সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ আমতলীতে সর্বাত্বক প্রস্তুতি, আতংকে রয়েছে ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরতরা

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ১৯ মে ২০২০

ছবিঃ সংগ্রহীতমো. আবু সাইদ খোকন, আমতলী প্রতিনিধি:
মহামারির করোনাভাইরাসের মধ্যেই তৈরী হয়েছে আরেক দূর্যোগের আশঙ্কা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ এখন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ধীরগতিতে এগোলেও বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। বরগুনার আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকারকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আতংকে রয়েছে ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত প্রায় পঞ্চাশ হাজার পরিবার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান গতি-প্রকৃতি বজায় থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি আজ মঙ্গলবার রাতের শেষ ভাগ থেকে আগামীকাল (বুধবার) বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সুপার সাইক্লোনটির কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ থেকে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের ভূখন্ডে আঘাতের সময় এর গতিবেগ কমতে পারে। তারপরও এর গতি ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুপার সাইক্লোনে বাংলাদেশের হাতিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলো উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। বর্তমানে আমতলীসহ উপকূলের আকাশ হালকা মেঘাচ্ছন্ন ও থমথমে অবস্থায় রয়েছে। হালকা বাতাস থাকলেও প্রচন্ড গরম পড়তেছে।

সুপার সাইক্লোনের প্রভাবে সতর্কতামূলক প্রস্তুতিতে বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছে না আমতলী উপজেলা প্রশাসন। এ লক্ষ্যে সাইক্লোন ‘আম্ফান’ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল (সোমবার) দুপুরের পরে থেকে ও আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে উপজেলার সর্বত্র জনসাধারণকে সচেতন করতে শহর ও গ্রাম-গঞ্জে মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে থাকতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রচার- প্রচারনা চালাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন। পাশাপাশি উপজেলার ১১১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র আছে সেগুলো উন্মুক্ত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরী প্রয়োজনে উদ্ধার যানসহ ও প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রী। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়াদের নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশ ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের টিম সার্বক্ষণিক সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া মানুষের জন্য শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত পরিবারকে দ্রুত সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলতেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে রেডক্রিসেন্টের আমতলী উপজেলার ১৭’শ ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে।

উপজেলা ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর সহকারী পরিচালক কেএম মাহতাবুল বারী মুঠোফোনে বলেন, ঘূর্ণিঝড় থেকে সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয়া ‘আম্ফান’ মোকাবেলায় ইতিমধ্যেই আমতলীর ১১১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপজেলার ১৭’শ ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে। জনসাধারণকে সচেতন করতে শহর ও গ্রাম-গঞ্জে মাইকে প্রচার- প্রচারনা চালানো হচ্ছে। আতংকে রয়েছে ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরত প্রায় পঞ্চাশ হাজার পরিবার।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, সাইক্লোন মোকাবেলার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ সকল জনসাধরণকে সতর্ক থেকে নিরাপদে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান জানান, সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ দুর্যোগ মোকাবেলায় পৌরসভার পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পৌরসভার সকল আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ভেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসরতদের দ্রুত সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কার্যক্রম চলছে। মানুষকে সচেতন করতে গতকাল দুপুরের পর থেকে পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। যা আজও অব্যাহত আছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন মুঠোফোনে বলেন, সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়াদের সামাজিক সুরক্ষা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রাখা হবে। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রে গ্রাম পুলিশ ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের টিম সার্বক্ষণিক সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। আশ্রয় নেয়া মানুষের জন্য শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)