প্রতিবাদের সুফল কি আগামীতে পাবে বাংলাদেশ?
নোমান আল সাকিব: প্রতিবাদ কখনও কখনও ভবিষ্যতের জন্য সুফল বয়ে আনে। তবে সাময়িক ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েই সেটি করতে হয়। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠেই প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ। দেখেছে পুরো বিশ্ব। যেটির সুফল ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিসিবির গেম এডুকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাশেদ ইকবাল।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রাশেদ বলেন, ‘একদিক থেকে ভালই হয়েছে, আবার আরেকদিক থেকে খারাপ হয়েছে। কারণ ক্রিকেট একটা জেন্টেলম্যান গেম। অনেকে এই প্রতিবাদ খারাপ দৃষ্টিতে দেখবে, সমালোচনা করবে। তবে যেটা হয়েছে বলে আমি মনে করি, আগামীর জন্য বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। বুঝিয়ে দিয়েছে, পরবর্তী সময়ে যেন এরকম না হয়।’
‘বাংলাদেশ এমন প্রতিবাদ আগে কখনও করেনি। মাঠে তো করেইনি। গত ম্যাচে আমরা প্রথম দেখলাম। এতে একটা জিনিস ভাল হয়েছে, আইসিসির আম্পায়াররা সচেতন হবে। সামনে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে সামলাবে।’ এগুলো বলেন রাশেদ।
বাংলাদেশের ম্যাচে আম্পায়ারিং বিতর্ক নতুন কিছু নয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদ হিসেবে আইসিসি সভাপতির পদই ছেড়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তাফা কামাল। মেলর্বোনের সেই ম্যাচেও ছিল ‘নো বল’ বিতর্ক।
শুক্রবার প্রেমাদাসায় লঙ্কা-বধের ম্যাচে শেষ ওভারে মোস্তাফিজের কাঁধের উপর দুই বাউন্সার দিয়েও পার পেয়ে যান পেরেরা। লেগ আম্পায়ার ‘নো বলে’র সংকেত দিয়েও পরে সিদ্ধান্ত বদলে নেন। মাঠে মাহমুদউল্লাহ, বাইরে থাকা সাকিব মেনে নিতে পারেননি সেটি। তেঁতে ওঠা বাংলাদেশ অধিনায়ক উইকেটে থাকা মাহমুদউল্লাহকে ম্যাচ ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে আসতেও ইশারা করেছিলেন। কোচিংয়ের উপর সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়া রাশেদ ইকবাল মনে করেন দ্বিতীয়টি নিশ্চিত নো-বল ছিল।
‘প্রথম বলটা কাঁধের উপর দিয়ে গেছে, আম্পায়ার হয়ত বাউন্সার হিসেবে গণ্য করেছে। তাতে দ্বিতীয় বলটা নো বলই হয়। দুর্ভাগ্য যে ‘নো’ কল করেনি। লেগআম্পায়ার কিন্তু নো’ই ডেকেছিল। স্ট্রাইক আম্পায়ার সেটি এড়িয়ে গেছেন। যে ঘটনা ঘটেছে সবাই দেখেছে। সাকিব নেমে এসেছে। এর আগে বিশ্বকাপেও এমন ঘটেছে। আমরা যে দল হিসেবে উন্নতি করছি অন্যান্য দেশ হয়ত তা গ্রহণ করছে না।’
‘শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত নিধাস ট্রফি। এটা হয়ত আম্পায়ারদের মাথায় কাজ করেছে। যে কারণে মাঠে আম্পায়াররা শতভাগ নিরপেক্ষ হয়তবা ছিল না। কোন একটা ভুল অ্যাকশন হলে অপর দিক থেকে কিন্তু রি-অ্যাকশন হবেই। সেটাই হয়েছে। তবে এটি ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পরিপন্থীও।’ এ কথা গুলো যোগ করেন রাশেদ।
আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্ব দেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ম্যাচ বয়কট করতেও প্রস্তুত ছিলেন। যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাঙ্গন। রাশেল ইকবাল মনে করেন ম্যাচের উত্তাপে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি খেলোয়াড়রা।
এছাড়াও আরেকটি বিষয় নিয়ে বেশ সমালচনা হয়েছে।একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে বোলিং এ ছিলেন জীবন মেন্ডিস।তার করা বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের একটি ক্যাচ ফসকে যায় কিপারের হাত থেকে।ক্যাচ টা মিস করায় যতটা না বোলার এর রি-এ্যাকশন, তার চেয়ে বেশি আম্পায়ার এর রি-এ্যাকশন। হয়তো পারছেনা শুধু কিপার কে দুই-চারটা চর-থাপ্পর মারতে।
‘খেলাটা এমন পর্যায়ে ছিল যেখানে আবেগ ছিল, উত্তেজনা ছিল, চাপ ছিল। দেশের প্রতি ভালবাসা ছিল বলেই এমন হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। সেটা খেলোয়াড়-দর্শকদের মাঝেও আলাদা উত্তাপ সৃষ্টি করছে। শ্রীলঙ্কা দল বাংলাদেশে এসে হারিয়ে গেল, আবার বাংলাদেশ জিতল শ্রীলঙ্কার মাটিতে। বাংলাদেশের নাগিন নাচ, শ্রীলঙ্কার বীণ ধরার ব্যাপারগুলোও আলাদা উত্তাপ ছড়াচ্ছে।’
বিশেষ প্রতিবেদন/এন এ এস/পাথরঘাটা নিউজ