দুই উপজেলার ১৮৮ জন বিদেশ ফেরত, ৩৩ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আমতলী ও তালতলীতে অধিকাংশ বিদেশ ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না
এম এ সাইদ খোকন, আমতলী প্রতিনিধি
বরগুনা আমতলী ও তালতলী উপজেলায় বিদেশ থেকে ফিরে আসা ১৮৮জনের মধ্যে ৩৩ জন প্রবাসী নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। এদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার যে বাধ্যবাধকতা আছে তা তারা মানছেন না। তাঁরা প্রকাশ্যে শহর ও গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেতে পর্যন্ত যাচ্ছেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের জোরালো কোন উদ্যোগও নেই।
আমতলী ও তালতলী থানা সূত্রে জানাগেছে, দু’উপজেলায় ১৬ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৮৮ জন প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দাবী শুক্রবার পর্যন্ত আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ৩৩ জন প্রবাসীকে শনাক্ত করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ২২ জন ও তালতলী উপজেলায় ১১ জন। বাকীরা কোথায় আছেন তা জানেন না উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের খুজে রেব করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপও নিতে দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, সম্প্রতি বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসা ১৮৮ জন প্রবাসীদের মধ্য থেকে ৩৩ জনকে শনাক্ত করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে কারো করোনা ভাইরাসের লক্ষণ মেলেনি। তারা সকলেই সুস্থ্য আছেন ।
কিন্তু প্রবাসীদের অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে তাদের নেই কোন সঠিক ধারণা। হোম কোয়ারেন্টাইন কাকে বলে সেটাই অনেকে জানেন না। অনেক প্রবাসী হাট-বাজারসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাচ্ছেন। অনেকে আবার ঝামেলা এড়াতে বাড়িতে বসে স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ তেমন কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
অপরদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের তৈরী করা তালিকা অনুসারে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বিদেশ ফেরা প্রবাসীদের দেখভালের দায়িত্ব স্ব-স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নির্ধারন করে দিয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, অনেক বাড়ীর হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিয়মিত দেখভাল করতে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাদের বাড়ীতে যাননি।
সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরা রিয়াদ হাওলাদার বলেন, দেশে এসে ঢাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে গ্রামের বাড়ীতে এসেছি। আমার শরীরে করোনা ভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই। তারপরেও আমি এসেই বাড়ীতেই অবস্থান করছি, বাহিরে বের হইনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিদেশ ফেরত এক কাতার প্রবাসী বলেন, আমি গত সপ্তাহে দেশে এসেছি। করোনা ভাইরাসের যে লক্ষনগুলি আছে তার কোন কিছুই আমার শরীরের মধ্যে নেই। বাড়ীতেই অবস্থান করছি, একদিন আমতলী স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ফোন দিয়েছিল। এখন পর্যন্ত আমাকে স্বাস্থ্য বিভাগের কেহ দেখতে আসেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন প্রবাসীর বাড়ীর প্রতিবেশীরা জানান, বিদেশ ফেরতরা কেহ হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। তারা বাড়ীতে অবস্থান করছেন না। এলাকার হাট-বাজারসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাচ্ছেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, সতর্কতা হিসেবে ৩৩ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদেরকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা যে সকল বিদেশ ফেরত আসাদের তথ্য পেয়েছি সে সকল প্রবাসীর বাড়ীতে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিয়মিত দেখভাল করছেন।
বরগুনা সিভিল সার্জন হুমায়ূন শাহীন খান মুঠোফোনে বলেন, দু’উপজেলায় ৩৩ জন প্রবাসী পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। তা পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকীদের প্রশাসনের মাধ্যমে খুজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ১৪৭ জন প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন এর মধ্যে ৩৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকীদের খুজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমিও শুনেছি বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। যারা মানছেন না তাদেরকে চিহ্নিত করে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হবে।