একটি নয় তিনটি বিয়ে করেছেন শাবনূর স্বামী অনিক
প্রায় চার বছর আগেই শাবনূরের স্বামী অনিক আরও একটি বিয়ে করেছেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আয়েশা। শাবনূরের সংসার ভাঙার খবর সামনে আসতে না আসতেই জাগো নিউজ পেয়েছিলো এমন তথ্য। গেল ৪ মার্চ ‘দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন শাবনূরের স্বামী, ছয় বছর ধরেই
চলছে কলহ’ শিরোনামে সংবাদও প্রকাশ হয়েছিলো। অবশেষে নায়িকা শাবনূরও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনিও জানিয়েছেন, তার স্বামী তার অজান্তেই বিয়ে করেছে। তবে তিনি যোগ করেন, ‘একটি নয়, অনিক দুটি বিয়ে করেছে আমার অজান্তে। একটি আমাকে বিয়ের আগে, অন্যটি আমাকে বিয়ের পর।’ অর্থাৎ, এ নায়িকার অভিযোগ অনুযায়ী শাবনূরসহ মোট তিনটি বিয়ে করেছেন অনিক। শাবনূরের এমন বক্তব্যের পর অনিক সব কথাকে মিথ্যে বলে দাবি করেন।
তিনি তার স্ত্রী শাবনূরকে চ্যালেঞ্জও করেছেন। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিয়ের প্রমাণ না দিতে পারলে শাবনূরকে মাফ চাইতে হবে।’ অবশেষে অনিকের বিয়ের প্রমাণ নিয়ে হাজির হলেন শাবনূর। অস্ট্রেলিয়া থেকে মুঠোফোনে শাবনূর গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন অনেক অজানা কথা।
যেখানে গোপনে গোপনে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়েছেন, অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছেন। শাবনূর বলেন, ‘নিজের ইমেজের দিকে তাকিয়ে আমার উপর হয়ে যাওয়া অন্যায়-অত্যাচার নিয়ে মুখ খুলতে চাইনি আমি। অনেক চেষ্টা করেছিলাম মিটমাট করে সংসার করার।
কিন্তু কোনো পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে সরে যেতে চেয়েছিলাম। তাকে তালাক দিয়ে। বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেও পারিনি। আমার আইনজীবীকেও বিষয়টি গোপন রাখতে বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত যেভাবেই হোক খবরটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরও আমি চুপ ছিলাম। আপনারা অনেক মিডিয়া নিজেরাই অনিকের নানা অনৈতিক গোপান তথ্য ও গোপন বিয়ের খবর জানতে পেরে তা প্রকাশ করেছেন।
এরপর আমিও তার বিয়ে ও স্বভাব-চরিত্র নিয়ে কথা বলেছি। সে এখন নিজেকে সাধু সাজিয়ে সব মিথ্যে প্রমাণের চেষ্টা করছে। আমি নাকি কোন চীনা নাগরিককে বিয়ে করেছি ইত্যাদি বলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সত্যটা হলো ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই জানেন চীনা একজন নাগরিক আমার ব্যবসায়িক পার্টনার মাত্র। আমি যদি তাকে বিয়েই করতাম তাহলে অনিকের মতো ছেলেকে বিয়ে করতে যেতাম না।
বরং বিয়ে করা ওরই নেশা। একটি নয়, আমার বাইরেও সে দুটি বিয়ে করেছে।’ শাবনূর বলেন, ‘২০০৮ সালে ‘বধূ তুমি কার’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে অনিকের সাথে আমার পরিচয়। তখনই সে বিবাহিত। নানা প্রলোভন ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে আমাকে বিয়ে করার আগেই সে মৌরি ইসলাম মৌ নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিল।
বিষয়টি আমি জেনে গেলে বিপদে পড়ার আশঙ্কায় মৌকে সে ভয়ভীতি দেখিয়ে তালাক দেয়। আমাকে বিয়ের পরও সে আরেকটি বিয়ে করেছে। আয়েশা আক্তার নামে এক মহিলা তার স্ত্রী। তিনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত। এটা আমার মুখের কথা নয়। এ তথ্যের প্রমাণ দেবে অনিকেরই পাসপোর্ট। সেখানে তার স্ত্রী হিসেবে আয়েশার নাম রয়েছে। আমার নয়। কথা হলো কে এই আয়েশা? বিয়ে না করলে তার নাম অনিকের স্ত্রী হিসেবে পাসপোর্টে থাকে কী করে?
এক স্ত্রী বর্তমান থাকতে সে আরেকটি বিয়ে করে কীভাবে? এটি কী বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়? তারপরও সন্তানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলিনি অনিককে। একজন নারী হিসেবে সব চেষ্টাই করেছি সংসার টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু অনিক সেটা হতে দেয়নি। সে আমার কাছে বাড়ি-গাড়ি চাইতো।
আমি তাকে বলেছি অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসতে। সেটাও সে করেনি। ছেলে জন্মের পর তাকেও সে দেখতে যায়নি। উল্টো মিডিয়াতে বলছে আমি নাকি ছেলেকে দেখতে দিই না।’ অনিক প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিলো দাবি করে শাবনূর বলেন, ‘অনিক লোভী ও প্রতারক। আমাকে বিয়ে করে আমার সম্পত্তি দখলের ভাবনা ছিলো তার। পরিচয়ের সময় বলতো সে ইঞ্জিনিয়ার।
বাড়ি-গাড়ি আছে তার। বিয়ের পরে জানলাম সে অশিক্ষিত ও বেকার। আমাকে মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিল আমার বিষয়-সম্পত্তির জন্য। আমার কাছ থেকে কিছু পায়নি। এখন শুনছি নতুন স্ত্রীর কাছ থেকে গাড়ি হাতিয়ে নিয়েছে। ওর অনেক মন্দ কাজের প্রমাণ আমার কাছে আছে। ও বড় গলায় বলেছে তার বিয়ের প্রমাণ দিলে সে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে ও যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবে। আমি পাসপোর্টের কপিটি প্রকাশ করলাম। যেখানে তার স্ত্রী হিসেবে আয়েশার নাম রয়েছে। এখন তার কথামতো তাকে আমার কাছে মাফ চাইতে হবে। না হলে আমি আইনি পথেই হাঁটবো। যেহেতু সে এটা নিয়ে মিথ্যাচার করে আমার ও আমার সন্তানের ভবিষ্যতে কালিমা লেপে দেয়ার চেষ্টা করেছে সেহেতু আমিও চুপ থাকবো না।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে পরিচয়ের পর ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিক মাহমুদ হৃদয়ের সঙ্গে আংটি বদল করেন শাবনূর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন। সেই সংসারে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইজান নিহান নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গত ২৬ জানুয়ারি অনিককে তালাক দেন শাবনূর। নায়িকার সই করা নোটিশটি অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদের মাধ্যমে গত ৪ ফেব্রুয়ারি অনিকের উত্তরা এবং গাজীপুরের বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। শাবনূরের পাঠানো তালাক নোটিশের অনুলিপি তার স্বামী অনিকের এলাকার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং কাজি অফিস বরাবরও পাঠানো হয়েছে। এ তালাক নোটিশে সাক্ষী রয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম ও শামীম আহম্মদ নামে দুজন। আইনগতভাবে ৯০ দিন পর তাদের এ তালাক কার্যকর হবে।