করোনা যুদ্ধে দূর্দান্ত এক নারী ইউএনও মাসুমা আক্তার
বৈশ্বিক মহামারী ‘করোনা’ মোকাবেলায় সমুখ সমরের এক যোদ্ধা বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার। সূচনা লগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত নিরলস মাঠে লড়ছেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের ১০জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি টিম গড়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউএনও মাসুমা।
একদিকে তিনি দপ্তর সামলেছেন, অপরদিকে সরকারের প্রতিটি নির্দেশনা বাস্তবায়নে দিন রাতের বালাই নেই, ছুটে গিয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। সনাক্ত হওয়া রোগীর বাড়ি লক ডাউন নিশ্চিত করা, সংষ্পর্শে আসা ব্যক্তিবর্গ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া, লক ডাউন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া, অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিশেবে কখনো বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া থেকে শুরু করে কর্মহীন অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করায় নিরন্তর কাজ করে চলেছেন এই নারী ইউএনও।
তিনি এক মুহূর্তের জন্যও মানুষকে বিপদে রেখে, নিজের বিপদ হতে পারে জেনেও পিছপা হননি। সরকার ঘোষিত লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব এবং আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকল্পে অন্যান্য মানবিক কাজে নিজেকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রেখেছেন।
আর এসব কাজে সহযোগীতার জন্য তিনি ১০ জন চৌকস অফিসারকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি টিম। এদের প্রত্যেককে এক একটি ইউনিয়নে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১নং বদরখালী ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বিভাষ কুমার দাস, ২ নং গৌরীচন্না ইউনিয়নে আমার বাড়ি আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপজেলা সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম, ৩নং ফুলঝুরি ইউনিয়নে সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ আনিচুর রহমান, ৪নং কেওডাবুনিয়া ইউনিয়নে সহকারী প্রোগ্রামার মিলনগাজী, ৫নং আয়লাপাতাকাটা ইউনিয়নে উপজেলা সহ শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার, ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নে ভেটেরিনারি সার্জন ডা: বেনজির আহমেদ ৭ নং ঢলুয়া ইউনিয়ন সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা রুহুল আমিন, ৮ নং সদর ইউনিয়নে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, ৯নং ইউনিয়নে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম ও ১০ নং নলটোনা ইউনিয়নে একাডেমিক পরিদর্শক এসএম সোহেল।
সুদক্ষ টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি সদরের ১০টি উপজেলায় পৌঁছে দিচ্ছেন সরকারের মানবিক সহায়তা। এছাড়াও ইউএনও মাসুমার নেতৃত্বে কর্মহীন হতদরিদ্রের ত্রানবিতরণ, বিতরণ কার্যক্রম মনিটরিং, বাজার মনিটরিং, হোম কোয়ারেন্টাইন থাকা ব্যক্তিদের তদারকি, তাদের গতিবিধি তদারকি এবং অন্যান্য জেলা থেকে আগত ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়্যারম্যানদের সাথে সহায়তা করা এবং সুষ্ঠুভাবে প্রত্যেক হতদরিদ্রের নিকট ত্রান পৌঁছানোয় ১০ জন তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
২ নং গৌরীচন্না ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা আমার বাড়ি আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপজেলা সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমরা ইউএনও মহোদয়ের নেতৃত্বে একটা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। আমারদের মানবিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে যথাযথভাবে পালন করছি। সহায়তা করে আসছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, আমরা শুরুতেই করোনা মোকাবেলাকে যুদ্ধ হিশেবে নিয়েছি, টিমওয়ার্ক ছাড়া আমাদের যুদ্ধজয় অসম্ভব এমন উপলব্ধি থেকেই একটি টিম গড়ে তুলেছি। আর সেই থেকে নিরলসভাবে মাঠে কাজ করে চলছি। আমাদের টিম মেম্বরদের আন্তরিকতা, মানবিকতা ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে নিজেকে সঁপে দেয়ার মানসিকতাই সবচেয়ে বড় শক্তি। একজন নারী নয়, নিজেকে মানুষ হিশেবে মানুষের বিপদে পাশে থাকার মানবিকতাবোধ থেকে দিনরাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। মানুষ নিরাপদে থাকুক, সুরক্ষিত থাকুক, খেয়ে বাঁচুক সম্মিলিতভাবে, এই প্রচেষ্টায় আমরা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে এখনো কাজ করছি”।