নিয়মিত ভবনের ভাড়া, বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের বেতনেই শিক্ষক ও কর্মচারিদের বেতন এবং অন্যান্য ব্যয় বহন করতে হয়। এতদিন ধারদেনা করে ভাড়া, বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করে আসলেও বর্তমানে এসব খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান বলেন, এ বিষয় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে তাদেরকে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয় সংশ্লিষ্টদের নিকট রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।(সূত্রঃ কালের কন্ঠ)