জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানব সেবায় স্বপ্নের হাট
মহিউদ্দিন অপু :
মানবজাতিকে আজ অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে নোভেল করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গোটা বিশ্বই এখন হিমশিম খাচ্ছে। বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্য।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানুষ এখন ঘরমুখী। একদিকে লকডাউন অন্য দিকে করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ঘর থেকে খুব একটা বের হচ্ছেনা সাধারণ মানুষ। ঘরে অবস্থান নেওয়া অধিকাংশ মানুষই এখন নিত্য পণ্য ক্রয় নিয়ে পড়ছেন বিপাকে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে উপকূলীয় বরগুনায় স্থানীয় তরুন সেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের চাহিদা পূরণে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমী সেবা। ঘরবন্দী মানুষের মাঝে ফিরছে কিছুটা স্বস্তি।
বলছিলাম বরগুনার প্রথম অনলাইন সপ ‘স্বপ্নের হাট’ এর কথা। জানা যায়, স্বপ্নের হাটের ফেসবুকে, ম্যাসেঞ্জার বা হট লাইন (০১৭১০৩৫১৩৫১/০১৮৪৫৪৫৯১৯১) নম্বরে পণ্যের অর্ডার দিলেই স্বপ্নের হাটের সেচ্ছাসেবকরারা পন্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন ঘরবন্দীদের দরজায়। ঘরবন্দীরা ক্যাশ মেমো বুঝে নিয়ে পরিশোধ করছেন পন্যের টাকা। পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডে ভিতরে নেওয়া হচ্ছে হোম ডেলিভারীর জন্য সার্ভিস চার্জ বা পরিবহন খরচ মাত্র ৩০/- টাকা । ঘরে বসে এমন সেবা পেয়ে খুশি ঘরবন্দী মানুষেরা।
স্বপ্নের হাটের সেবা পেয়ে লাইজু আক্তার বলেন, আমার বাসায় রান্না করার মতো তেমন কিছু ছিলোনা। বাজারে যাওয়ার জন্য আগের মতো যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া করোনা আতঙ্কে ঘর থেকেও নামতে পারছিলাম না। হঠাৎ ফেসবুকে স্বপ্নের হাটের ফ্রি হোম সর্ভিস দেখি। মাছ, মুরগী, সবজিসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অর্ডার করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পণ্য নিয়ে হাজির স্বপ্নের হাটের সেচ্ছাসেবকরা।
এছারাও নারী পুলিশ সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস বলেনঃ আমার বাবা অসুস্থ তাকে ডাক্তার দেখানোর পর তারাহুরো করে বাসায় চলে আসি কিন্তু ভুলে ঔষধ আনা হয়নি স্বপ্নের হাটে কল দিতেই তারা বাসায় ঔষধ পৌছে দিলো তাও সার্ভিস চার্জ ছারা। কেন সার্ভিস চার্জ নিবেনা জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবকরা হাসি মুখে বলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষ যাতে ঘর থেকে বের না হয় তাই আমরা এখন এই সংকট মুহুর্তে সার্ভিস চার্জ নেই না।
তিনি আরও বলেন শুনে আমার মন ভরে গেলো সবাই যখন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত স্বপ্নের হাট তখন মানব সেবায় মগ্ন।
এক জন তরুন ব্যবসায়ী মইনুল হোসেন ইমরান বলেনঃ করোনা ভাইরাসের কারনে আমি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি বাসায় বাজার নেই,হঠাৎ মোবাইল ফোনটা ও নষ্ট হয়ে গেল স্বপ্নের হাটে ফোন করতেই মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্য নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য,নতুন মোবাইল ফোন নিয়ে হাজির স্বপ্নের হাটের সদস্যরা। এই সংকট কালিন সময়ে স্বপ্নের হাট ই ভরসা আমাদের।
স্বপ্নের হাটের প্রধান উদ্যোক্তা ও বাংলাভিশন টিভির সাংবাদিক সহিদুল ইসলাম স্বপ্ন বলেন, ঘরে বসে প্রয়োজন মেটাই স্বপ্নের হাট আপনার সেবায় এই স্লোগানে বরগুনার প্রথম অনলাইন শপ স্বপ্নের হাট ২০১৬ থেকে বরগুনায় যাত্রা শুরু করে এরপর সাধারন মানুষ এটাকে খুব ভালোভাবে গ্রহন করেনি এরপর ২ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৯ সালের দিকে একটি পরিবারের সকল চাহিদা পূরন করার লক্ষ্য নিয়ে আবার শুরু করি এর পরে অল্প অল্প করে আমাদের সেবা কিছু মানুষ নিতে থাকে এরপর ২০২০ সালের করোনা পরিস্থিতিতে নিত্য পণ্যের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এই সেবা চালু করা হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়াও আমরা ঔষুধ ও ইলেক্ট্রনিক্স পন্যের সেবাও দিচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এই সেবা অব্যহত থাকবে।
আর এ সেবা পৌঁছে দিতে সব সময় প্রস্তুত এক ঝাক তরুন মানবপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবক।